You dont have javascript enabled! Please enable it!

রাখালি ব্রিজ-আরকান সড়ক অপারেশন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর উপর অবস্থিত কালুরঘাট ব্রিজ থেকে চট্টগ্রাম- কক্সবাজার সড়ক দিয়ে ৪ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে রাখালি ব্রিজের অবস্থান। রাখালি ব্রিজ থেকে ৪০০ গজ দক্ষিণে মিলিটারি পোল অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দিকে পাকবাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে এই ব্রিজ মুক্তিযোদ্ধারা ১০ ডিসেম্বর, ১৯৭১ ধ্বংস করে। এই পূর্বে অপারেশন সাকসেস করার জন্য গ্রুপ কমান্ডার আহম্মদ নবী, আসলাম, মহসীন ও পুলিশের হাবিলদার এ.বি সিদ্দিক মিলে এই অপারেশনের পরিকল্পনা করে। এতে ১৬ জনের গেরিলাদল দুটি গ্রুপে ভাগ করে অপারেশনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ১০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টার দিকে গ্রুপ কমান্ডার আসলামের নেতৃত্বে এ. কে. এম. জয়নাল আবেদিন, নায়েক সাজ্জাদ, খোকন নন্দী, চন্দন লালা ও রঞ্জিতসহ ৮ জনের ১ম গেরিলাদল পাঁচারিয়া স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অস্থায়ী গেরিলা শেল্টার থেকে বের হয়ে আরাকান সড়কে এসে দাঁড়ান। এ সময় আরাকান সড়ক থেকে উত্তর দিকগামীএ কটি প্রাইভেট কার থামিয়ে তার চালক কে অনুরোধ করলে তিনি ৪ জন, ৪ জন করে দুই বারে মোট ৮ জন গেরিলাকে ওই ব্রিজের দক্ষিণ পাশে পৌঁছে দেন। আসলাম গ্রুপের গেরিলা সদস্যরা ব্রিজের কাছে পৌঁছে দেখতে পান পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী কমান্ডার আবুল হোসেনের নেতৃত্বে ৮ জনের একটি গেরিলা দল আগে থেকেই রাখালি ব্রিজের উত্তর পূর্ব কোনোয় রাস্তার নিচে ধান ক্ষেতে নিরাপদ দূরত্বে পজিশন নিয়ে আছে। কমান্ডার আসলাম গ্রুপ এর সদস্যরা অপারেশনে যাওয়ার সময় ব্রিজ ধ্বংসের জন্যপ্রায় ১০কেজি এক্সপ্লোসিভ সহ প্রয়োজনীয় উপকরণ সঙ্গে নিয়ে যান। এছাড়া তারা একটি এলএমজি, দুটি এসএল আর, একটি স্টেনগান ও হ্যান্ড গ্রেনেড নিয়ে যান। ব্রিজের কাছে কমান্ডার আসলাম, রঞ্জিত, চন্দনবালা ও জয়নাল আবেদিন এক্রপ্লোসিভ নিয়ে দ্রুত ব্রিজের উপর চলে যান এবং ব্রিজের দক্ষিণ পাশের পাটাতনের উপর ১০ কেজি এক্রপ্লোসিভ লম্বালম্বি করে বিছাতে শুরু করেন। ১ নম্বর দলের ( আসলাম গ্রুপ) অন্য সদস্যরা ব্রিজের দক্ষিণ দিকে কাভার করে। ২ নম্বর দলের সদস্যরা উত্তর দিকের কাভারে থাকে।ইতোমধ্যে কমান্ডার আসলাম, রঞ্জিত, চন্দন লালা ও জয়নাল আবেদিন ব্রিজের উপর এক্রপ্লোসিভ বিছানো শেষ করে তাতে ফিউজ ও ডেটোনেটর লাগিয়ে কমান্ডার আসলামের সাথে থাকা তারের এবং বিস্ফোরক থেকে আনা তারের দুই মাথা একত্রে সংযুক্তকরে প্রধান তারকে ব্রিজের দক্ষিণে ৮/১০ গজ দূরে রাস্তার ঢালে টেনে নিয়ে যান। উভয় গ্রুপের গেরিলারা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাবার পর কমান্ডার আসলাম তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যান। আগুন লাগার দেড় থেকে দুই মিনিটের মাথায় প্রচণ্ড বিস্ফোরনে ব্রিজের দক্ষিণ অংশ ধ্বসে নিচে পরে যায়।সাফল্যজনক ভাবে গেরিলা যোদ্ধাগণরা খাল ব্রিজ ধ্বংস করার ফলে ২/৩ দিন যাবত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় পাকবাহিনীর চালাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। অবশ্য ব্রিজ ধ্বংস করার পর পাকসেনারা এর আসে পাশের দোকানঘরও বসত বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং দোকানপাট লুটপাট করে।
[৫৯৭] কে এম আহসান কবীর

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!