লালশিয়া জাহাজে দুর্ধর্ষ অভিযান, সুন্দরবন
খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস তৎকালীন পাকিস্তানের কাগজ উৎপাদনেরতসবচেয়ে বড় কারখানা। গেওয়া কাঠ আহরণ ও আনয়ণের ব্যবস্থা সারাবছর চালু রাখার জন্য ‘লালশিয়া’ নামের একটী আবাসিক জাহাজ সুন্দরবন অভ্যন্তরে সর্বদাই অবস্থান করত। অফিসার এবং কর্মচারীদের আবাসস্থল ও অফিস হিসেবেই এ জাহাজটা ব্যবহৃত হত। তৎকালীন পাকিস্তানের সংবাদপত্র শিল্প ও নিউজপ্রিন্ট কারখানা সাময়িক ভাবে অচল করে দেয়ার উদ্দেশ্যে এই জাহাজ ডুবিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত হয়। লেফটেন্যান্ট আরেফিনব ও তাঁর দল এই গুরু দ্বায়িত্ব পালন করেন। হাতিয়ার ডাঙ্গা মনোরঞ্জন ক্যাম্প থেকে মাত্র ১১ জনের একটা দল গহীন সুন্দরবনের ভিতর দিয়ে রওনা হন ‘লালশিরা’ জাহাজ অপারেশন করার উদ্দেশ্যে। নৌকাযোগে উজানভাটি মোকাবেলা করে একসময় লে. আরেফিনের দল ‘লালশিরা’র কাছাকাছি এক স্থানে পৌঁছান। দুইতিন জন চলে যায় জাহাজের অবস্থান সহ অন্যান্য খোঁজখবর আনার জন্য। তৃষ্ণার্ত, ক্ষুধার্ত মুক্তিযোদ্ধারা সঙ্গে আনা চিড়ামুড়ি খেয়ে কিঞ্চিত বিশ্রাম করেন জঙ্গলের মধ্যে। ইতিমধ্যে রেকি পার্টি ফিরে এসে এ অভিযানের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট আরেফিনের নিকট তাদের রিপোর্ট পেশ করে। অতঃপর সামান্য বিশ্রামের পর ৫/৭ জন ফ্রগম্যান বা ন্যাভাল কমান্ডকে পাঠিয়ে দেন জয়বাংলা মাইন দিয়ে। জাহাজের তলার খানিকটা জায়গা পরিষ্কার করে মাইন লাগিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক ৩০ মিনিট পর প্রচন্ড আওয়াজে মাইন বিস্ফোরণ ঘটে। গভীর জঙ্গল প্রকম্পিত হয় এবং ধাওনি প্রতিধ্বনি চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। জাহাজের অফিসার ও কর্মচারীরা ভীত সন্ত্রস্ত্র হয়ে জাহাজ ত্যাগ করে। ধীরে ধীরে জাহাজ পানিতে ডুবে যায়। অধিনায়করা চমকে ওঠেন। মুক্তিবাহিনীর তৎপরতার কথা শুনে তাদের পিলে চমকে ওঠে। গেওয়া কাঠের অভাবে নিউজপ্রিন্ট মিল অচল হয়ে যায়। এ ‘লালশিরা’ জাহাজ অপারেশনের উদ্দেশ্য পুরোপুরি সফল হয়। নিউজপ্রিন্ট মিলের উৎপাদন নামমাত্র অবস্থায় চলে আসে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ সফল অভিযান ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবময় অধ্যায়।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত