You dont have javascript enabled! Please enable it!

লতিফ মির্জার বাহিনী, সিরাজগঞ্জ

১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রবাসী সরকার ও ১১ টি সেক্টরের বাইরেও কয়েকজন বীর সেনানীর পরিচালনায় দেশের অভ্যন্তরে কয়েকটি আঞ্চলিক বাহিনী গড়ে ওঠে। এ সমস্ত বাহিনীর মধ্যে পলাশডাঙ্গা যুব শিবির বা লতিফ মির্জা বাহিনী অন্যতম। এই বাহিনীর প্রতিষ্ঠা হয় সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দ থানার অজপাড়া গ্রাম ভদ্রঘাটকে কেন্দ্র করে। বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক আব্দুল লতিফ মির্জার নাম অনুসারে এই বাহিনী দেশব্যাপী লতিফ মির্জার বাহিনী নামে সুখ্যাতি অর্জন করে। আব্দুল লতিফ মির্জা মাত্র ৭ টি রাইফেল এবং ১৫ জন সহকারী নিয়ে ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষ দিকে ভদ্রঘাট গ্রামকে কেন্দ্র করে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করা শুরু করেন। তাঁর অক্লান্ত পরিশ্রম, একনিষ্ঠতা ও সাংগঠনিক যোগ্যতা দিয়ে গড়ে তোলেন এক বিশাল বাহিনী, যার অস্ত্র সংখ্যা দাঁড়ায় এক পর্যায়ে ৮/১০ হাজারেরও বেশি। এ সমস্ত অস্ত্র প্রায় সমস্ত পাকিস্তানি সেনাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। পলাশডাঙ্গা যুব শিবির বা লতিফ মির্জার বাহিনী উত্তরবঙ্গের বগুড়া, নাটোর, রাজশাহী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে পাকসেনাদের সঙ্গে অসংখ্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে সহস্রাধিক শত্রুসেনা ও তাদের সহযোগীদের খতম করে। মুক্ত রাখে ব্যাপক এলাকা। পাকসেনাদের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন যুদ্ধে লতিফ মির্জার বাহিনীর রামচন্দ্র ও সতিশসহ প্রায় ৭০/৮০ জন বীর মুক্তিসেনা শহীদ এবং আহত হয় কয়েকশ। আহতদের মধ্যে আজও পঙ্গুত্ব বরণ করছে মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, মোঃ শামসুল আলম, আব্দুল জলিল, আবু তালেব, মোঃ নেজবাহারসহ বেশ কয়েকজন। লতিফ মির্জার বাহিনীর বীরত্বপূর্ণ যুদ্ধের কাহিনী আজও শোনা যায় উত্তরবঙ্গের ব্যাপক এলাকার মানুষের মুখে। তাঁর বাহিনীর বীরর্বপূর্ন কাহিনী চিরদিনের জন্য স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে। পলাশডাঙ্গা যুবশিবির বা লতিফ মির্জার বাহিনীর পরিচালক ছিলেন জনাব আব্দুল লতিফ মির্জা, সহকারী পরিচালক ছিলেন কোম্পানী কমান্ডার আব্দুস সামাদ সরকার, মোঃ খোরশেদ আলম, আব্দুল আজিজ মির্জা, এড. বিমল কুমার দাস, সফিকুল ইসলাম সফি, লুৎফর রহমান অরুণ। এছাড়াও বাহিনী পরিচালনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্যদের মধ্যে ছিলেন কমান্ডার আব্দুল লতিফ বকুল, কালু, আব্দুল হাকিম, বেলাল (১), আব্দুল মজিদ, নজরুল, ওয়াজেদ, খালেক, জব্বার, বেলাল (২), সামাদ, শাজাহান, হাবিবুর, আতাউর, মোবারক, আমজাদ, রহিম, আনছার, গিয়াস, সামসু, সফি, কেরাত, নরেশ, রাঙা, সাবুল্লা, আসাদ, টুলু, ভুলু, খলিল, আজিজ, সেলিম, মান্নান, গেদুমিয়া, হোসেন, হেলাল, লাবু প্রমুখ। লতিফ মির্জার বাহিনী ভদ্রঘাট গ্রামকে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও তাদের মূল আস্তানা ছিল চলনবিল। চলনবিল ছিল এক বিশাল এলাকা। সেখানে অগাধ পানির জন্য পাকসেনাদের পক্ষে কোন সময়েই প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। এই বিলের মধ্যে কয়েকশ নৌকা সংগ্রহ করে তার মধ্যে রাখেন আব্দুল লতিফ মির্জা তাঁর বাহিনীর বীর সেনাদের। চলনবিলে অবস্থান করে সুযোগ সুবিধা মত এই বাহিনীর বীর সেনারা একেকদিকে বের হতেন পাক সেনাদের ওপর আঘাত হানার জন্য। বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ করার পর আবার এসে পড়তেন চলনবিলে। চলনবিলের পশ্চিম-উত্তর দিকে রাজশাহী জেলার অংশবিশেষ, দক্ষিণ-পশ্চিমে পাবনা জেলা, পূর্ব ও উত্তরে সিরাজগঞ্জ জেলা। যার জন্য লতিফ মির্জা তার বাহিনী নিয়ে ঐ সমস্ত এলাকায় পাকসেনাদের আক্রমণ করে সুবিধা পেতেন। এছাড়া মাঝে মধ্যেই এ বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জ জেলা উল্লাপাড়া থানার ধরাইল বিলে আস্তানা গড়ে তোলেন। অধিকাংশ সময়ই তাঁরা নৌকায় অবস্থান করতেন। নৌকার মধ্যেই তাদের রান্নার ব্যবস্থা ছিল। সেখানেই খাওয়া দাওয়া করতেন। প্রতিদিন তাঁদের প্রায় ১৩/১৪ মণ চাল লাগত এবং দুই হাজার টাকা খরচ হত। এ সমস্ত চাল ও টাকা এলাকার লোকজন তাদের স্বতস্ফূর্ত ভাবে দিতেন। গ্রামের মানুষ বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাল, ডাল, তরিতরকারি ও টাকা তুলে তা এনে মুক্তিযোদ্ধাদের আস্তানায় দিয়ে যেতেন। পলাশডাঙ্গা যুবশিবির বা লতিফ মির্জার বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণের জন্য বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ছিল। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল পলাশডাঙ্গা, উল্লাপাড়া থানার গায়হাটা ও উল্লাপাড়ার কালিয়াকৈর। এ ছাড়াও চলনবিলের আশেপাশে খোলা মাঠে মাঝেমধ্যে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতেন। প্রশিক্ষণ দিতেন বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য আব্দুস সামাদ ও বাহিনীর পরিচালক আব্দুল লতিফ মির্জা। এখানে সররপ্রকার অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংরক্ষণ করার শিক্ষাসহ গোপনে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চলাফেরার কৌশল শিক্ষা দেওয়া হত। লতিফ মির্জা বাহিনীর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ছিল। নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা করা হত। রাজনৈতিক আলোচনায় অংশ নিতেন বাহিনীর পরিচালক জুনাব আব্দুল লতিফ মির্জা, এড. বিমল কুমার দাস সহ আরও কয়েকজন। রজনৈতিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বাহিনীকে যেমন রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলেন তেমনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে তোলেন। পাকসেনাদের ও তাদের সহযোগীদের গোপন খবরাখবর সংগ্রহের জন্য মির্জাবাহিনীর ছিল একটি গুপ্তচর বিভাগ। এই বিভাগে শিশু ছেলেমেয়েদের রাখা হত। তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হত শত্রুর গোপন খবর আনার জন্য। এই গুপ্তচর বিভাগের লোকজন একেক সময় একেক বেশ ধারণ করে বের হত শত্রুর খবর সংগ্রহের জন্য। তারা কোনসময় কৃষক আবার কোন সময় কুলি আবার মজুর কিংবা ভিখারী সেজে বের হত। অনেক সময় ফেরিওয়ালা সেজেও যেত। এভাবে লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে সংগ্রহ করে গোপন খবর পৌঁছে দিত মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট। এ বাহিনীর একটি রেকি পার্টি ছিল। তারা আক্রমণের আগে শত্রুর অবস্থানের ওপর তেকি করতেন। এ পার্টির বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন মোহাম্মদ খলিলুর রহমান ও আতিকুর রহমান তোতাসহ বেশ কয়েকজন। পলাশডাঙ্গা যুবশিবির বা লতিফ মির্জার বাহিনীর পরিচালক আব্দুল লতিফ মির্জা সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাপাড়া থানার বংকিরহাট গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছাত্রজীবনেই সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহন করেন। সাংগঠনিক দক্ষতা, যোগ্যতা, একনিষ্ঠতা আর অনলবর্ষী বক্তৃতা দিয়ে