রঘুনাথপুরের যুদ্ধ, চাঁদপুর
[প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা]
চাঁদপুরের রঘুনাথপুরের যুদ্ধে জনাব মুজিব ছিলেন একজন প্রত্যক্ষদর্শী। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী- “স্থানটি রঘুনাথপুর বাজার কচুয়া। ৮ সেপ্টম্বর আমার লোকজন ভেবেছিল মুক্তাঞ্চলে পাকবাহিনী বা রাজকার এখানে সহজে প্রবেশ করবে না। বাজারে আসার উদ্দেশ্য আমার কয়েকজন সহযোদ্ধা ছবি তুলবে। তারা ইচ্ছা করেই কোন ডিফেন্স ছাড়া বাজারে অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে। তাদের আগমনের সংবাদ কীভাবে স্থানীয় দালাল রাজাকারদের জানায়। হঠাৎ উল্টা পথে বাজারের পিছন দিয়ে ঢুকে রাজাকাররা আমার সহযোদ্ধাদের ঘিরে ফেলে। তারা দেরি না করে সরাসরি আক্রমণ করে। সেখানে সাথে সাথে পজিশন নিয়ে আমার লোকজন তাদের উপর পাল্টা আক্রমণ করে। একসময় রাজাকারদের প্রতিরোধের দুর্গ ভেঙ্গে আমার লোকজন যুদ্ধ করতে করতে একদিক দিয়ে বেরিয়ে নিরাপদ স্থানে চলে আসে। কিন্তু পজিশন থেকে উঠে আসতে পারল না মতিন। সে একাই রাজাকারদের সাথে লড়ে যাচ্ছে। এক সময় রাজাকারের দল মতিনকে ঘিরে ফেলে। মতিন যখন দেখল তাঁর বন্ধুরা কেউ পজিশন নেই তখন তাঁর গুলি প্রায় শেষ হয়ে গেছে। এখন সে ঝুঁকিওঁ নিতে পারছে না। রাজাকাররা মতিনকে পজিশনেই গুলি করে। তাঁর দেহ বেঈমানরা গুলির পর গুলি করে ঝাঝরা করে ফেলে পরে আমার লোকজন চেষ্টা করে রাজাকারদের প্রতিহত করে মতিনের লাশটি রেখে দিতে। মূল সমস্যা হল গোলাবারুদ শেষ গিয়েছে। ঘাতকরা তাঁর লাশটি সাথে করে নিয়ে যায়। আমার গ্রুপের প্রথম শহীদ আবদুল মতিন। সে শহীদ হয়ে নিজের রক্ত দিয়ে স্বাধীনতার শুভ সূচনা করে। মতিনের গ্রামের বাড়ি উয়ারুকের কাছে রাজাপুর। আমার স্মৃতিতে শহীদ আঃ মতিন চি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। উল্লেখ করা যায় এই যুদ্ধে কয়েকজন নিরীহ গ্রামবাসী মারা যান। তারা হলেন, ১) জনাব সামছুল হক, ২) জনাব আলী, ৩) মোয়াজ্জেম হোসেন, ৪) জনাব সামছুল হক, কালাচৌ উত্তর ইউনিয়ন।
[৫০] ডা. মো দেলোয়ার হোসেন খান
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত