You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.12.13 | রহনপুর হানাদার মুক্ত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ - সংগ্রামের নোটবুক

রহনপুর হানাদার মুক্ত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

দীর্ঘ ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে ব্যাপক গণহত্যাম ধর্ষণ, লুন্ঠন, জ্বালাও- পোড়াও করে শেষ পর্যন্ত হানাদার বাহিনী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে নাস্তানাবুদ হয়ে ঘায়েল হয়ে পড়ে। তারা এদেশিয় আজ্ঞাবহ দালাল, পিস কমিটি, রাজাকার, আল-বদর, আল-সামস, সিএফ বাহিনীর ওপর ভর করে মানবতার নিষ্ঠুরতম ধংস্লীলা চালিয়ে জীবন প্রবাহে শ্বাস্রুদ্ধকর অবস্থার অবস্থার সৃষ্টি করেও এদেশের বীর সন্তানদের অবদমিত করতে পারেনি। পক্ষান্তরে মুক্তিবাহিনীর কঠোর প্রতিরোধের মুখে হঠকারী পাকি সামরিক শাসকদের আজ্ঞাবহ সেনাবাহিনীর তেজ স্তিমিত হয়ে পড়ে। অবশেষে শ্রেষ্ঠ সেনাবাহিনীর দাবীদার পাকিফৌজ মেষশাওকদের মতো লেজ গুটিয়ে রণক্ষেত্র পরিত্যাগ করে এবং রহনপুর অস্থায়ী সেনাছাউনি ছেড়ে রাতের অন্ধকারে পালাতে বাদ্ধ হয়। ১৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে মাল-সাম্নে ট্রেনে চেপে হানাদার বাহিনী লজ্জার মাথা খেয়ে অন্ধকারের মধ্যে পেছনে পলায়ন করে। কাশিয়ারবাড়ি ডিফেন্স থেকে মুক্তিবাহিনীর পলায়ন পাকবাহিনীর ট্রেনের শব্দ শুনতে পান। মুক্তিযোদ্ধারা ধারণা করেন যে, পাকবাহিনীর অতিরিক্ত সেনা সমাবেশ ও রশদ কিংবা তাদের অন্যান্য মালামাল আমদানি হচ্ছে। নতুবা তাদের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ চলছে। মুক্তিবাহিনী ট্রেনের শব্দ শুনে রহনপুর রেল ষ্টেশনে কাশিয়াবাড়ি ডিফেন্স থেকে ৮১ এমএম মর্টারের একটি শেল নিক্ষেপ করে। কিন্ত তারা লক্ষ্যভেদ করেনি। পরে মুক্তিযোদ্ধারা স্থানীয় লোকজনের কাছে জানতে পারেন যে, মুক্তিবাহিনীর ছোড়া শেলের আঘাত থেকে অল্পের জন্য পলায়নপর পাকবাহিনীর ট্রেনটি রক্ষা পায়। অন্তত এক মূহূর্ত আগে শেল নিক্ষেপ করা গেলে এবং লক্ষ্য অর্জিত হলে শেলের আঘাতে ট্রেনটিতে পাকি হানাদাররা সমূলে নিপাত যেত। এই দিন রাতে রহনপুর হানাদার মুক্ত হয় এবং পরদিন মুক্তিবাহিনীর গোমস্তাপুরেরর নিয়ন্ত্রণ গ্রহন করে। ১৪ দিসদেম্বর প্রত্যুষে মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ পান যে, হানাদার বাহিনী রাতে লেজ গুতিয়ে ত্রেনে চেপে লাগিয়ে গেছে। মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা এই খবর পেয়ে অগ্রসর হন। রহনপুর অভিমুখে রওয়ানা হবার সময় সকাল পৌনে ১০:০০ টায় মহানন্দা নদীর কাঞ্চনতলা ঘাটে (পানির পশ্চিম কিনারায়) হানাদার বাহিনীর পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণের বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরউদ্দিন প্রধানের এক পা হাঁটু পর্যন্ত উড়ে যায়। তাঁর পিতার নাম ওসমান গনি। ঠিকানা-গ্রামঃ এনায়েতপুর, উপজেলাঃ সিদ্ধিরগঞ্জ, জেলাঃ নারায়ণগঞ্জ। যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুদ্দিন প্রধানের কার্ড নং-১৬৬৮ ,আলদহ নিয়ে গিয়ে তাঁর চিকিৎসা করানো হয়।
[৫৭৪] মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত