You dont have javascript enabled! Please enable it!

রায়পুরা সদর কলোনির যুদ্ধ, নরসিংদী

স্থান ও সময়কালঃ রায়পুরা থানা সদর এলাকা, ১৯৭১ সালে সেপ্টেম্বর (সঠিক তারিখ জানা যায়নি) মাসে অপারেশনটি হয়েছিল। এই অপারেশনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রায় ৬০/৭০ জনের একটি দল অংশগ্রহণ করে। রায়পুরা সদর কলোনীর এই অপারেশনের মুক্তিযোদ্ধারা দুইভাবে বিভক্ত হয়ে রায়পুরা সদর কলোনীর উত্তরে রেললাইনের অপর পার্শ্বের গ্রামে এবং মহিষ মারা ডিউটি পোষ্টের উত্তর-পশ্চিমে নবীয়াবাদ গ্রামে অবস্থান নেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিযোদ্ধাদের রাত ১২টা ১ মিনিটের মধ্যে অবস্থান গ্রহণের কথা থাকলেও পথিমধ্যে পাকবাহিনীকে এড়াতে গিয়ে অবস্থান গ্রহণ করতে বিলম্ব হয়। এর ফলে নায়েক লতিফ এর দলের সদস্যদের (যারা পালাতে ইচ্ছুক ছিলেন) মধ্যে কিছুটা
দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। অতঃপর অবস্থান গ্রহণের পর হাবিলদার জয়দর আলী প্রথম মহিষমারা ডিউটি পোস্টের উপর দিয়ে গুলি ছোড়ে। এরপর ঐ পোস্ট ও তার সংলগ্ন স্থানের পলায়নে ইচ্ছুক সদস্যরা আকাশের দিকে গুলি করতে থাকে। অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য গ্রুপটি রায়পুরা সদর কলোনী লক্ষ্য করে গুলি করতে থাকে। এই পর্যায়ে হাবিলদার জয়দর আলীর দল নায়েক লতিফের দলের সাথে মিলিত হয়। পরবর্তী দিন ভোর হওয়ার সাথে সাথে মুক্তিযোদ্ধারা নায়েক লতিফের দলের ৬/৭ জন সদস্য ও ২ জন রাজাকার (কিতাব আলী ও লাল মিয়া) সহ পশ্চাদপসারণ করেন সকল মুক্তিযোদ্ধা ঘটনাস্থল থেকে ৩ কি.মি উত্তরে জাহাঙ্গীরগরন গ্রামে তাদের পশ্চাদপসারণের স্থানে একত্রিত হন এবং পরবরতীতে নিজ নিজ অপারেশন এলাকায় চলে যান। এই অপারেশন শিবপুর থানা অঞ্চল থেকেও মুক্তিযোদ্ধা এসে যোগ দেন। এই যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা ২ ইঞ্চি মর্টার, এলএমজি, এসএমজি, রাইফেল ও এসএলআর এবং স্টেনগান ব্যবহার করেন। এর মধ্যে হাবিলদার জয়দর আলীর গ্রুপ নবীয়াবা গ্রামে একটি এলএমজি, একটি এসএলআর ও ৪টি ৯ মি.মি স্টেনগান স্থাপন করেন। রায়পুরার সদর কলোনীর যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানী ক্যাম্পে আক্রমণ চালায়। প্রাথমিকভাবে তারা সাফল্য পেলেও পরবর্তীতে ক্ষয়ক্ষতির কথা বিবেচনা করে মূল ক্যাম্পের দিকে আর অগ্রসর হননি। তবে তারা সাফল্যের সাথে ইপিআর সদস্য ও দুইজন রাজাকারকে অস্ত্রসহ উদ্ধার করেন।
এই খণ্ডযুদ্ধের ফলে পাক বাহিনীর মধ্যে অনিচ্ছাসত্ত্বেও কর্মরত অন্যান্য ইপিআর সদস্যদের মনোবল বৃদ্ধি পায় যা তাদেরকে পরবর্তীতে দল ত্যাগ করতে উদ্ধুদ্ধ করেছে। এই অভিযানের ফলে মোট ৮/৯ জন সশস্ত্র যোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের দলে যুক্ত হন। নায়েক লতিফের দলের ল্যান্সের নায়েক গোলাম মাওলা শহীদ-এই অভিযানে পাকসেনাদের হাতে নিহত হন।
[৫৯৪] রিয়াজ আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!