ঘাঘট গণহত্যা
রংপুরে ছিল ইপিআরের ১০ নং ইউনিয়নের হেড কোয়ার্টার। এর উপ-প্রধান ছিলেন প্রখ্যাত সমরবিদ ক্যাপ্টেন নওয়াজেস উদ্দিন। যার নেতৃত্বে বৃহত্তর রংপুরের সীমান্তবর্তী বিওপি গুলির ইপিআর জোয়ানরা অবাঙালি ইপিআরদের হত্যা করে অস্ত্র দখলে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ইপিআর সৈন্যরা তিস্তা রেলসেতু ডিফেন্সে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি মেজর এজাজ মোস্তফা সৈয়দসহ ১৫ জন পাকিস্তানিকে খতম করে তিস্তা ব্রিজের দখল অক্ষুণ্ণ রাখেন। লালমনিরহাট এয়ারফিল্ডে ১৯ জন অবাঙালি ইপিআর আহত হয় মুক্তিযোদ্ধা পুলিশ ও ইপিআরদের হাতে। কুড়িগ্রাম এর সীমান্ত এলাকা থেকে লালমনিরহাটমুখী অবাঙালি ইপিআরদের বাঙালিরা প্রতিরোধ করে হত্যা করলে পাকিস্তান আর্মি বাঙালি ইপিআরদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়। সেই আক্ষেপে পাকিস্তান সেনারা রংপুর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে কিছু দোদুল্যমান বাঙালি ফৌজ যারা নিষ্ক্রিয় ছিলেন তাঁদেরকে বেতন দেওয়ার নামে ধরে আনে। ধৃতদের মধ্যে বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর বাঙালি সৈন্য এবং ই.পি.আর জওয়ান ছিল। এরকম ১২৪ জন বাঙালি ফৌজকে কৌশলে তাঁদের বেতন প্রদানের নাম করে এক জায়গায় সমবেত করে। ১২৪ জন জোয়ান সমবেত হলে পাকিস্তানিরা তাদের কৌশলে আটক করেই বেতন দেওয়ার নাম করে ঘাঘট নদীর তীরে নিয়ে যায়। তারা আটককৃত বাঙালি ফৌজদের সেখানে মেশিনগানের গুলিতে নির্মমভাবে হত্যা করে। এই গণহত্যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরাও ছিলেন। স্থানীয়রা সৎকারের ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়। খবর পেয়ে পরক্ষণেই আবার ক্যান্টনমেন্ট থেকে আর্মির গাড়ি এসে স্থানীয়দের হুমকি দিয়ে যায়। ফলে পরে এ লাশগুলোর অধিকাংশই কুকুর শকুনে খেয়েছিল। নির্মমতার শিকার এ সকল বাঙালির পরিচয় উদ্ধার সম্ভব হয় নাই।
সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন- এসএম আব্রাহাম