You dont have javascript enabled! Please enable it! মেজর জেনারেল (অবঃ) সি, আর, দত্ত - সংগ্রামের নোটবুক

সি, আর, দত্ত, মেজর জেনারেল, বীরউত্তম

মেজর জেনারেল (অবঃ) সি, আর, দত্ত। ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের একজন অকুতোভয় সেনানায়কের নাম। তখন তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে মেজর পদে কর্মরত ছিলেন। ৭১ সালের জানুয়ারি মাসে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৩ মাসের ছুটি কাটাতে সিলেটের হবিগঞ্জে আসেন মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত। পশ্চিম পাকিস্তানে তাঁর কর্মস্থল ছিল ৬ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টে। ২৫ মার্চ ঢাকায় পাকবাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণের সংবাদ তিনি ২৬ মার্চেই জানতে পেরে প্রতিরোদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধে ৪নং সেক্টরের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পর্কে সি, আর, দত্ত বলেন- আমার ছুটি ছিল ৭১-এর মার্চ মাস পর্যন্ত। ২৫ মার্চ ঢাকা ও দেশের বড় শহরগুলোতে পাকবাহিনী যে তাণ্ডবলীলা শুরু করে, তা প্রথম জানতে পারলাম মরহুম জেনারেল রব্ব মরহুম মানিক চৌধুরীর মুখে। সেটা ছিল ২৬ মার্চ সকাল। পরের দিন কয়েকজন ছাত্রের মাধ্যমে জেনারেল রব আমাকে খবর পাঠালেন তাঁর বাড়িতে যাওয়ার জন্য। গিয়ে দেখলাম, ঐ বাড়িতে বসে আছেন সামরিক বাহিনী ও আনসারের কয়েকজন সদস্য এবং বেশ কিছু ছাত্র। বাড়ির বাইরের খোলা জায়গায় বেশ ভিড়। দেখলাম হাতিয়ার নিয়ে প্রায় ১৫০ জনের মতো দল যুদ্ধে যায়ার জন্য প্রস্তুত। যুদ্ধ পরিচালনার ভার দেয়া হলো আমার হাতে। আমি হাসি মুখে সে দায়িত্ব গ্রহণ করলাম।
সি, আর, দত্তের জন্ম শিলং-এ, ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি। ১৯৭১সালের আগস্ট মাসে তিনি লে, কর্নেল পদে উন্নীত হন। রণাঙ্গনে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারের ন্যায় তিনি ‘বীর উত্তম” পদকে ভূষিত হন। যুদ্ধের পর ’৭২-এ রংপুরের ব্রিগেড কমান্ডার এবং ’৭৩-এ বিডিআর-এর ডাইরেক্টর জেনারেল নিযুক্ত হন। ১৯৭৪ থেকে ’৭৬ সাল পর্যন্ত তিনি আর্মি হেড কোয়ার্টার চিফ অব লজিস্টিকের দায়িত্ব পালনের পর তাঁকে ’৭৭-এ মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান নিযুক্ত করা হয়। এরপর ‘৭৯তে বি, আর, টি,সি,র চেয়ারম্যান ও পুনরায় ১৯৮২তে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ’৮৪ সালে এল,পি,আর, ছাড়াই তাঁকে অবসর প্রদান করা হয় বলে তিনি জানান। বর্তমানে তিনি অবসর জীবন যাপন করছেন। এ ছাড়া তিনি হিন্দু-বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
৪নং সেক্টরের ভৌগোলিক অবস্থান ছিল সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই-শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট-ডাউকি সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত।
ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে সিলেটের কানাইঘাটে সংঘঠিত যুদ্ধকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা বলে জানান সি.আর.দত্ত।
[৫৪] আশরাফ কায়সার

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত