রংপুর জেলার নারী নির্যাতনের চিত্র
১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পাকিস্তানিরা রুদ্ররূপ ধারণ করেন। তাদের কাছে মানবতা বলে কিছু ছিল না। মাটিই ছিল প্রধান। সে কারণে তারা পোড়ামাটির নীতি গ্রহণ করে। তাদের আক্রোশ আর আক্রমণের টার্গেট যেমন ছিল তরুণ যুবক তেমনি লালসা ও কামের লক্ষ্যবস্তু ছিল বাংলার ঘরে থাকা নিরীহ নারী ও শিশুরা। একাত্তরে পাকিস্তানিদের নির্যাতনের মাত্রা ছিল অবর্ণনীয়। একাত্তরে সমগ্র মুক্তিযুদ্ধকালে রংপুর জেলায় ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১০ সহস্রাধিক নারী পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের দোসরদের নির্যাতনের শিকার হন।
হামিদুর রহমান কমিশনের নিকট প্রদত্ত সাক্ষে লে. কর্নেল আজিজ আহম্মদ খান জানান, রংপুর সেনানিবাসের দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মালিক লিখিতভাবে হিন্দুদের হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। লে. কর্নেল ফজল করিম কমান্ডিং অফিসার হিসেবে গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন। এরূপ নির্দেশনার কারণে একাত্তরে সংখ্যালঘুদের ব্যাপক গণহত্যা করা হয় যেমন, তেমনি নির্যাতনের শিকার হন অসংখ্য মা ও বোন।
মুক্তিযোদ্ধারা রংপুর শহরে প্রবেশ করে পাকিস্তানিদের বিভিন্ন ক্যাম্প ও অবস্থানের ক্যাম্পগুলোতে অভিযান চালায়। তারা অভিযান চালিয়ে রংপুর জিলা স্কুলে অবস্থিত পাকিস্তানি ক্যাম্প এর ৫০ নম্বর কক্ষ থেকেই ২৫ জন নির্যাতিত নারীকে উদ্ধার করা হয়। এ সকল বীরাঙ্গনা নির্যাতনের কারণে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। পাকিস্তানিরা রংপুরের মাদ্রাসা শিক্ষক আব্দুল লতিফকে হত্যা করে তার স্ত্রী আমিনা খাতুনকে ধরে নিয়ে যায়। আমিনা ছিলেন গর্ভবতী। তিনি ধরণে বাঁধা দিয়ে পাকিস্তানিরা লাথি মেরে তার গর্ভপাত ঘটায়। এরপর তিনি দীর্ঘদিন পাকিস্তানি বাহিনীর অবর্ণনীয় নির্যাতনের শিকার হন। পাকিস্তান আর্মির ক্যাপ্টেন আতাউল্ল্যাহ ও তার সহযোগিরা তাকে টানা পাঁচ মাস ধরে আটক রেখে নিজেদের লালসরা পূরণ করে। পাকিস্তানিদের নির্যাতনের শিকার বেশ কয়েকজন বীরাঙ্গনার নাম এখানে তুলে ধরা হলো।
ক্র. | শহিদের নাম | পিতার নাম/স্বামী | ঠিকানা |
১ | রিজিয়া খাতুন | আবু বকর | নিজ পাড়া, থানা-কাউনিয়া, রংপুর |
২ | শাহাজাদী | মৃত নাজির উদ্দিন | নিজ পাড়া, থানা-কাউনিয়া, রংপুর |
৩ | মোমেছা খাতুন | আহাদ আলী | কলা বাড়ি, মাহিগঞ্জ, রংপুর |
৪ | জরিনা খাতুন | মৃত আব্দুল জব্বার | মীরবাগ, থানা-কাউনিয়া, রংপুর |
৫ | মোমেনা | মোঃ মোস্তফা | হনুমানতলা, কোতয়ালী, রংপুর |
৬ | নাজমা পারভীন | ইসাহাক | স্টেশন রোড, কোতয়ালী, রংপুর |
৭ | ফাতেমা | আইয়ুব আলী | শুকুরের হাট, মিঠাপুকুর, রংপুর |
৮ | মোমেনা খাতুন | আতিয়ার রহমান | শুকুরের হাট, মিঠাপুকুর, রংপুর |
৯ | অহিতহন | বাছেত উদ্দিন | শুকুরের হাট, মিঠাপুকুর, রংপুর |
১০ | লিলি | ইসমাইল মিয়া | বামনডাঙ্গা, সুন্দরগঞ্জ, রংপুর |
১১ | আয়মন | কপিল উদ্দিন | গণেশপুর, থানা-কোতয়ালী, রংপুর |
১২ | মুনেরা বেগম | ময়েন উদ্দিন | মধুপুর, থানা-কাউনিয়া, রংপুর |
১৩ | পুতুল | ট্যাংগারু মিয়া | পীরপুর, আলমনগর, রংপুর |
সূত্র: উত্তর রণাঙ্গনে সংখ্যালঘু গণহত্যা ও নারী নির্যাতন– এসএম আব্রাহাম