সালপাড়ার যুদ্ধ, জয়পুরহাট
তদানীন্তন সময়ে সালপাড়া বাজারটি জয়পুরহাট জেলার একটি উল্লেখযোগ্য ব্যবসায়িক এলাকা হিসেবে পরিচিত ছিল। ভারতে পলায়নের জন্য সালপাড়া এলাকাটি ছিল অধিক উপযোগী। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধারা ভারত হতে সীমানা পার হয়ে সালপাড়া বাজার হয়ে সহজেই পাচঁবিবি ও জয়পুরহাট পৌছাতে পারত। এ সকল বিষয় বিবেচনা করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আউটার পেরিমিটার প্রতিরক্ষার একটি অবস্থান হিসেবে সালপাড়া বাজারকে নির্বাচন করে। বাজার এলাকাটির অবস্থানগত গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে এবং ব্যবহারিক মূল্যায়নের ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধারা সালপাড়া পাকিস্তানী ক্যাম্প আক্রমণের পরিকল্পনা করে। মুক্তিযুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা সালপাড়া পাকিস্তানী ক্যাম্প অনেক গুল ছোট ছোট আক্রমণ পরিচালনা করলেও সেগুলোর অধিকাংশেরই কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য বা বর্ণনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। সালপাড়া বাজার এলাকায় পাকিস্তানী প্রতিরক্ষা ক্যাম্প স্তাহপনের পর হতে এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিকামী সাধারণ জনগণের চলাচল বিশেষভাবে বাধা গ্রস্ত হতে থাকে। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সকল কারণে মুক্তিযোদ্ধারা সালপারার পাকিস্তানী ক্যাম্প ধ্বংসের চিন্তাভাবনা শুরু করে। সালপাড়ায় পাকিস্তানী সেনা প্রতিরক্ষায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্বল্প সংখ্যক সদস্য প্রায়ই আতর্কিত হামলা চালিয়ে কিছু ক্ষয়ক্ষতি সাধণ করেই ত্বরিত পশ্চাদপসরণ করত। এ ধরণের ক্ষুদ্র ও অনুল্লেখযোগ্য বিচ্ছিন্ন অনেকগুলো আক্রমণ মুক্তিযোদ্ধারা পরিচালনা করেছে- যার কোনো একত্রীভূত তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়নি। তবে সম্ভবত ১৯৭১ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসের কোনো একদিন মুক্তিযোদ্ধারা জানতে পারে যে সালপাড়া পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্পের অধিক সংখ্যক সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র ১টি সেকশন বা অনুরূপ স্বল্প সংখ্যক পাকসেনার সাথে রাজাকারের ১টি দল প্রতিরক্ষায় আছে। পাকিস্তানী সেনাদের প্রতিরক্ষায় এই দুর্বলতার সুযোগ গ্রহণ করে মুক্তিযোদ্ধারা সালপাড়া পাকিস্তানী সেনা ক্যাম্প আক্রমণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত