হাকালুকি যুদ্ধ, মৌলভীবাজার
হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন এলাকাজুড়ে খন্ড খন্ড যুদ্ধ হয়েছে পাকসেনাদের সাথে মুক্তিবাহিনীর। মুক্তিবাহিনী হাওরে কান্দির আড়ালে,পেনাগাছের দ্বারা আড়াল করে যুদ্ধ করেছে পাকসেনাদের সাথে। পাকসেনাদের এখানে কোনো সময়ই শাস্তিতে থাকতে পারেনি। ১২ সেপ্টেম্বর। মুক্তিযুদ্ধের উন্মাতাল অবস্থা সর্বত্র। বড়লেখার সুজানগর ও পশ্চিমপ্রান্তে জুড়ে ৪০ জন মুক্তিযোদ্ধার অবস্থান। এলাকাবাসীরা উল্লসিত মুক্তিবাহিনীর সশস্ত্র দামাল ছেলেদের আগমনে। পাকসেনাদের অনুচরদেরও অবস্থান তখন সর্বত্র। অনুচর রাজাকার দালালরা একজনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর আক্রমণ চালায়; কিন্তু অতন্দ্র মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ করলে জাতিদ্রোহীরা পালিয়ে যায়। আহত হন বীর মুক্তিযোদ্ধা বশির আহমদ। মুক্তিযোদ্ধারা হ্রাম ছেড়ে দিয়ে অবস্থান নেয় হাওরের কান্দিতে। কিন্তু সকাল সাড়ে ১১টায় পূর্বদিক থেকে মিলিশিয়া বাহিনীর গ্রুপ এবং উত্তরদিক থেকে রাজাকার বাহিনীর একটি গ্রুপ একযোগে আক্রমণ করলে মুক্তিবাহিনী প্রচন্ড পাল্টা আক্রমণ হানে। কিছু সময়ের মধ্যেই মিলিশিয়া ও রাজাকার বাহিনী রণে ভঙ্গ দেয়। অনিয়মিত বাহিনীর একটি গ্রুপ সেপ্টেম্বর মাস থেকে দেশের অভ্যন্তরে ঢুকে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, সৈন্য চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি ও নির্দিষ্ট লক্ষ্যের ওপর আক্রমণ পরিচালনা করে কুকিতল সাবসেক্টর থেকে। ৪০জনের একটি দল আবুল খয়ের চৌধুরী দলনেতা এবং ছাত্র ইউনিয়ন নেতা তজম্মুল আলী সহকারী হিসেবে অভ্যন্তরে ঢোকেন। নির্দিষ্ট স্থানে পৌছে দেয়ার দায়িত্ব পড়ে লুৎফর রহমান ও আক্তার আহমদের ওপর। কিন্তু পথপ্রদর্শনে তারা ব্যর্থ হলে আবুল খয়ের চৌধুরী আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর মাধ্যমে মানচিত্র,পথপদর্শক ও অন্যান্য প্রয়জনীয় তথ্যদি সংগ্রহ করেন।
১১ সেপ্টেম্বর রাত্ব রওয়ানা হয়ে ভোর হওয়ার আগেই ফেঞ্চুগঞ্জের কিনার দিয়ে রেলপথ অতিক্রমের কথা থাকলেও দূরত্ব সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় সুজাগর পৌছুতে ভোর হয়ে যায়। ফলে মুখোমুখি হতে হয় অপ্রত্যাশিত আক্রমণের। আবুল খয়ের চৌধুরী যোগ্য নেতৃত্বে হালকা অস্ত্রে হাওরেরকান্দিতে অবস্থান নিয়ে প্রায় ১ ঘন্টা পাকসেনা ও রাজাকারদের সাথে যুদ্ধ চলে। ২৫জন পাকসেনা নিহত হয়, আহত হয় ততোধিক। পাকবাহিনী একসময় তাদের দোসরদের নিয়ে হটে যায়। এ যুদ্ধে শহীদ হন বিয়ালীবাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস শহীদ,মদন,আলীম,ঢাকার আনোয়ার হোসেন ও গোপালগঞ্জের একজন বীর সন্তান। মারাত্মকভাবে আহত হন সহকারী কমান্ডার তজম্মুল আলী,বালাগঞ্জের আবদুল খালেক ও আরো চারজন মুক্তিযোদ্ধা। শহীদদের লাশ জানাজা পড়ে হাকালুকি হাওরে ভাসিয়ে দেয়া হয়। আবুল খয়ের চৌধুরী ৪ জিন্সহ খুটাউরা গ্রামে যান; কিন্তু কমান্দারের ফিরতে দেরি দেখে মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান ত্যাগ করে ভারতে চলে যায়। অন্য সকলের নিরাপদে ভারতে পৌছার খবর পেয়ে তিনি ৪জন্সহ সেখানে ফিরে যান।
[৫৯৪] গোপাল দত্ত
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত