You dont have javascript enabled! Please enable it!

রঘুনাথপুরের ব্রিজ ধ্বংস, চাঁদপুর

লুৎফুর রহমান লালার নেতৃত্বে একটি গেরিলা দল পহেলা জুলাই কোমরপুরের শান্তি কমিটির সদস্য আফতার বিশ্বাস ও লুৎফর রহমানকে ধরে নিয়ে যাবার জন্য আসে। এ দলে ছিল কোমরপুরে হারুন মতিয়ার ফকির মোহাম্মদ ইবাদত আমঝুপির মাহতাব, তমছের এবং আরও ৫ জন মুক্তিযোদ্ধা। কিন্তু এঁদের আগমন খবর জেনে ফেলার কারণে নাটুদা ক্যাম্প থেকে পাকসেনার এক বিশাল বহর এসে রাত তিনটার দিকে সারা গ্রামে ঘিরে ফেলে। মুক্তিযোদ্ধারা নিরাপদ জায়গায় অস্ত্র লুকিয়ে রেখে ভোরবেলা কেউ লাঙল কাঁধে, কেউ নিড়ানী হাতে সাধারণ কৃষকের ছদ্মবেশে গ্রামের বাইরে চলে আসে। পাকসেনারা গ্রামের সাধারণ মানুষের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়, কিন্তু কেউ মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য ফাঁস করেনি। এ দিন দীনদত্ত ব্রিজ ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে বেতাই এ্যাকশন ক্যাম্প থেকে ২২ জন গেরিলা যোদ্ধাকে সঙ্গে নিয়ে রওনা হয় আব্দুর রউফ। তার সঙ্গে ছিল জতারপুরের আলাউদ্দিন, লুৎফুর, মোনাখালির আখের, মঠমুড়ার মহসিন মেহেরপুরে ইদ্রিস, ঝাউবাড়িয়ার রশিদ, গিয়াস, গোভীপুরের আজিজুল, কাইউম প্রমুখ মুক্তিযোদ্ধা।
রাত আটটায় মোনাখালি ঘাট পার হবার সময় রাজাকাররা টের পেয়ে যায়। তারা কিছু না বলে, শুধু মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দেখে পাকসেনাদের খবর দেবার জন্য ফিরে যেতে উদ্যত হয়। এমন সময় মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার (যশোর) হঠাৎ রাজাকারদের উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ করে। এরপর রাজাকার ও পাকসেনাদের অবিরাম গুলি চলতে থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা দু’ভাগে ভাগ হয়ে পজিশনে চলে যায়। কাইউম, আলাউদ্দিন এবং গিয়াসউদ্দীন ইসামপুর আশ্রয় নিতে গিয়ে আরেক বিপদে পড়ে। নাটুদা ক্যাম্পের পাকসেনারা কোমরপুর এবং ইসলামপুর আগেই ঘিরে রেখেছিল। ফলে এই তিন মুক্তিযোদ্ধা ইসলামপুরে নয়, পাশেই দুনির বিলে আশ্রয় নেয়। ৪ ঘন্টা পানিতে গলা ডুবিয়ে থাকার পর পুন্তপুর গ্রামের সীমান্তে অন্যান্য বিচ্ছিন্ন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে। মোনাখালিতে বিচ্ছিন্ন যাওয়া অন্য একটি গ্রুপ ( আখের, ইদ্রিস, লুৎফুর, রশিদ, আনোয়ারসহ ৯জন) কোলার বিল পার হয়ে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী মাঠে মাঠে রঘুনাথপুরে পৌঁছে যায়। পূর্বেই সেখানে পৌঁছেছে রউফ, আনোয়ার এবং আরো দুজন। মোট ১৩ জন ২টি নৌকাযোগে দীনদত্ত রওনা হয়। কিন্তু একটি নৌকা ডুবে যাওয়ায় ৬ জনের যাওয়া হলো না। অবশিষ্ট ৭ জনের মধ্যে ৩ জন প্রটেকশন ডিউটিতে থাকলো। ইদ্রিস, রউফ এবং আনোয়ার ব্রিজের নিচে গিয়ে অত্যন্ত সাবধানে তিন জায়গায় তিনটি ডিনামাইট সেট করে অপেক্ষমান নৌকায় চলে আসে সংযোগ তাঁর টেনে নিয়ে। তারপর সেফটি ফিউজে আগুন লাগানোর সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটে। ব্রিজের একদিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। পাকসেনাদের গাড়ি পারাপার ব্যাবহৃত হয়।
[১০৩] রফিকুর রশীদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!