গণমানুষকে খুবই তাড়াতাড়ি আকৃষ্ট করতে পারতেন, যার জন্য অল্প সময়ে সিরাজগঞ্জের ছাত্ররাজনীতির প্রাণপুরুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। তিনি ১৯৬৯ সালের ছাত্র গণ আন্দোলন গড়ে তোলেন ছাত্র আন্দোলনের দুর্গ হিসেবে। জনাব আব্দুল লতিফ মির্জা ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময় সিরাজগঞ্জ ও পাবনার ব্যাপক এলাকাতে আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধু মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারকাজে অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। জেলার একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত বেড়িয়েছেন নির্বাচনী প্রচারে। ঐ নির্বাচনে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার জাতীয় পরিষদ ও প্রাদেশিক পরিষদের প্রতিটি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিজয়ী হন। তাঁর সকল কর্মতৎপরতাই তাঁকে আসন করে দেয় সিরাজগঞ্জ ছাত্রলীগের সভাপতি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ও সিরাজগঞ্জ কলেজ ছাত্র সংসদের সহ সভাপতি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পর পর সরকার বঙ্গবন্ধুর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে গড়িমসি শুরু করে। এতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কুমতলব বুঝতে পেরে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। নেতার আহবানে দেশব্যাপী ছাত্রজনতা গড়ে তোলে ব্যাপক আন্দোলন। আর এই আন্দোলনের মূল সংগঠক ছিলেন জনাব আব্দুল লতিফ মির্জা। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের প্রথম দিক থেকেই সিরাজগঞ্জের ছাত্র, জনতাকে ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীনতার দীক্ষায় দীক্ষিত করে তোলেন। এ সমস্ত মিছিল, মিটিং ও সবা সমাবেশ করার ক্ষেত্রে লতিফ মির্জা অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ ও প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। প্রতিটি মিছিল মিটিং এ তিনি থাকতেন অগ্রভাগে। তাঁর নেতৃত্বেই প্রথম পাকিস্তানী পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেদিন নেতৃত্ব দেন ইসমাইল হোসেন, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, মোঃ আলমগীর, এসহাক আলী, গোলাম কিবরিয়া, সিরাজুল ইসলাম খান, বিমল কুমার দাস, আব্দুল আজিজ মির্জা, আজিজুল হক বকুল, আলী হোসেন, লুতফর রহমান মাখন, আব্দুর রউফ পাতা প্রমুখ। ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আহবান জানান যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত হবার জন্য। তিনি আরও বলেন, গ্রামে গ্রামে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার জন্য। তিনি সেদিন জাতিকে আহবান জানান ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলার জন্য। নেতার আহবানে দেশব্যাপী শুরু হয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন। প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ছাত্র যুবকদের। এ পর্বেও আব্দুল লতিফ মির্জা রাখেন অগ্রনী ভূমিকা। এসডিও শামসুদ্দিন ও আওয়ামী লীগের নেতাদের সহযোগিতায় লতিফ মির্জা তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে সিরাজগঞ্জে গড়ে তোলেন এক দুর্গ। তিনি সিরাজগঞ্জ কলেজের লাইব্রেরীতে মাল মশলা নিয়ে তা দিয়ে বোমাসহ বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক তৈরির ব্যবস্থা করেন এবং এ সমস্ত যমুনা নদীর চরে এনে পরীক্ষা করে দেখতেন। এর সঙ্গে সঙ্গে বন্দুক সংগ্রহ করে সমস্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। যুবকদের অস্ত্র চালানোর প্রশিক্ষণ দিতেন ইপিআর বাহিনীর সদস্য রবিউল ইসলাম ও বেঙ্গল রেজিমেন্টের লুরফর রহমান অরুন। অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহের ব্যাপারে এসডিও শামসুদ্দিন সাহেব সহযোগিতা করেন। ২৫ মার্চের পর সিরাজগঞ্জে শুরু হয় পাকিস্তানিদের প্রতিরোধের ব্যবস্থা। অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সর্বক্ষণ সংগ্রাম পরিষদের লোকজন প্রস্তুত থাকে পাকসেনাদের অপেক্ষায়। সেই সঙ্গে সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন রাস্তাঘাটে সংযোগ পথ কেটে প্রতিরোধ ব্যবস্থা সৃষ্টি করা হয়। এ সময় যমুনা নদীর তীরে ৬/৭ টি ছোট ধরনের কামান পেতে রাখে, যার দূরত্ব ছিল ১ মাইলের মত। এ কামান গুলি তৈরি করে কওমী জুটমিলের কয়েকজন শ্রমিক। এসডিও শামসুদ্দীন সাহেব লতিফ মির্জাকে পাঠান বাঘাবাড়ি ঘাটে পাকিস্তানীদের প্রতিরোধের জন্য। লতিফ মির্জা তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে বাঘাবাড়ি যান এবং সেখানে বাংকার করে প্রস্তিতী নিয়ে অপেক্ষা করেন পাকিস্তানী সেনাদের জন্য।
কাশিনাথপুরের ডাব বাগানের যুদ্ধঃ
২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা পেয়ে সিরাজগঞ্জের এসডিও একেএম শামসুদ্দিন সাহেব লতিফ মির্জাকে বাঘাবাড়ি যাবার নির্দেশ দেন। কারণ ঢাকা থেকে পাকসেনাদের সিরাজগঞ্জ ও উত্তরবঙ্গে যাওয়ার রাস্তা ছিল আরিচা-নগরবাড়ি হয়ে বাঘাবাড়ি ঘাট দিয়ে। যাতে পাকসেনারা সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর সহ উত্তরবঙ্গে যেতে না পারে। তার প্রতিরোধের জন্যেই পাঠানো হয় আব্দুল লতিফ মির্জাকে। এসডিও শামসুদ্দিনের নির্দেশে জনাব আব্দুল লতিফ মির্জা প্রায় ১৫০ জনের একটি দল নিয়ে আসেন বাঘাবাড়ি ঘাটে। এ দলের মধ্যে ছিল বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য, ইপিআরের সদস্য, পুলিশ, আনসার সহ ছাত্র যুবকেরা। তাদের নিকট প্রায় ১০০ টি অস্ত্র ছিল বিভিন্ন ধরনের। বাঘাবাড়ি ঘাটে পৌঁছে আব্দুল লতিফ মির্জা তাঁর সহযোগীদের নিয়ে বাংকার করে পাক সেনাদের প্রতিরোধ করার জন্য পুরো প্রস্তুতি নিয়ে অবস্থান করতে থাকেন। এখানে বেশ কিছু সময় অবস্থান করার পর তিনি সংবাদ পান পাকসেনারা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি দল নগরবাড়ি হয়ে এবং অন্য একটি দল পাবনা থেকে অগ্রসর হচ্ছে। এ সংবাদ পাবার পর লতিফ মির্জা তাঁর সঙ্গীদের নিয়ে অবস্থাব নেন পাবনা জেলার বেড়া থানার কাশিনাথপুরের নারিকেল বাগানে। এখানে ছিল প্রচুর ডাবগাছ। এই ডাবগাছের বাগানে লতিফ মির্জা পাকসেনাদের প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করেন। ১৯ এপ্রিল দুপুর ১২ টার দিকে পাকসেনাদের প্রায় ৩০০ সৈন্যের একটি দল নারিকেল বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা এখানে বিশ্রাম করছিল। এমন সময় পাকসেনারা আক্রমণ চালায়। চারদিক থেকে মর্টারসহ বিভিন্ন ধরনের বড় বড় অস্ত্রের সাহায্যে আক্রমণ চালায়। হঠাৎ আক্রমণ করলেও মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণ করতে তেমন দেরি হয়নি। শুরু হয় দুপক্ষে প্রচন্ড যুদ্ধ। এ যুদ্ধ চলে প্রায় ৩/৪ ঘন্টার মত। পাকসেনাদের কামান, মর্টারসহ আধুনিক অস্ত্রের প্রচিন্ড আক্রমনের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচুর ক্ষতি হয়। এখানে ৩০/৪০ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। অপরদিকে পাকসেনাদের মারা যায় ৪/৫ জন। পাকসেনাদের আক্রমণের চাপে একসময় এক পর্যায়ে আব্দুল লতিফ তার সঙ্গীদের নিয়ে সরে আসেন।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!