You dont have javascript enabled! Please enable it! সুচিপাড়ার যুদ্ধ, চাঁদপুর - সংগ্রামের নোটবুক

সুচিপাড়ার যুদ্ধ, চাঁদপুর

[চাঁদপুরের ফরিদঞ্জের এফ এফ প্লাটুন কমান্ডার মোবারক হোসেন পাটোয়ারী সূচিপাড়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন তার বিবরন-] অক্টোবরের শেষ দিকের ঘটনা। তারিখ মনে নেই। কাকডাকা ভোরে আমরা সবে মাত্র বিছানা হতে গাত্রোখান করেছি। হঠাৎ খবর এলো, সুচিপাড়া চাঁদপুর খেয়াঘাটের কাছে কয়েক হাগার পাকবাহিনী নদী পার হয়ে আমাদের স্থানীয় মুক্ত এলাকায় আঘাত হানতে উদ্যত। আমরা মাত্র দুই সেকশান মুক্তিযোদ্ধা সুচিপাড়া খেয়াঘাট হতে মাত্র ৬০০ গজ দূরে অবস্থান নিলাম। এরিমধ্যে ৭০/৮০ জন পাকসেনা নদী অতিক্রম করে রাস্তায় উঠে আসছিল। আমাদের অবস্থান হতে তাদের দূরত্ব মাত্র ২/৩ শত গজ। আমাদের ডিফেন্সের অবস্থান ছিল সুবিধাজনক স্থানে। তাদের অবস্থানের রাস্তার উভয় দিকে অথৈ পানি। আমার সেকশান কামন্ডার হাবিলদার মোহাম্মদ আলী টি, কে (ইনি ১৯৬৫ সালের পাকভারত যুদ্ধে তমখাই খেতাব প্রাপ্ত ট্যাংক রেজিমেন্টের লোক )আমাদের বামে আছেন হাবিলদার নুরুল ইসলাম (ইপিআর ) ও তার সেকশানের লোকজন। নির্দেশ মোতাবেক শ্ত্রুর ডিফেন্স নেওয়ার আগেই আমরা ফায়ার ওপেন করি। ৩টি এলএমজি আর ১৯টি রাইফেলের লক্ষ্যভেদী ফায়ারের তাদের বেশীরভাগই পরলোকে পাড়ি জমায়। নদীর অপর পাড়ে অবস্থিত পাকবাহিনী একটানা অটোমেটিক ফায়ার আর মর্টার চার্জ করতে থাকে। অথৈ পানিতে মর্টারের গোলা পড়তে থাকে , বিরতিহীনভাবে প্রায় সারা দিন যুদ্ধ চলে। অপর পাড়ে অবস্থিত পাকবাহিনী শত চেষ্টা করে ও নদীর এপাড়ে আসতে পারেনি। এদিকে আমাদের অবস্থানের পূর্ব উত্তর দিকও নদী পরিবেষ্টিত। সেখান দিয়ে ও তারা এলাকায় ঢুকতে চেষ্টা করে। নোয়াপাড়ায় একটি সেকশান রেখে আমাদের সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন জহিরুল হক পাঠান (অবঃ) আমাদের পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণের অবস্থানকে পুনর্বিন্যাস করেন যাতে শত্রু আমাদের মুক্ত অঞ্চলে ঢুকতে না পারে। আমাদের সাবসেক্টর কমান্ডার ক্যাপটেন জহিরুল হক পাঠান (অবঃ) জুনের পূর্বেই প্রায় ২০০ বর্গমাইল এলাকা মুক্ত করেন। বহু চেষ্টা করেও পাকসেনারা এখানে ঢুকতে পারেনি। শত্রুপক্ষে যে পরিমান মর্টার শেল নিক্ষেপ করেছিল তা আমাদের গোলাগুলির সমান হবে। আমরা অন্ধকারেই জনগণের সহায়তায় সামান্য কিছু খেয়ে নেই। পরের দিন সকালে দেখা গেল শ্ত্রু ৩৬টি লাশ রেখে চলে গেছে। এখানে একটি কথা বলা প্রয়োজন, পাকবাহিনী অনেক সময় আমাদের ডিফেন্সকে তেমন আমল দিত না বলে ওরা অঘোরে প্রান দেয়। অধিকন্তু আমরা আগেভাগেই ওদের অবস্থানের ব্যাপারে জানতে পারতাম। এব্যাপারে স্থানীয় জনগণের সহযোগিতাকে কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করতে হয়।
[৫০] ডা, মোঃ দেলোয়ার হোসেন খান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত