You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাজাপুর যুদ্ধ ২, কুমিল্লা

কুমিল্লার মতিনগর থেকে এক দল মুক্তিযোদ্ধা ২২ জুন রাজাপুর পাকসেনাদের অবস্থানের উপর হামলা করার জন্য আসে। সন্ধ্যায় তারা শত্রুর অবস্থানটি পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে রেকি করে জানতে পারে পাকসেনারা বেশ অসতর্ক ভাবে অবস্থান করছে। ২২ জুন ভোর ৪ টায় মুক্তিযোদ্ধার দলটি গোপন পথে শত্রু অবস্থানের ভিতর প্রবেশ করে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। এই আক্রমণে পাকিস্তানীরা সম্পূর্ণ রূপে হতচকিত হয়ে যায়। কিন্তু পাকিস্তানী বিশাল সৈন্যদের সাথে পেরে ওঠে না মুক্তিযুদ্ধারা। প্রায় এক ঘণ্টা আক্রমণ পাল্টা আক্রমণের পর মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে। আ যুদ্ধে পাকসেনাদের ১৫ জন হতাহত ও মুক্তিযোদ্ধাদের ১ জন আহত হয়।
মুক্তিযোদ্ধারা খবর পায় পাকবাহিনীরা প্রায়ই হোমনা থানার কাছে কাঁঠালিয়া নদী এবং গোমতী লঞ্চে পেট্রলিং করে। এ খবর শুনে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ হেড কোয়াটার থেকে হাবিলদার গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি প্লাটুন হোমনা থানায় পাঠান। এ দলটি অনেক বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে দাউদকান্দির ৮ মাইল উত্তরে ও গৌরীপুর থেকে ৭ মাইল উত্তর পশ্চিমে চর কামারি গ্রামের কাছে পাকসেনাদের লঞ্চকে অ্যামবুশ করার জন্য তাঁর দলটি নিয়ে নদীর পাড়ে একটি অবস্থান গড়ে তোলে। পাকসেনাদের নৈমিত্তিক টহলদার সকালে কাঁঠালিয়া নদী দিয়ে লঞ্চে অগ্রসর হয়। লঞ্চটি যখন ৫০ গজের ভিতর চলে আসে, তখন হাবলদার গিয়াস উদ্দিন পার্টি মেশিনগান ও অন্যান্য অস্ত্র দিয়ে অতর্কিত গোলাগুলি চালাতে থাকে। এতে পাকিস্তানী বাহিনীর অনেকেই হতাহত হয়। লঞ্চটির সারেং লঞ্চটিকে একটি চরের দিকে নিয়ে ভিড়াবার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। অনেক পাকসেনা লঞ্চ থেকে পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে, পানিতে অনেকেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। লঞ্চটি ও মুক্তিযোদ্ধাদের গুলিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ডুবে যায় এবং লঞ্চে অবস্থানকারী পাকসেনাদের কয়েকজন সাঁতার কেটে অন্য পাড়ে উঠে পালাতে সক্ষম হয়। এই লঞ্চে পাকসেনাদের অন্তত ৭০/৮০ জন বেসামরিক লোক ও ছিল। হাবিলদার গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধারা লঞ্চ থে অনেক অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ উদ্ধার করে। এদিন বিকালে ৫ টায় পাকবাহিনীর একটি হেলিকাপটার তাদের এই লঞ্চটি এবং লোকজনের খবরাখবর নেওয়ার জন্য ঐ এলাকায় অনেক ঘুরাঘুরি করে কিন্তু কন খবর না পেয়ে হেলিকাপটার ফেরত চলে যায়। এ আক্রমণ প্রায় এক থেকে দেড় ঘণ্টা ধরে চলে এবং পার্শ্ববর্তী সমস্ত এলাকার স্থানীয় লোকজন দূর থেকে তা প্রত্যক্ষ করে। পাকবাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করতে দেখে স্থানীয় লোকদের মনোবল বেড়ে যায়। এই এলাকার লোকজনের কাছে হাবিলদার গিয়াস উদ্দিন পরিচিত হন কিংবদন্তীর নায়কে।
[১৮] আবুল কাসেম হৃদয়

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!