You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.06.19 | লাঠিটিলা ক্যাম্প অপারেশন, মৌলভীবাজার - সংগ্রামের নোটবুক

লাঠিটিলা ক্যাম্প অপারেশন, মৌলভীবাজার

পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধের মধ্যে মৌলভীবাজারের বড়লেখার লাঠিটিলা ক্যাম্প অপারেশন উল্লেখযোগ্য। একাত্তরের ১৯ জুন, দিবাগত রাত ৪ টা। বারপুঞ্জি সাবসেক্টরে সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন রব এক কোম্পানী মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে লাঠিটিলার দিকে সফল অপারেশনের লক্ষ্যে অগ্রসর হন। লাঠিটিলা বড়লেখা থানায় পাক আর্মিদের বেশ শক্ত ঘাঁটি ছিল। জুরি থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৯ কিলোমিটার। পা আর্মি মুক্তিযোদ্ধাদের সম্ভাব্য হামলার জন্য সামরিক দিক থেকে এর গুরুত্ব বিবেচনা করে উঁচু টিলার উপর ক্যাম্প করে একটি শক্তিশালী গ্রুপ মোতায়েন করে। জানা যায় টিলাটিকে এমনভাবে কেমোফ্লেজ করা হয়েছিল মুক্তিবাহিনী কোনক্রমে যেন পাক আর্মিদের অবস্থান টের না পায়। ক্যাপ্টেন রবের মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানী ৪ টা ৪৫ মিনিটে চারদিক ঘেরাও করে ক্যাম্পের টেলিফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। তখন কাছাকাছি থেকে গ্রেনেড চার্জের জন্য ৪ জন সাহসী যোদ্ধা পাঠানো হয়। কিন্তু না; ওরা পারল না। ফিরে এলে আবার পাঠানো হল একজন হাবিলদার ও দুজন সেপাই। পাক আর্মিদের খুব কাছ থেকে একজন গ্রেনেড চার্জ করতে সক্ষম হন। ফলে সাথে সাথে পালটা আক্রমণ শুরু হয়। পাক আর্মিদের শক্ত আক্রমণের মুখে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত অবস্থায় ফিরে আসেন। বৃদ্ধি পেতে থাকে গোলা বিনিময়ের প্রচন্ডতা। তখন ভারতীয় ৭ রাজপুত্র বাহিনীর লেফটেন্যন্ট কর্নেল দেব সেন মুক্তিসেনাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন এবং আর্টিলারির আঘাত শুরু করেন। ২০ মিনিট গোলা নিক্ষিপ্ত হয় ৫০০ পাক আর্মিদের কেমোফ্লেজ বাঙ্কারে। অত্যন্তক্ষিপ্ততার সাথে ক্যাপ্টেন রব বি.ও.পি.র উপর আক্রমণ শুরু করেন। শ্লোগান উঠে আকাশ বাতাস কম্পিত করে ‘জয়বাংলা’। বিরামহীন আক্রমণে জ্ঞানশূন্য পাক আর্মি পালাতে গিয়ে অধিকাংশ বুলেটবিদ্ধ হয়। পাক আর্মিদের সাথে সাথে এক অর্ধ নগ্ন মহিলাও পালাতে চেষ্টা করে গুলিতে মারা যায়। দখল হয় পুরো বিওপি। প্রচুর অস্ত্র গোলাবারুদ মুক্তিবাহিনী লাভ করে। পাক আর্মি ২২ বেলুচ রেজিমেন্টের এক হাবিলদার ও এক সেপাই মুক্তিবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে জীবিত অবস্থায়। লাঠিটিলায় আরেকটি অপারেশন ৭ জুলাই মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচালনায় সংঘঠিত হয়। সে অপারেশনে নেতৃত্ব দেন সৈয়দ মোস্তফা কামাল, তৎকালীন ন্যাপ নেতা ও তার সহযোদ্ধা সিরাজউদ্দিন ও আফজাল হোসেন। সুতারকান্দি থেকে একটি সামরিক ট্রাকে তারা পৌঁছে যান লক্ষ্যস্থলের কাছাকাছি। তখন রাত ৪ টা বাজে। প্রায় ঘন্টাখানেক গোলাবিনিময়ের পর পেছনে সরে আসে মুক্তিবাহিনী। কৌশলে ফিরে আসার পরের দিন মুক্তিযোদ্ধারা কাছে আছে সন্দেহে সারাদিন পাক আর্মি গোলাবর্ষণে প্রচুর গোলাবারুদ ক্ষয় করে। পরবর্তীকালে ৫ নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনীরা ১৪ জুন আরেকটি অপারেশন চালায়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত