চড়ারহাট গণহত্যা
পাকিস্তানি সৈন্য ও তাদের দোসররা মিলিতভাবে দিনাজপুর জেলার অন্যতম গণহত্যা চড়ারহাটে সংঘটিত করে। ঘোড়াঘাট পাকিস্তানি ক্যাম্প থেকে পাকিস্তানিদের একটি বড় গ্রুপ ১৯৭১ এর ১০ অক্টোবর রাতের বেলায় আকস্মিক চড়ারহাট গ্রামটি ঘিরে ফেলে। তাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে আসে স্থানীয় পিস কমিটির সদস্য ও রাজাকাররা। স্থানীয় রাজাকারেরা গ্রামের মুরুব্বিদেরকে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পাশে ঘোড়াঘাট ব্রিজের কাছে ডালি কোদাল নিয়ে আসতে বলে। প্রাণে রক্ষা পাওয়ার লক্ষ্যে আশপাশের নিরীহ গ্রামবাসীরা তাদেরকে অনুসরণ করে সেখানে যায়। তাঁদের ধারণা ছিল পাকিস্তানি সৈন্যরা তাদেরকে দিয়ে রাস্তা ঘাটের সংস্কারের জন্য বা গাড়ি চলাচলের জন্য মাটি কেটে নেবে। কিন্তু ব্রিজের কাছে যাওয়ার পর হতভাগ্য বাঙালিদের ভুল ভাঙে। তাঁরা সেখানে যাওয়ার পরক্ষণিই লাইনে দাঁড় করিয়ে রাজাকারেরা বলতে থাকে জোরে জোরে কলেমা পড়ুন। তাদের সে কথায় নিরীহ বাঙালিরা সকলেই কলেমা উচ্চস্বরে পড়তে থাকেন। এর মধ্যেই পাকিস্তানিদের মেশিনগান গর্জে ওঠে। ওইদিন তাদের গুলিতে শহিদ হন শতাধিক বাঙালি। ঐ গ্রামে বাইরে থেকে এসে আশ্রয় নেয়া মানুষজনের নাম ঠিকানা জানা না গেলেও আশপাশের গ্রামের ১০৮ জন শহিদ ও ১১ জন গুরুতর আহত লোকজনের নাম পাওয়া গেছে। শহিদদের মধ্যে দুজন নারী ছিলেন। ওইদিনের ঘটনায় শহিদদের কাউকে কাউকে নিজেদের বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হলেও অধিকাংশই শহিদের সমাধি হয়েছে গণকবরে। তাঁদের কাফনের মতন কাপড় ছিল না। হতভাগ্য শহিদদের মধ্যে দুজন নারী ছিলেন তাঁরা হলেন—
ক্র. | নির্যাতিত নারীদের নাম | স্বামীর নাম | ঠিকানা |
১ | শহিদ ছলিমন বিবি | আব্দুল গফুর | প্রাণকৃষ্ণপুর (চড়া), দিনাজপুর |
২ | শহিদ সাহেলা বিবি | বিশপতি ফকির | প্রাণকৃষ্ণপুর (চড়া), দিনাজপুর |
(পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়)
সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন- এসএম আব্রাহাম