You dont have javascript enabled! Please enable it!

ভূরুঙ্গামারী

এলাকায় নির্যাতন অগ্নিসংযোগ ও ‍লুণ্ঠনের বিবরণ—
পাকসেনা ও তাদের সহযোগী শান্তি কমিটির দালাল, রাজাকার, আলবদর, আলশামস এবং ইস্ট পাকিস্তান ক্যাভালরি আর্মড ফোর্স (ইপিক্যাফ) ভূরুঙ্গামারী-কুড়িগ্রাম সড়ক, ভূরুঙ্গামারী-সোনাহাট সড়ক ও ভূরুঙ্গামারী-বাঘভাণ্ডার সড়কের দুই পার্শ্বের অসংখ্য বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ এবং লুটপাট করে। আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হক চৌধুরী, কাজিম উদ্দিন চেয়ারম্যান ও তমেজ উদ্দিন মন্ডল মেম্বারসহ কয়েকশত নেতাকর্মীর ও সাধারণ মানুষের বাড়িঘর, দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করে। আওয়ামী লীগ অফিসসহ ভূরুঙ্গামারী বাজারের সাহাপট্টি, দেবোত্তর মন্দির এবং ভূরুঙ্গামারী কলেজের অংশবিশেষ ধ্বংস ও লুটপাট করে।
এলাকায় পাকিস্তানি টর্চার সেল/বন্দিশিবির : ভূরুঙ্গামারী এলাকায় পাকিস্তানি টর্চার সেল/বন্দিশিবির ছিল যথাক্রমে—ভূরুঙ্গামারী সিও অফিস, ভূরুঙ্গামারী থানা, ভূরুঙ্গামারী কলেজ, ভূরুঙ্গামারী হাইস্কুল ও জয়মনিরহাট ডাকবাংলোসহ আরো অনেক পাকিস্তানি তাঁবু ক্যাম্প ছিল। এখানে প্রধান অত্যাচারী পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন আতাউল্ল্যাহ খাঁনের নেতৃত্বে খোকা দালাল, কাদের মৌলভী ও মোবরক আলী সহ অনেক দালাল-রাজাকার মুক্তিযোদ্ধাসহ নারী ও সাধারণ মানুষকে ধরে এনে তথ্য আদায়ে নির্যাতন করে হত্যা করত। ধরে আনা মেয়েদের ধর্ষণ কেন্দ্রে চালান দিত।
বীরাঙ্গনা সাজিরণ বেগম, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনসার কমান্ডার শহিদ তমিজ উদ্দিনের স্ত্রী। পাক সেনাদের ধর্ষণে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারান। মওলানা লতিফ মোল্লা নিজ স্ত্রীকে পাক সেনাদের হাতে তুলে দেয়, মেজরসহ পাকিস্তানি সৈন্যরা তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে। পরে ধর্ষিতা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ১৪ নভেম্বর ভূরুঙ্গামারী মুক্ত করার সময় সিও অফিসে পাকিস্তানি বিধ্বস্ত বাঙ্কারে ক্যাপ্টেন আতাউল্ল্যাহ খাঁন এর লাশ বাঙালি অসহায় তরুণীর উলঙ্গ লাশকে জড়িয়ে ধরা অবস্থায় পাওয়া যায়। তরুণীটির লাশ শনাক্ত করা যায়নি। মুক্তিযোদ্ধারা সিওর বাসভবন থেকে ৪ জন নারীকে উলঙ্গ অবস্থায়, কয়েকজনকে সিও অফিসের দোতালা থেকে উদ্ধার করা হয়। অনেক মেয়েদের ব্লাউজ, ব্রেশিয়ার, পেটিকোটসহ অন্যান্য বস্ত্রাদি সেখানে পাওয়া যায়। অভ্যন্তরীণ থাকা অবস্থায় বন্দিখানার দেয়ালের গায়ে নিজের রক্ত দিয়ে কোনো বীরাঙ্গনা লিখেছিল ‘জ….বা’ তাঁর নাম জবা অথবা তিনি জয় বাংলা। একইদিনে মুক্তিবাহিনী ভূরুঙ্গামারী হাইস্কুল ক্যাম্প থেকে আরও ১৬ জন ও কলেজ থেকে ২০ জন ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে। এই সব বীরাঙ্গনাকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল। পাক বাহিনীর নৃশংসতা : দেওয়ানের খামারের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে। তাকে চলন্ত জীপ গাড়ির পেছনে বেঁধে দৌড়ে যেতে বাধ্য করে, এক পর্যায়ে তিনি মাটিতে ছেঁচড়ে যান। শেষে তার হাত-পা টুকরো টুকরো করে গরম পানিতে চুবিয়ে দেয়। মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হককে পাকসেনারা জীপের পেছনে বেঁধে টেনে হেঁচড়ে কুড়িগ্রাম নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। একজন ভারতীয় সৈনিককে আটক করে পাকবাহিনী তার পুরুষাঙ্গ কেটে ফেলে।
নারীদের অংশগ্রহণ : এ এলাকার নারীরা, গৃহে মুক্তিযোদ্ধাদের এবং বাড়িতে আশ্রিত শরণার্থীদেরকে খাওয়ানোসহ তাদের চিকিৎসা ও আবাসনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ছবি বেগম, পিতা মৃত আব্দুল আজিজ যিনি ইয়ুথ ক্যাম্পে নার্সিং করতেন।

সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন- এসএম আব্রাহাম

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!