You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.10.17 | নান্দিনা গণহত্যা, গাইবান্ধা - সংগ্রামের নোটবুক

নান্দিনা গণহত্যা

১৭ অক্টোবর গাইবান্ধার নান্দিনায় কোম্পানি কমান্ডার সাইফুল ইসলাম সাজার নেতৃত্বে পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ হয়। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সাজা কোম্পানি সাদুল্লাপুর থানা অপারেশন করে সফল হন। তারপর থেকে সেখানে পাকবাহিনী তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। পাকবাহিনী পলাশবাড়ী-গাইবান্ধা সড়কে হরহামেশাই টহল দিত। রংপুর-দিনাজপুর এবং ঢাকার সাথে যোগাযোগের জন্য রেলপথের পরই এ সড়ক পথটিই প্রধান ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য সাকওয়া ব্রিজ ধ্বংসের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। সে পরিকল্পনায় সাজা কোম্পানি তাদের ঘাঁটি মোল্লার চর থেকে নান্দিনা এবং দৌলতপুর গ্রামে সাময়িক স্থানান্তর করেন। দৌলতপুর গ্রামটিতে জামায়াত-ই-ইসলামের এর শক্ত ভীত ছিল। সঙ্গতকারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর গোপন থাকেনি, শত্রুপক্ষ সহজেই তাদের মাধ্যমে সে খবর পেয়ে যায়। ১৭ অক্টোবর মুক্তিযোদ্ধারা চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়ালের নেতৃত্বে নান্দিনা, রফিকুল ইসলাম হিরুর নেতৃত্বে নান্দিনা-দৌলতপুর, জিন্নুর নেতৃত্বে দৌলতপুর এবং টাবু দূর্গাপুর এলাকা ছিল। মুক্তিযোদ্ধারা দৌলতপুরে প্রবেশের পর বুঝতে পারেন সেখানে এভাবে চলে আসা তাঁদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। বিষয়টি বুঝতে পারলেও অবস্থান পরিবর্তনের তাৎক্ষণিক সুযোগ হয়নি। এর আগেই ওই দিন ভোর বেলা ১৮ অক্টোবর পাকবাহিনীর দু’টি দল তুলশীঘাট খোর্দকামরপুর রাস্তা ধরে নান্দিনার দিকে অগ্রসর হতেই মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আউয়াল এলএমজি দিয়ে পাকবাহিনীকে আক্রমণ করেন। ফলে পাকবাহিনী ওই রাস্তা পরিত্যাগ করে রাস্তার কভার নিয়ে নান্দিনা মুখে অগ্রসর হতে থাকে। তবে মুক্তিবাহিনীর অবশিষ্ট প্লাটুনের সম্মিলিত ফায়ারের মুখে তারা সরাসরি পাল্টা আক্রমণ করে নাই। পরে মুক্তিযোদ্ধারা বেস ক্যাম্পের লক্ষ্যে পিছু হটতে থাকলে রূপতলা বল্লমঝাড় এবং ইবরাকপুরের পাকবাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। চারঘণ্টা স্থায়ী যুদ্ধে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। অন্য মুক্তিযোদ্ধারা ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পিছু হটতে বাধ্য হন। এ যুদ্ধে বিপর্যয়ের কারণ ছিল স্থানীয় জামায়াত ও স্বাধীনতা বিরোধীদের বিশ্বাসঘাতকতা। আর একটি সমস্যা হয়েছিল অপারেশনে অংশ নেয়া অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা স্থানীয় ছিলেন না। যে কারণে ভোগৌলিক অবস্থান সম্পর্কিত জ্ঞান তাঁদের ছিল না। তাঁরা দিনাজপুর, বগুড়া, নেত্রকোনা, ঝালকাঠিসহ দেশের অন্যত্র থেকে এই যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে সৈয়দ আনোয়ার হোসেন ও নবীর হোসেনকে গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কে বিসিক শিল্পনগরীর নিকটে সমাহিত করা হয়। ঝালকাঠির শহিদ ওমর ফারুক ও নেত্রকোনার শহিদ ইসলাম উদ্দিনকে বল্লমঝাড় এর চকগয়েশপুরে সমাহিত করা হয়। অন্য শহিদদের নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয়। নান্দিনায় পাকিস্তানিদের দোসর ছিল কুখ্যাত স্বাধীনতা বিরোধী ডাঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল, অবসর প্রাপ্ত পুলিশ ওয়াহেদ আলী, দছিজল হক, মমতাজ আলী আকন্দ, আজগার আলী ও রাজাকার রঞ্জু। তাদের বিরুদ্ধে মোঃ নুরুল ইসলাম আকন্দ জনৈক ব্যক্তি ২০১৬ সালে দালালী, মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন যার নম্বর হলো—আই সিটিবিটি-৬/১৬।

নান্দিনার যুদ্ধে বহু হতাহত হয় যার মধ্যে একজন হিন্দু ছিলেন যাঁর নাম—

ক্র. শহিদের নাম পিতার নাম ঠিকানা
শহিদ মহেশ চন্দ্র মন্ডল অজ্ঞাত কাশদহ/সাহাপাড়া, গাইবান্ধা

সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন– এসএম আব্রাহাম