You dont have javascript enabled! Please enable it!

চাঁদমারী বধ্যভূমি

কুড়িগ্রামের আদি শহরে খেলাধুলার জন্য বিশিষ্ট সমাজসেবক সতীশ বকসী নিজের জমিতে একটি খেলার মাঠ নির্মাণ করেন। তাঁরই নামেই মাঠটি সতীশ পার্ক নামে পরিচিতি পায়। পাকিস্তান জন্মের পর ধরলা নদীর পশ্চিম পাড়ের অধুনালুপ্ত সতীশ পার্কের মাঠটিকে ঘিরেই একটি চাঁদমারী নির্মিত হয়েছিল। এই চাঁদমারীতে আনসার-ইপিআর-পুলিশ বাহিনী নিশানা/গুলি প্রাকটিস করতো। ধরলার ভাঙনে সতীশ পার্ক নদী গর্ভে বিলিন হলে চাঁদমারীটি পরিত্যক্ত হয়। খেলাধুলার সতীশ পার্ক বিলিন হলেও বহুদিন তালগাছের মতো দাঁড়িয়েই ছিল ইটের প্রাচীরের চাঁদমারীটি। চাঁদমারীটি শহর থেকে সামান্য দূরে ছিল, আবার ফাঁকা ও নদী তীরবর্তী হওয়ায় লাশ ডাম্পিং এর জন্য উপযুক্ত স্থান ছিল। এই চাঁদমারীর পাশেই শত শত বাঙালিকে হত্যার পর পুঁতে ফেলত পাকিস্তান সৈন্যরা। চাঁদমারীর কাছ দিয়েই ধরলা পারাপারের ঘাট। এই ঘাট দিয়েই ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ী যাওয়ার পথ। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের কারণে পাকিস্তান আর্মি ২৬ মে পর্যন্ত ধরলা নদী অতিক্রম করে নাগেশ্বরী ভূরুঙ্গামারীর দখল নিতে পারেনি। ফলে ধরলা নদীর ঘাট ও আশপাশ এলাকা তাদের কড়া নজরদারিতে ছিল। এই নদীপথেই আবার মাঝে মধ্যে রাতের আঁধারে অনেকেই নৌকাযোগে ফুলবাড়ী হয়ে ভারতে যেত। সে কারণে বাংকার খুঁড়ে পাকিস্তান আর্মির অবস্থান ও নিয়মিত টহলও ছিল এখানে। বিশেষতঃ চাঁদমারীর নিকটস্থ রিভারভিউ হাইস্কুলে অবস্থিত পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণে এ এলাকাটি ছিল। মাঝে মধ্যে রাজাকার ও দালালরা খবর দিলে পাকিস্তান আর্মি যাত্রী বোঝাই নৌকা আটকিয়ে যাত্রীদের হত্যা করে চানমারীর খাল ও নালায় ফেলে দিত। এখানে শহরের রিভারভিউ, গণপূর্ত, সঞ্জিব করঞ্জাই এর গোডাউন, থানা পাড়া, সবুজ পাড়ার অতুল চৌধুরীর বাড়ি প্রভৃতি এলাকার পাকিস্তানি ও রাজাকার ক্যাম্পগুলোতে যেসকল বাঙালি নর-নারীকে ধরে এনে নির্যাতনের পর হত্যা করা হতো তাদের এই চানমারীর খাল ও নালায় ফেলে দিয়ে যেত পাকিস্তানি বাহিনী। তাদের ফেলে দেয়া কোনো কোনো লাশ চানমারীর পাশের ক্যানেল দিয়ে মূল ধরলায় ভেসে যেত। আবার কাউকে কাউকে এখানে এনেই ফায়ার করে উন্মুক্ত ফেলে রাখতো। যে সকল লাশ কুকুর, শৃগাল ও শকুনের আহার হয়েছিল। ৬ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম হানাদার মুক্ত হলে এখানে পাওয়া বেশ কিছু নরকঙ্কাল কবর দেয়া হয়। পরে এই বধ্যভূমিতেই একটি গোরস্তান গড়ে ওঠে যা চাঁদমারীর গোরস্তান নামে পরিচিত।

সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন- এসএম আব্রাহাম

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!