লাহারা সিগন্যাল অফিস অপারেশন, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার লাহারা সিগন্যাল অফিসের পাহারায় থাকা রাজাকারদের হত্যা ও তাদের অস্ত্র গোলাবারুদ হস্তগত করার লক্ষ্যে ক্যাপ্টেন করিম ও অধ্যাপক শামসুল ইসলামের পরিকল্পনায় মুক্তিযোদ্ধারা এই অপারেশনে অংশগ্রহন করেন। অপারেশনের দিন বিকেল সাড়ে ৫ টার দিকে উল্লিখিত দু ব্যক্তির নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একটি মুক্তিযোদ্ধা দল নিয়ে অপারেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। প্রায় ঘন্টাখানেক পর মুক্তিযোদ্ধারা সিগন্যাল অফিসের কাছাকাছি পৌঁছায় এবং সিগন্যাল অফিসের প্রধান ফটকে রাজাকারদের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে পাঠায়। তিনি ফিরে এসে খবর দেন, প্রধান ফটকে কেউ নাই। এ সংবাদে মুক্তিযোদ্ধারা দ্রুত প্রধান ফটকে ঢুকে দুই গ্রুপে ভাগ হয়ে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে অবস্থান গ্রহন করেন। এরপর তারা দুদিক থেকে অফিসটির উপর গুলিবর্ষণ শুরু করেন। এভাবে ১০/১২ মিনিট পর্যন্ত গুলি চলার পরেও ভিতর থেকে কোন পাল্টা গুলি বর্ষিত না হওয়ায় মুক্তিযোদ্ধারা তল্লাশির উদ্দেশ্যে ঐ অফিসে ঢুকে পড়েন। তবে তল্লাশীতে কোন রাজাকারকে খুঁজে না পেলেও দুইটি রাইফেল উদ্ধার করা হয়। তল্লাশীর এক পর্যায়ে মুক্তিবাহিনী দেখতে পায় অফিসের পিছনে একটি ছোট দরজা এবং একই দিকে অফিসের পরিবেষ্টিত দেয়ালে আরেকটি ছোট দরজা রয়েছে যা দিয়ে সহজেই রাজাকাররা পিছনের ধানক্ষেতের মধ্যে দিয়ে নিরাপদে পাকিয়ে যেতে সমর্থ হয়েছে। কারণ পর্যবেক্ষণের সময় এই দরজা সম্পর্কে তথ্য জানা যায়নি। ফলে সেখানে কোন প্রটেকশনের পরিকল্পনাও করা হয়নি। এই অপারেশনে একটি এল এম জি, একটি এস এম জি, একটি এস এম সি, দুইটা এস এল আর এবং ২০/২২ টি রাইফেল ব্যবহার করা হয়। দুটি রাইফেল উদ্ধারের মাধ্যমে এই অপারেশনের দুটি প্রধান উদ্দেশ্যের একটির আংশিকমাত্র সফল হয়েছিল। তবে এই অপারেশনের ফলে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংগ্রহ ও তা ভালোভাবে যাচাই বিষয়ক উপলব্ধি মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী অপারেশনে সফলতা অর্জনে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত