বালাবাড়ি রেলস্টেশন গণকবর
বালাবাড়ি রেলস্টেশন ও বালাবাড়ি রেলওয়ে ব্রিজ এ দু’টি স্থাপনার অবস্থান ছিল বেশ কাছাকাছি। দুই জায়গাতেই পাকিস্তানি সৈন্যদের ক্যাম্প ছিল। পাকিস্তানি সৈন্যদের সহযোগিতার জন্য স্থানীয় রাজাকার ও ইপিক্যাফ বাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্যও সেখানে থাকত। রেলপথ ও সড়কপথে চিলমারী নদীবন্দরে পৌঁছানোর আগের স্টপেজই হলো বালাবাড়ি রেলস্টেশন। রেল যোগাযোগ থাকায় এখানে পাকিস্তানিদের সামরিক রসদের মজুদ থাকত। আশপাশের ক্যাম্পগুলোতে সামরিক রসদের ঘাটতি পড়লে এখান থেকেই রসদ সাপ্লাই করা হতো। সে কারণে পাকিস্তানিদের জন্য বালাবাড়ি রেলস্টেশন ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তানি সৈন্যদের কমান্ডিং অথোরিটির মনোরঞ্জনের জন্য স্থানীয় রাজাকাররা বহু নিরীহ নারীকে ধরে এনে পৌঁছে দিয়েছিল এই ক্যাম্প দু’টোতে। সে সব হতভাগ্য নারীদের অনেককেই ধর্ষণের পর হত্যা করে রেলস্টেশনের পাশেই পুঁতে রাখে। খায়রুল আলম কোম্পানি, চাঁদ কোম্পানি বালাবাড়ি রেলস্টেশনের আশপাশের গ্রামগুলোতে পাকিস্তানিদের অবস্থানে গেরিলা আক্রমণ করে ক্ষয়ক্ষতি করত। সে আক্ষেপে আশপাশের গ্রামগুলো থেকে অনেক যুবককে ধরে এনে নির্যাতনের পর এখানে হত্যা করে তারা। কোনো পথচারীকে মুক্তিযোদ্ধা সন্দেহ হলে তাঁর ভাগ্যেও জুটত মৃত্যু। পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী রেলস্টেশনের নিকটবর্তী হাটিথানার কাজী কেফাজ উদ্দিন পিতা-জসিমুদ্দিন মন্ডল, নেজাবুদ্দিন পিতা-রহিমুদ্দিন, বেলাল ওরফে বুদা পিতা-আছর উদ্দিন, ছাত্তার মুন্সী পিতা-বাছর উদ্দিন, রহিমুদ্দিন পিতা-হাজী বজদি ও তাঁর স্ত্রী যাকে ঘরের ভেতরে পুড়িয়ে মারে, ইসমাইল পিতা-পনির উদ্দিন, আব্বাস ওরফে বাছারী খলিফা পিতা-ঢুলি মামুদ, দুখী সেখ পিতা-সোনাউল্ল্যাহ, শুকারু সেখ পিতা-কদরা মামুদ, হেফাজ উদ্দিন পিতা-আফান উদ্দিন, কলিমুদ্দিন মন্ডল পিতা-দতিব উদ্দিন, শামসুন্নাহার পিতা-হাজী কেফাজ উদ্দিন, বছিরন বেওয়া স্বামী-মোন্নাফ ও জনৈক কছমের স্ত্রীকে পাকিস্তানিরা হত্যা করে। কাজলডাঙ্গা ফকিরের হাটের ফয়েজার পিতা-নেজাতুল্যাহ, রব্বানী পিতা-নেফুজা দেওয়ানী ও স্থানীয় কাচুয়া ও কুদ্দুছ রাজাকার আজিত ফরিয়ার ছেলে ডেকে নিয়ে গিয়ে হত্যা করে। পূর্ব মুদাফৎ থানার হোসেন আলী পিতা-আরিফ উল্লা, জহরাল্লি সরকারের গ্রামের (টোন মুদাফৎ থানা) অজবাল্লিকে গুলি করে এবং গাদলুর স্ত্রী পাকিস্তানিদের ডাকে সাড়া না দিয়ে ঘরে ঢুকে খিরকি দিলে তাঁকে পাকিস্তানি নরপিশাচরা ঘরের মধ্যেই আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারে। এছাড়াও কুড়িগ্রাম-রংপুর থেকে ট্রেনে করে নিরীহ বাঙালিদের ধরে এনে হত্যার পর বালবাড়ী রেলস্টেশন গণকবরে পুঁতে রেখেছিল।
ক্র. | শহিদের নাম | পিতা/স্বামী | ঠিকানা |
১ | শহিদ বছিরন বেওয়া | মোন্নাফ | হাটিথানা, চিলমারী |
২ | কছমের স্ত্রী (শহিদ) | কছম আলী | হাটিথানা, চিলমারী |
৩ | গাদলুর স্ত্রী (শহিদ) আগুনে পুড়ে হত্যা করে | গাদলু | হাটিথানা, চিলমারী |
(পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়)
সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন- এসএম আব্রাহাম