You dont have javascript enabled! Please enable it!

শরীফ, মেজর
ওমর, জেনারেল মেজর

স্থানঃ ফুলপুর, ময়মনসিংহ।
অপরাধঃ ময়মনসিংহের ফুলপুরের হত্যাকান্ডের সাথে মেজর শরিফ ও মেজর ওমর প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। ‘৭১ এর প্রথম থেকেই মেজর শরীফ সেখানে ছিল। আগস্ট সেপ্টেম্বরের দিকে মেজর জেনারেল ওমর তার সাথে যোগ দেয়। তাদের সহযোগী ছিল ফুলপুর থানার পুলিশ জহিরুল ইসলাম ও সিপাহি আব্দুল কাদের। ১৯৭১ সালে বিভিন্ন স্থান থেকে তারা প্রতিদিন বহু মানুষকে ধরে এনে ফুলপুর কংস নদীর তীরে বরই গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন করত। ময়মনসিং থেকে হালুয়াঘাট, হালুয়াঘাট থেকে ময়মনসিংগামী বাসগুলো দাঁড় করিয়ে সন্দেহভাজন যাত্রীদেরকে গাছের সাথে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে রাইফেলের বাঁট দিয়ে আঘাত করে নির্যাতন করত। রাতের বেলা তাদের নদীর ধারে নিয়ে গুলি করে হত্যা করত। প্রতিদিন এভাবে ১৫/২০ থেকে ১০০ জন পর্যন্ত লোককে তারা হত্যা করত।
সাক্ষীঃ মো. হায়দার রহমান তালুকদার, আব্দুল হাই তালুকদার এইসব ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
সাচ্চাপুর ঘাটে পাকিস্তানি বাহিনীর ক্যাম্প ছিল। পাকবাহিনী পুর্ব ও পশ্চিম বাখাইয়ের হিন্দু বস্তি থেকে মেয়েদের ধরে এনে ক্যাম্পে রেখে ধর্ষণ করত। এ ছাড়াও সমাজের প্রধান প্রধান ৩০/৩৫ হিন্দু ব্যক্তিকে তারা গুলি করে হত্যা করে। এখানে প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়।
সাক্ষীঃ রিয়াজউদ্দিন তালুকদার।
এখানকার ভুবননাথ চৌধুরীর বাড়ির ৮/৯ জন নারী পুরুষকে হত্যা করা হয়। ডোবার পাড় নামক স্থান থেকে এক পরিবারের কয়েকজনকে আলোকদি নিয়ে হত্যা করে। পল্লী চিকিৎসক নরেন্দ্রচন্দ্র দাস মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন বলে সাহায্য করতেন বলে পাকসেনারা তাঁকে এবং গ্রামের আরো ২২ জনকে ধরে নিয়ে যায়। নদীর পাড়ে দাঁড় করিয়ে তাদেরকে গুলি করলে ৯ জন নিহত হন এবং বাকিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
সাক্ষীঃ মৌলভী মো. আব্দুল করিম, মানিক চন্দ্র দাস।
পাকবাহিনী ৫ নং ফুলপুর ইউনিয়নের শর্চাপুর নামক স্থানে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়। ফতেপুর গ্রামের হাফিজ উদ্দিনের বাড়িতে ৭ জনকে একই ঘরে হত্যা করে। মধ্যনগর গ্রামে প্রায় ৫০ জনকে লাইনে দাঁড় করিয়ে হত্যা করে। কাজিয়াকান্দা সাপাড়া গ্রামে হত্যা, লুন্ঠন ও অগ্নিসংযোগ করে হত্যা করে ও লুন্ঠন চালায়। ৩নং ভাইটকান্দি ইউনিয়নের সুতারকান্দি গ্রামের আব্দুস সালাম মাস্টারের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। ছন্দরা ইউনিয়নের ছন্দরা বাজার সংলগ্ন এলাকায় হত্যাযজ্ঞ চালায়। ৪ নং সিংহেশ্বর ইউনিয়নের মোকামিয়া গ্রামে তালুকদারের বাড়িতে ধর্ষণ চালায়। বালিয়াবাজারের নিকট হত্যাযজ্ঞ, অগ্নিসংযোগ ও লুন্ঠন চালায়। ১৩ নং তাকুয়া ইউনিয়নের স্বপন সেনের পিতাসহ তিনজনকে হত্যা করে। ১৪ নং বানিহালা ইউনিয়নের বারইপাড়া গ্রামে যামিনী পাল ও তার ছেলে শংকর পালকে হত্যা করে বছির মেম্বার, কাশেম মৌলভীসহ অন্যরা। ৮ নং বালিয়া ইউনিয়নের ঢাকিরকান্দা গ্রামে অগ্নিসংযোগ করে।
ফুলপুরে পাক আর্মিরা রাজাকার, আলশামস ও শান্তিবাহিনীর সদস্যদের সহযোগীতায় অন্তত ৪০/৫০ টি জায়গায় অপারেশন চালিয়ে কমপক্ষে ২০০/৩০০ জন নারী পুরুষকে হত্যা করে। এসব হত্যাকান্ডের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নির্মম ছিল পয়ারী চৌধুরী বাড়ির হত্যাকান্ড, বাখাই এর ডা. নরেন্দ্র চন্দ্র দাসের বাড়ির হত্যাকান্ড, রামসোনা গ্রামের ১৭ জনের হত্যাকান্ড ও মধ্যনগরের শিরীনা বেগম হত্যাকান্ড। ফুলপুর সিও অফিসের ছাদে, জলিল খানের বাসায়, শরবাপুর ঘাট ক্যাম্প, হালুয়াঘাট ক্যাম্প, তালদিঘী হাইস্কুল ক্যাম্প, তারাকান্দা ক্যাম্প, রূপচন্দ্রপুর ক্যাম্প, টিলাটিলা ক্যাম্প ও বরইকান্দি রাজাকার ক্যাম্পে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যাসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যা করা হয়নি। মেয়েদের বাড়ি ও রাস্তা থেকে এসব ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যাওয়া হত। সারারাত, সারাদিনধর্শণ করে যখন শরীর কাহিল হয়ে পড়ত তখন তাদেরকে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করত। হত্যাশেষে লাশগুলো নদীতে ভাসিয়ে দিত, মাটিচাপা দিয়ে রাখত, নয়ত জঙ্গলে ফেলে রাখত যাতে শিয়াল শকুনে খেয়ে ফেলে। বাহাদুরপুর হিন্দুবাড়ি, বাখাই হিন্দু পল্লী ডাকুয়া হিন্দুপল্লী, তারাকান্দা হিন্দুপল্লী এবং দাদরায় মুসলমান বাড়ি এবং হিন্দু বাড়ি থেকে মহিলাদের ধরে নিয়ে যেত অথবা ঐসব বাড়িতে ধর্ষণ করে হত্যা করত।
উপরোল্লিখিত দুজন অফিসারসহ ৯৩ ব্রিগেডের ব্রিগেড কমান্ডার ও ঐ ব্রিগেডের অন্যান্য অফিসাররা ফুলপুরে সংগঠিত নির্বিচার হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য এরা সবাই দায়ী।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!