You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.09 | সারিয়াকান্দি পুলিশ স্টেশন আক্রমণ, বগুড়া - সংগ্রামের নোটবুক

সারিয়াকান্দি পুলিশ স্টেশন আক্রমণ, বগুড়া

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বগুড়া এলাকায় যুদ্ধ ছিল মূলত খণ্ড খণ্ড আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিভিন্ন গুরুত্বপৃর্ণ স্থানে শত্রুর ওপর এ ধরনের অভিযান সারিয়াকান্দি যুদ্ধ বিশেষভাবেউল্লেখযোগ্য। কারণ এই যুদ্ধে শত্রুর জনবল, গোলাবারুদ ও অস্ত্রের বড় ধরনের ক্ষতি করা হয়েছিল। সারিয়াকান্দি পুলিশ স্টেশন ছিল সারিয়াকান্দি শহরে এবং সেখানে পাবাহিনীর অবস্থান ছিল। বগুড়া-সারিয়াকান্দি সড়ক ব্যতীত পাকবাহিনীর ব্যবহার করার মতো তেমন কোন পথ ছিল না। সেই কারণে সারিয়াকান্দির যুদ্ধ কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপৃর্ণ ছিল পাকবাহিনী যাতে বগুড়া থেকে এসে সারিয়াকান্দি থেকে নির্বিঘ্নে অন্য কোথাও চলাচল করতে না পারে সে কারণে থানার চারদিকে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পাকবাহিনীর জনবল, গোলাবারুদ এবং অস্ত্রের ক্ষতিসাধন করার জন্য সারিয়াকান্দি পুলিশ স্টেশনে আক্রমণ পরিচালনা করা হয়েছিল। সারিয়াকান্দি পুলিশ স্টেশনে পাকবাহিনীর একটি ক্যাম্প ছিল। এখানে এক কোম্পানি পাকসেনা এবং ২০-২৫ জন রাজাকারের সম্মিলিত দল্টি বিভিন্ন অপারেশ্ন পরিচালনা করত। নভেম্বরের শুরুর দিকে ক্যাম্পটি আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। পরিকল্পনা মোতাবেক ৯ নভেম্বর আ, আজিজ রঞ্জু সাহেবের নেতৃত্বে ২৪ জনের একটি দল এলএমজি, এসএলআর, স্টেঙ্গান, রাইফেল ইত্যাদি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ক্যাম্পটির উত্তর পাশ থেকে ভোর ৪টায় আক্রমণ সৃচনা করে। প্রায় তিন ঘন্টা প্রচণ্ড গুলি বিনিময়ের পর মুক্তিযোদ্ধারা ফায়ার করতে করতে পিছু হটে আসে। পরবর্তীতে ১৪ নভেম্বর মো. মমতাজুর রহমানের নেতৃত্বে ৭টি গ্রুপের সমন্বয়ে মোট ৮৫জন মুক্তিযোদ্ধার একটি দল ক্যাম্পটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে। ৭টি গ্রুপের কমান্ডার হচ্ছেন আ. আজিজ রঞ্জ,শাহজাহান আওরঙ্গজেব, রেজাউল করিম মন্টু,আবুল হাশেম বাবলু,আব্দুস সবুর সওদাগর,শোকরানা,খাজা নাজিমুদ্দিন। ভোর ৪টায় মুক্তিযোদ্ধারা গুলি শুরু করলে পাকবাহিনীর সাথে তুমুল সংঘর্ষ শুরু হয়। দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা গুলিবিনিময়ের পর ক্যাম্পটি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পূর্ন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এ যুদ্ধ পাকবাহিনীর ২০-২৫ জন সৈন্য নিহত হয়,১০-১২ জন সৈন্য আত্মসমর্পণ করে এবং প্রায় ২৫ জন রাজাকার আত্মসমর্পণ করে। বাকিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। ১২টি রাইফেল ও কিছু গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কমান্ডার মমতাজুর রহমান এবং বাবলুসহ মোট তিনজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং তিনজন মুক্তিযোদ্ধা আহত হন।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত