সুজানগর যুদ্ধ, পাবনা
পাবনার সুজানগর থানা এলাকায় দুটি খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস সুজানর থানা সদর ছাড়া সমগ্র এলাকাই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে। এই এলাকার বেশির ভাগ অংশ জুড়েই আছে পদ্মা নদীর চর ও পাজনা বিল। যোগাযোগ ব্যবস্থা ওমুক্তিযোদ্ধাদের আধিপত্যের কারণে পাকবাহিনী মুক্তিযুদ্ধের অধিকাংশ সময়ই এই এলাকায় তৎপর ছিল না। মূলত থানা সদর এলাকা পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা নিয়ন্ত্রণ করত। ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে ভারতীয় বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে পাকবাহিনী এবং তাদের দোসররা বিচলিত হয়ে পড়ে। বিশেষ করে রাজাকার ও মিলিশিয়ারা নিজেদের গুটিয়ে নিতে সচেষ্ট হয়। সুজানগরের ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছে। ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা গোপন সূত্রে জানতে পারে যে, সুজানগর থানায় অবস্থিত মিলিশিয়া পুলিশ ওরাজাকাররা যে কোনো সময় রাতের আঁধারে পলায়ন করে পাবনা সদরে চলে যাবে। তথ্যটি জানার পর থেকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের ১৭ জনের একটি দল কমান্ডার মোস্তফা কামাল দুলালের নেতৃত্বে থানা আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ৯ডিসেম্বর থানা আক্রমণের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন এলাকায় থেকে মুক্তিযোদ্ধা মনিখাট-দাস্পাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমবেতন হয়। অতঃপর ৯-১০ ডিসেম্বর রাতে সমবেত মুক্তিযোদ্ধারা খণ্ডখণ্ড দলে এলাকা মাথুরাপুরে গমন করে।
সেখানে থানা আক্রমণের পরিকল্পনা সম্বন্ধে দলনেতা দুলাল মুক্তিযোদ্ধাদের ব্রিফিং প্রদান করেন। তিনি সকলকে জানিয়ে দেন তার ফায়ার সিগন্যাল অনুযায়ী সকাল ৬টায় আক্রমণ রচনা করা হবে।কিন্ত ১০ ডিসেম্বর ৫,৪১ মিনিটে অন্য কারো ভুলের জন্য সিগন্যাল ছাড়া ফায়ার শুরু হয়। ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত একটানা যুদ্ধ চলতে থাকে। তখন পরিকল্পনা হয় ১৩ডিসেম্বর রাতে থানার এক পাশ খুলে দেয়া হবে। এ সময় প্রচণ্ড গোলাগুলির সময় কমান্ডার দুলাল যিনি এযুদ্ধের সার্বিক পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলেন তিনি পাক্সেনাদের গুলিতে নিহত হন। ১৩ ডিসেম্বর ভোরে থানার দক্ষিণ পাশে খুলে দেয়া হয়, সে পথ ধরে পাকসেনারা পালাতে থাকে। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় জনগণকে নিয়ে পাকবাহিনী এবং তাদের দোসরদের হত্যা করে। তবে কিছুসংখ্যক শত্রু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। পাকবাহিনীর পলায়নে সুজানগর থানা মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, মুক্তিযোদ্ধা দুলালের জীবনের বিনিময়ে। আজও থানার পাশে শহীদ দুলালের কবর সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেয় এই বীরমুক্তিযোদ্ধার আত্মত্যাগের কথা।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত