You dont have javascript enabled! Please enable it!

সিরাজদিখান থানা আক্রমণ, মুন্সিগঞ্জ

একাত্তরের মে মাসে পাকসেনাবাহিনী মুন্সিগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার ক্যাম্প স্থাপন করে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড, লুটতরাজ ও অত্যাচার নির্যাতন চালায়। নভেম্বর নাগাদ মুক্তিযোদ্ধারা পাকসেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি অর্জন করে। সিরাজদিখান থানার মুক্তিযোদ্ধা কামান্ডার আবুল লতিফ, সহযোদ্ধা জাহাঙ্গীর, শাহজাহান, ওয়াশেকসহ কয়েকজন প্রধান যোদ্ধাদের থানা আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহন করে এবং ৮নভেম্বর রাতে পাকবাহিনীর দখলিকৃত থানা ক্যাম্প আক্রমণ করে। কিন্তু থানার নিকতবর্তী নদীতে সেনাবাহিনীর গানবোট রক্ষিত থাকায় তারা সেই গানবোট ব্যবহার করে শেল নিক্ষিপ্ত করতে শুরু করে। ফলে ট্রেসার বুলেটের আগুনের ঝলকানিতে থানার চারদিক ও গ্রামগুলি আলোকিত হয়ে উঠে এবং লোকজন ভয়ে-আতঙ্কে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধাদের এদিনের অভিযান ব্যর্থ হয়। পুনরায় জামালউদ্দিন বাচ্চু, রশীদসহ আরো অনেক মুক্তিযোদ্ধা মিলে সিরাজদিখান থানা আক্রমণ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৯ নভেম্বর মধ্যরাতে দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে প্রায় ২০০ জন মুক্তিযোদ্ধা মিলে সিরাজদিখান বাজার সংলগ্ন থানার কাছে উপস্থিত হন। যোদ্ধারা তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে থানার তিন দিক থেকে সংকেতের মাধ্যমে একই সময় গুলিবর্ষণ করতে শুরু করে। পাক সৈন্যরা এই আক্রমণের জন্য প্রস্তুত না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়ে। তাদের পালাবার কোন পথই রাক্ষা হয়নি। অবশ্য একদিক খোলা থাকলেও নদী থাকায় পারাপারের কোন ব্যবস্থা চিল না। মুক্তিসেনাদের গুলিতা পাক ওয়ারলেস অপারেটর ও রাজাকার মজিদ মুন্সী নিহত হয়। সাধারণ পাক সেনাদের দাবীর মুখে সুবেদার মেজর শামুসল আজম হ্যান্ড মাইকে তাদের জীবন ভিক্ষা চেয়ে নিঃশর্ত আত্মসর্ম্পণ করার ঘোষণা দেয়। মুক্তিযোদ্ধারা তখন পাকসেনাদের সমস্ত অস্ত্র থানার সামনে খোলা জায়গায় রাখার নির্দেশ করে। পাক সুবেদার মেজর,পুলিশ ও ইপিআর সদ্যসরা জয়গান শো-আগান দিয়ে আত্মসমর্পন করে। পরের দিন ২০ নভেম্বর সকালে হাজার হাজার মানুষ যুদ্ধ জয়ের আনন্দে সমবেত হয়ে সিরাজদিখান থানায় সম্মিলিতভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। এভাবেই সিরাজদিখানা থানা হানাদার মুক্ত হয়।
একাত্তরে প্রকাশিত সাপ্তাহিক বাংলাদেশ পত্রিকা সিরাজদিখান থানায় মুক্তিবাহিনী কর্তৃক থানা আক্রমণ সম্পর্কে লিখেছেন ‘আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানাচ্ছে যে,গত ২১ নভেম্বর সিরাজদিখান থানায় এক দুর্বার আক্রমণে আমাদের বীর মুক্তিসেনাদের হাতে ৩ জন সেনা নিহত এবং ৬০জন রাজাকার আত্মসমর্পন করে। এ সংঘর্ষে একটি ওয়্যারলেস সেট,১টি তিন ইঞ্চি মর্টার,২টি হাল্কা মেশিনগান এবং ৬০টি রাইফেলসহ ২হাজার রাউন্ড গুলি মুক্তিবাহিনীর হস্তগত হয়। সংবাদে আরো প্রকাশ এ এলাকায় কুখ্যাত দালাল মজিদ মুন্সি আমাদের গেরিলাদের হাতে ধরা পড়লে দেশদ্রোহিতার অপরাধে তাকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।

[৮৮],[১৭৮] হাসিনা আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!