হোটেল আগ্রাবাদ অভিযান, চট্টগ্রাম
পাকিস্তান সরকার রেডিও-টিভিতে পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতে স্বাভাবিক বলে ব্যাপক প্রচারের পাশাপাশি জাতিসংঘে পাকিস্তানের বিশেষ দূতও একই প্রসঙ্গে অভিন্ন বক্তব্য প্রদান করেন। উদ্দেশ্যে, পূর্ব পাকিস্তানে তাদের অত্যাচার ও নির্যাতনের এবং বাঙালির স্বাধীনতার চেতনাকে বহির্বিশ্বের কাছে গোপন রাখা। পাক প্রতিনিধির কথার সভ্যতা যাচাই করতে জাতিসংঘের একটি পর্যবেক্ষক দল চট্টগ্রাম আসেন। তাদের আগমন উপলক্ষে হোটেল আগ্রাবাদে পাকবাহিনী অবস্থান নিয়ে একটি নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা তৈরি করে। মুক্তিযোদ্ধারা সিদ্ধান্ত নেন জাতিসংঘ প্রতিনিধি দলের কাছে প্রমাণ করে দিতে হবে যে পূর্ব পাকিস্তানে যুদ্ধাবন্থা বিরাজ করছে। সে সময় ছিল রোজা। সেজন্য অপারেশনের জন্য তারাবীহ-এর নামাজে ব্যস্ত থাকার সময়কেই নির্দিষ্ট করা হয়। নির্দিষ্ট দিনে সন্ধ্যার পর মুক্তিযোদ্ধা সাইফুদ্দিন খালেদ, ফয়েজ, গরিবুল্লাহ ও জাফরউল্লা বোরহান ছদ্মবেশে কেসি -৩ এর নিকটবর্তী শেল্টার মোগলটুলিন্থ গরিবুল্লাহর বাড়ি থেকে রওয়ানা হন। তাদের সাথে ছিল বিস্ফোরক, একটি ৯মিমি এসএমসি এবং দুইটি পিস্তল। সবার সাথে একটি করে গ্রেনেড রাখা হয়। তারা সরাসরি প্রধান রাস্তা ধরে না গিয়ে অলিগলি ধরে হোটেলের পেছন দিকে এসে পৌছায়। পূর্বপরিকল্পনা মতো হোটেলের উত্তর পাশের একটি রুমে অবস্থানরত ড্রাইভারদেরকে জাফর অস্ত্রের মুখে বসিয়ে রাকে। এরপর ফায়েজ সহ দুজন দ্রুত বিস্ফোরক স্থাপন করেন। বিস্ফোরক স্থাপন করতে গিয়ে তিনি বিদ্যুতের শক খেয়ে একে বারে নিচে পড়ে যান। কিন্তু সাহস, দৃঢ়তা ও অবিচলতার তাকে লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। সাইফুদ্দিন একটি রিভালভার নিয়ে বিস্ফোরক স্থাপনকারী ফয়েজের কভারিং এর জন্য ডোবার পাশে পজিশন নেন। সাইফুদ্দিনের কভারিং এর জন্য এর পিছনে একটি স্টেনগান নিয়ে পজিশন নেন গরিবুল্লাহ। বিস্ফোরক স্থাপন শেষে ফিউজে আগুন দিয়ে তাঁরা দ্রুত মোগলটুলি বাজারের দিকে চলে যান। অল্পক্ষণ পরেই বিস্ফোরণ ঘটে এবং পুরো আগ্রাবাদ এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত