তকিপল বাজার গণহত্যা
তকিপল বাজার কাউনিয়া থানার অন্তর্গত বালাপাড়া ইউনিয়নে অবস্থিত। এলাকাটি মূলত কাউনিয়া-মীরবাগের মাঝামাঝি। তকিপল বাজারের পাশ দিয়েই রংপুর-কাউনিয়া রেলপথ। প্রত্যন্ত গ্রাম হলেও সেখানে স্বাধীনতাকামীদের কর্মতৎপরতা ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী ১০ জুন ’৭১ তকিপল বাজার এলাকায় অপারেশন করে। তারা স্থানীয় জনৈক ফুল মিয়া এবং কাউনিয়া থানার কৃষি কর্মকর্তা মমতাজুর রহমানকে হত্যা করে। এরপর পাকিস্তানি খান সেনারা যাতে সহজে রেলপথ ব্যবহার করে চলাচল করতে না পারে সেজন্য স্থানীয় জয়েন উদ্দিনের নেতৃত্বে তকিপল বাজারের পাশের রেললাইন উপড়ে ফেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় স্থানীয় জনসাধারণ। দালালদের মাধ্যমে পাকিস্তানি বাহিনী খবর পেয়ে সেখানে আসে। পাশে আরাজী হরিশ্বর গ্রামে মিলিটারি প্রবেশ করে। তারা গ্রামের একজন মহিলার সম্ভ্রম নষ্টের চেষ্টাকালে গ্রামবাসী তাদের ধরে ফেলে প্রাণহরণ করে দু’জনের লাশ গায়েব করে দেয়। খবর পেয়ে খান সেনাদের একটি টিম লাশ উদ্ধারে তকিপল বাজার এলাকায় আসে। বহু খোঁজাখুঁজি করেও লাশের সন্ধান তারা পায়নি। তবে তারা প্রতিশোধের নেশায় মেতে ওঠে। তকিপলসহ আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাস কায়েম করে। তারা তিস্তা ব্রিজ থেকে শুরু করে নজিরদহ এলাকায় নদীর দুপাড়ের সকল বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। তারা সহস্রাধিক ঘরবাড়ি শুধ জ্বালিয়ে দেয়নি তারা তকিপলসহ পার্শ্ববর্তী খোর্দভূতছড়া, বল্লভবিষ্ণু ও প্রাণনাথের হাজার মানুষকে হত্যা করে। বর্বর খান সেনারা শুধু ভূতছড়ার জুড়াবান্ধা বিলেই ১০০০ নারী পুরুষ ও শিশুকে গণহত্যা করে। স্বাধীনতার পর জুড়াবান্ধা বিলে অসংখ্য নর কঙ্কাল যত্রতত্র পড়েছিল। বর্ষায় ভেসে গিয়েছিল শত শত লাশ। বহু শবদেহ কুকুর শৃগালের আহারে পরিণত হয়েছিল। স্বাধীনতার পর শহিদদের স্মরণে এখানে শহিদবাগ নামে একটি স্বতন্ত্র ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে শহিদদের তালিকা এ যাবতকাল প্রণীত হয়নি। অধিকাংশই বহিরাগত হওয়ায় তাঁদের নাম ঠিকানা পাওয়াও অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এ যাবত যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে সংখ্যালঘু ও নারীদের নাম এখানে সংযুক্ত করা হয়েছে—
ক্র. | শহিদের নাম | পিতার নাম | ঠিকানা |
১ | শহিদ প্রাণনাথ | অজ্ঞাত | খোর্দ ভূতছড়া, রংপুর |
২ | শহিদ বল্লভ বিষ্ণু | অজ্ঞাত | খোর্দ ভূতছড়া, রংপুর |
৩ | শহিদ খোকা বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৪ | শহিদ হরেন চন্দ্র বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৫ | শহিদ হেমন্ত কুমার বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৬ | শহিদ হরিদাস বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৭ | শহিদ খোকা রাম বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৮ | শহিদ রাজেন্দ্রনাথ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৯ | শহিদ খগেশ্বর বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
১০ | শহিদ কালারাম বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
১১ | শহিদ খোকা বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
১২ | শহিদ কংসরাম বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
১৩ | শহিদ বিনোদ ঠাকুর | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
১৪ | শহিদ দয়াল চন্দ্র | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
১৫ | শহিদ ভূবেন চন্দ্র বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
১৬ | শহিদ হরেন চন্দ্র | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
১৭ | দীননাথ মহন্ত | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
১৮ | শহিদ নেছকেটু বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
১৯ | শহিদ কেন্দরাম বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
২০ | শহিদ জরিকান্ত সরকার | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
২১ | শহিদ রাজেন্দ্র বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
২২ | শহিদ সুন্দর মাই | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
২৩ | শহিদ ফুরকুনী | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
২৪ | শহিদ সুনিন্দ্রা | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
২৫ | শহিদ জরিনা খাতুন | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
২৬ | শহিদ বাসন্তি | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
২৭ | শহিদ আবো পাগলী | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
২৮ | শহিদ খতিমন নেছা | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
২৯ | শহিদ আছিরন বেওয়া | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৩০ | শহিদ মনোয়ারা বেগম | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৩১ | শহিদ কিরন বালা | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৩২ | শহিদ কালটাময়ী বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৩৩ | শহিদ অধেময়ী বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৩৪ | শহিদ দূর্গাময়ী বর্মণ | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৩৫ | শহিদ সুন্দরময়ী | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৩৬ | শহিদ জয়ফুল খাতুন | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৩৭ | শহিদ চন্দ্রময়ী বর্মণী | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
৩৮ | শহিদ কাল্টি মাই | অজ্ঞাত | কাউনিয়া, রংপুর |
(পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়)
সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন– এসএম আব্রাহাম