হরিসর্দার বাজারের যুদ্ধ-২, কুমিল্লা
মুক্তিবাহিনীএ একটি দল লেঃ ইমানুজ্জামানের নেতৃত্বে ২২ অক্টোবর ভোর চারটায় মর্টার ও ১০৬ আর আর এর সহায়তায় কুমিল্লার হরিসর্দার পাকসেনাদের নতুন ঘাঁটির ওপর আক্রমণ চালায়। প্রায় ১২ ঘন্টা যুদ্ধে মর্টার, মেশিনগান এবং আর আর এর সাহায্যে বেশ ক’টি বাংকার মুক্তিবাহিনীর যোদ্ধারা উড়িয়ে দিতে সমর্থ হয়। তাদের প্রায় ৩৫জন হতাহত হয়। পাকসেনারা কুমিল্লা বিমান বন্দরে অবস্থিত তাদের কামানোর সাহায্যে মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করে। কামানের প্রচন্ড আক্রমণের কারণে সন্ধ্যা ৬টায় মুক্তিবাহিনীর সৈনিকরা গোলার অভাবে পিছু হটে আসতে বাধ্য হয়। আসার সময় পাকসেনাদের অবস্থানের নিকটস্থ রাস্তায় মাইন লাগিয়ে আসে। পরদিন সকালে বিস্ফোরণের ফলে ৭/৮ জন পাকসেনা আহত হয়। এর একদিন পর মুক্তিবাহিনীর আরেকটি দল সকাল ৭টায় চৌদ্দগ্রামের এক মাইল উত্তরে পাকসেনাদের কালির বাজার ঘাঁটির ওপর মর্টার এবং আর আর এর সহায়তায় আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে প্রায় ১২ জন পাকসেনা হতাহত হয়। পাকসেনারা তাদের গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তায় আক্রমণকে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। এর কয়েকদিন পর পাকসেনাদের একটি টহলদারী দল চৌদ্দগ্রাম থেকে সাড়ে চার মাইল দক্ষিণে একটি বাজারের কাছে মুক্তিবাহিনীর অ্যাম্বুশে পড়ে যায়। ফলে ৮জন পাকসেনা নিহত হয়। ১৮ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটায় মুক্তিবাহিনীর একটি শক্তিশালী সল মর্টার এবং আর আর এর সহায়তায় পাকসেনাদের বাতিসা ঘাটির ওপর আক্রমণ চালায়। প্রায় দেড় ঘন্টার এই যুদ্ধে ২০জন পাকসেনা হতাহত হয়। বাতিসা ঘাঁটির ওপর আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে পাকসেনাদের রাকাসার দিঘির অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালানো হয়। এই আক্রমণের ফলে ৬জন পাকসেনা নিহত এবং বেশ কয়েকটা বাংকার ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়। মুক্তিবাহিনীএ একটি ছোট্ট দল আরাইওড়ার কাছে রাস্তায় মাইন পুতে রাখে। পাকসেনারা বাতিসা ও রাজাসার দিঘির আক্রমণের সংবাদ পেয়ে ৪/৫টি গাড়ি ভর্তি সৈন্য নিয়ে সাহায্যের জন্য সে দিকে অগ্রসর হয়। পথে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে একটি ট্রাক ও একটি জীপ সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে ১৮ জন পাকসেনা নিহত এবং ২জন অফিসারসহ ৫জন আহত হয়। এই এলাকার সর্বত্র মুক্তিবাহিনীর আক্রমণ তীব্রতর হওয়ার দরুন পাকসেনারা নাজেহাল হয়ে যায়। ফলে এই এলাকায় পুনরায় প্রধান্য ফিরে পাবার আশায় ২০ অক্টোবর বিকাল ৪টার তাদের একটি শক্তিশালী দল হরিসর্দার ঘাঁটি থেকে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের দিকে অগ্রসর হয়।এই দল্টি কামানের সহায়তায় প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের উপর আক্রমণ চালায়। মুক্তিবাহিনীর গোলাগুলিতে অনেক পাকসেনা হতাহত হয়। পাকসেনারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হঁটে যাতে বাধ্য হয়। এই এলাকা থেকে মুক্তিবাহিনীদের বিতাড়িত করার উদ্দেশ্য সেই সাথে বিফল হয়।
[১৮] আবুল কাশেম হৃদয়
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত