You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.13 | টাইমস, ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১ গেরিলারা এখন ঢাকার ভেতরে যুদ্ধ করছে - সংগ্রামের নোটবুক

টাইমস, ১৩ ডিসেম্বর ১৯৭১
গেরিলারা এখন ঢাকার ভেতরে যুদ্ধ করছে
– ডিফেন্স প্রতিনিধি হেনরি স্ট্যানহোপ

কলকাতা, ১২ ডিসেম্বর- ১৮৫ জন ব্রিটিশ নাগরিক সহ মোট ৪৩৫ জন বিদেশী নাগরিক আজ ঢাকা থেকে বিমানে নিরাপদে কলিকাতা পৌঁছেছেন। জানা যায় ভারতীয় সৈন্য শুক্রবার মেঘনা নদী পাড় হয়েছে। তারা পূর্ব পাকিস্তানের রাজধানী থেকে মাত্র ২০ মাইল দূরে আছে এবং খুব দ্রুত আগাচ্ছে।

৫ রাত ক্রমাগত বোমাবর্ষনের ফলে ফিরে আসা লোকগুলো খুব ক্লান্ত। তারা জানায় পাকসেনাদের মনোবল একদম ধ্বংস হয়ে গেছে। সেনারা ঠিক মত জানেইনা এ কোন দিকে রওনা দিতে হবে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০০ মুক্তিবাহিনী (বাংলাদেশী গেরিলা) শহরে যুদ্ধ করছে।

ভারতের দুইটি প্যারাসুট ব্রিগেডের একজন লোক জানালেন তারা গতকাল ঢাকার বাইরের ডিফেন্সে যে আক্রমণ করেছেন তার চূড়ান্ত রিপোর্ট এখন জানেন না। তবে ভারত নিশ্চিত করেছে যে পাকিস্তানের কাউন্টার এটাকের বিপরীতে তারা ওদের ভালো রকম ক্ষয়ক্ষতি করেছে।

তিনটি আরএএফ হারকিউলিস পরিবহন বিমান দিয়ে বিদেশীদের সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এগুলোর একটি এখন দ্বিতীয় বারের মত যাত্রার জন্য লোড হচ্ছে। সকল ব্রিটিশ নাগরিকদের সিঙ্গাপুরে নেয়া হচ্ছে। কিন্তু আরও প্রায় ১০০০ জন কলিকাতার হোটেলে আজ রাতে অবস্থান করবেন। তাদের হাতের হাল্কা লাগেজটাই শুধু তাদের সাথে বিমানে নিতে দেয়া হচ্ছে।

সপ্তমবারের মত এবার ঢাকা থেকে বিদেশীদের বেড় করে নিয়ে আসা হল। তারা জানালেন কিছুদিন আগে একটি বিমান হঠাত করে আক্রান্ত হবার কারণে যাত্রা বাতিল হয়েছিল। মহিলা ও শিশুদের কান্নার কোন শেষ ছিলোনা তখন।

তারা জানায় কিছুদিন আগে একটি এতিমখানায় ৫০০ থেকে ১০০০ পাউন্ড বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছে যেটি রেলওয়ে থেকে ১০৫ গজ দূরে ছিল এবং পাকিস্তানী কর্তৃপক্ষ জানায় প্রায় ৩০০ ছেলে নিহত হয়েছে। জার্মানির একটি টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান বলেছেন যে তিনি ২০ টি লাশ দেখেছেন কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন যে আরো লাশ ধ্বংসস্তুপের নিচে চাপা পড়ে ছিল।

তবে ক্যামেরাম্যান, হের জেনস উই স্কিমার বলেন ঢাকার বেশীর ভাগ অঞ্চল এখনো আক্রান্ত নয় এবং সামরিক অবস্থান তাদের মূল টার্গেট।

রিপোর্টে জানা যায় ঢাকায় প্রায় ২০০০০ থেকে ৩০০০০ পাকসেনা আছে যাদের বিপক্ষে ১০০০ মুক্তিবাহিনী হাল্কা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।

হের স্কিমার বলেন যে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বাইরে একটি সাম্প্রতিক সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের চিফ অব স্টাফ জানান তিনি শহরের প্রতিরক্ষার ব্যাপারে আশাবাদী। আমাদের চালাক জেনারেলরা তেমন বিপদের সম্ভবনা দেখছেন না। তাই তারা অতিরিক্ত কোন প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে বলে মনে করছেন না।

শহরে এখন অল্প কিছু বিদেশী নাগরিক আছেন। তারা হলেন প্রেস সংবাদদাতারা এবং কিছু রেড ক্রস কর্মী।