You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.08.28 | হাসনাবাদের যুদ্ধ, কুমিল্লা - সংগ্রামের নোটবুক

হাসনাবাদের যুদ্ধ, কুমিল্লা

১৯৭১ সালের ২৮ আগস্ট শনিবার লাকসাম থানার হাসনাবাদ নামক স্থানে মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক পাঠান এবং তার কমরেড কলিম উল্যা ভূইয়ার গ্রুপের সাথে পাকবাহিনীর দিনভর প্রচন্ড লড়াই হয়। এই এলাকায় প্রায়ই পাকবাহিনী এসে জনগণের ওপর জুলুম অত্যাচার করতো। পূর্বের দিন এখানেই মুক্তিবাহিনীর সিপাহী শহীদ আবুল হোসেনের মৃত্যুর বদলা নিতে প্রস্তুত। পাকবাহিনীকে আরও উত্তেজিত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আনার কৌশল হিসেবে রাতে কলিম উল্যা ভূইয়া একজন যুদ্ধ অপরাধীকে চিতশী থেকে ধর নিয়ে আসে। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে মেরে পানচাইল গ্রামে গাছে ঝুলিয়ে রাখে। এ খবর পাকবাহিনীর ক্যাম্পে পৌছলে কয়েক শত পাকবাহিনী নৌকায় ও পায়ে হেটে হাসনাবাদ চলে আসে। সে দিনের লড়াইয়ে ক্যাপ্টেন জহিরুল হক পাঠান (অবঃ) সহ আরও ছিল সহযোদ্ধা কমরেড কলিম উল্যা ভূইয়া, ১নং প্লাটুন কমান্ডার সুবেদার আঃ রব, ২নং প্লাটুন কমান্ডার হাবিলদার আঃ রশিদ, ৩নং প্লাটুন কমান্ডার সুবেদার আঃ হক ও ৪নং প্লাটুন কমান্ডার সুবেদার সিরাজসহ প্রায় ১৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা। হাতিয়ার আছে ৮টি ব্রিটিশ এলএমজি, ৩টি ২ মর্টার ও রাইফেল। হাসনাবাদ বাজার থেকে শুরু করে আইস্যাদারী গ্রামের মসজিদ পর্যন্ত তারা অ্যাম্বুশ করে। সকাল ৮টার সময় পানছাইল গ্রামের লোকজন পাঞ্জাবি আসছে আসছে বলে চিৎকার দিয়ে এদিক সেদিক পালাতে থাকে। এক ঘন্টা পরেই শুরু হল মুক্তিযোদ্ধাদের গ্রাহ্যই করতো না। ওদের ধারণা ছিল মুক্তিবাহিনী জাতি হিসেবে ভীরু। গোলা বারুদের ভয়ে পিছনে পালিয়ে যাবে। তারা আসতো গোয়ার গোবিন্দের মত বুক ফুলিয়ে। আবার মার খেয়ে পালাতো স্বজনদের লাশ ফেলে কাপুরুষের মতো। এক সময় পাকবাহিনীর সাথে যারা দক্ষতার সাথে ফ্রন্ট লড়াই করেছে তারাই আজ মুক্তিযোদ্ধা। সেই যোদ্ধারা জনগণের সাথে অধিক দেশপ্রেমের সংযোগ ঘটিয়ে পাকবাহিনীকে কাবু করছে। এই কথা যখন তারা অনুভব করতো তখন তাদের শিয়ারে দণ্ডায়মান স্বয়ং আজরাইল। মুক্তিযোদ্ধারা এমন কৌশল অবলম্বন করতো পাকবাহিনী একেবারে কাছাকাছি আসলে এবং এমন জায়গায় আক্রমণ করা হতো যখন তাদের ডিফেন্স নেয়ার জায়গা থাকতো না। মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর গুলি ছোড়ার আগেই পরপারে পাড়ি জমাতে হতো। পাকবাহিনী টার্গেট মত এসে যাওয়ায় শুরু হল মুক্তিযোদ্ধাদের কেচকামাইর। আজকের আক্রমণে তারা এমনভাবে পরাস্ত হল যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সারা দিনভর উভয় পক্ষে তুমুল লড়াই হয়। ৭০/৮০ জন পাকসেনা মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে খতম হয়, আহতও হয় অনেক।
[২৪] ডা.মো.দেলোয়ার হোসেন খান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত