You dont have javascript enabled! Please enable it! রশিদপুর এলাকায় ব্রিজ ধ্বংস ও রেললাইন বিচ্ছিন্নকরণ, সিলেট - সংগ্রামের নোটবুক

রশিদপুর এলাকায় ব্রিজ ধ্বংস ও রেললাইন বিচ্ছিন্নকরণ, সিলেট

পাকিস্তানী সেনাবাহিনী শায়েস্তাগঞ্জ সিলেট রেল লাইনের শায়েস্তাগঞ্জ শ্রীমঙ্গলে সেকশনটিকে তাদের মালামাল আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার করত। রেল যোগাযোগ যাতে বন্ধ হয়ে যায়, মুক্তিযোদ্ধারা ঐ রেল পথটি বিচ্ছিন্ন করবার পরিকল্পনা করে। শায়েস্তাগঞ্জ শ্রীমঙ্গল সড়কটিতে ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধারা ২/১টি আক্রমণ করে পাকিস্তানীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেছেন। তারা আবার করাঙ্গী রেলওয়ে ব্রিজটি নতুনভাবে তৈরি করে সিলেটের সাথে রেল সংযোগ পুনঃস্থাপন করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এবাদু রহমান ও বামেশ রঞ্জন ভট্টচার্য স্থানটি রেকি করেন। রশিদপুর রেলস্টেশ্নের দেড় কিলোমিটার পূর্ব দিকে একটি ছোট্ট ব্রিজ (কালভার্ট) নির্ধারণ করে চাটপাড়া তরফদার বাড়িতে চলে আসেন রাতের মধ্যেই। পরের দিন আগস্ট মাসের ২৭ তারিখ সাব সেক্টর কমান্ডার এজাজ আহমদের অনুমতি নিয়ে আনিছুল বারী চৌধুরীর নেতৃতে বামেশ রঞ্জন ভট্টাচার্য, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, সৈয়দ হাবিবুর রহমান, মোহাম্মদ ফিরোজ, এবাদুর রহমান, সাধন শীল, অরবিন্দ চন্দ্র, নূর মিয়া, মতি মাঝি, নিপেন তন্তবাই, দুলাল গুজরাট, হগুদেব বর্মা প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধার দলটি শুধু ডিনামাইট দিয়ে ব্রিজটি উড়িয়ে দেয়। সাথে সাথে রেললাইনের একটি বিরাট অংশ উড়ে যায়। প্রচণ্ড শব্দে ডিনামাইট বিস্ফোরিত হলে প্রায় মিনিট খানেক সময় রেল লাইনের পাথর উপর হতে শিলা-বৃষ্টির ন্যায় নিক্ষেপ হতে লাগল। বুলেট গতিসম একটি পাথর মুক্তিযোদ্ধা ফিরোজের হাঁটুতে আঘাত হানলে সে একটি চিৎকারের পর নিস্তেজ হয়ে যায়। সতীর্থরা প্রবল রক্তক্ষরণ অবস্থায় তাকে কাঁধে করে ৩ কিলোমিটার জায়গা অতিক্রম করে এনাদির রহমানের পরিচিত টিপরা পল্লীতে নিয়ে যায়। টিপরা পল্লীর লোকজন বিস্ফোরণের শব্দ শুনে এতই আতংকিত ছিল যে, প্রত্যেক নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করছিল। অনেক ডাকাডাকির পর তাদের একজন ঘরের বাইরে এল। তাঁর নিকট আমরা এক খণ্ড তক্তা, দড়ি ও মজবুত এক খণ্ড বাঁশ সাহায্য চাইলে প্রথমে এগুলো দিয়ে অস্বীকৃতি জানায়। পরে মুক্তিযোদ্ধা জানতে পেরে আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে পাড়ার অন্যান্য লোককে তাদের নিজ ভাষায় ডেকী জড়ো করে। সহযোগী হগু দেব বার্মা এ বাপারে অগ্রণী ভুমিকা রাখে। সল্প সময়ের মদ্ধেই একটি স্ট্রেচার তারা বেঁধে ফেলল। আহত ফিরোজ ভাইয়ের রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছে না দেখে তারাই ভেষজ চিকিৎসা প্রদান করতে লাগল। ক্ষতস্থানে পাহাড়ি লতাপাতা দিয়ে ব্যান্দেজ করে দেয়। স্ট্রেচারে একটি কাঁথা বিছিয়ে শুইয়ে দিয়ে এগিয়ে দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করল। নিরাপত্তাজনিত কারণে তাদের থেকে বিদায় নেয় মুক্তিযোদ্ধারা। যদি টিপরারা অবাঙালী তবুও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের আন্তরিকতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার সপক্ষে তাদের সমর্থন থাকার একটি উদাহারণ।
[৬৩] মাহফুজুর রহমান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত