You dont have javascript enabled! Please enable it!

যশোর সেনানিবাসে প্রাথমিক প্রতিরোধ যুদ্ধ

যশোর সেনানিবাস যশোর শহরের পশ্চিমে অবস্থিত। এর উত্তরে যশোর ঝিনাইদহ মহাসড়ক, দক্ষিণে যশোর বেনাপোল রেললাইন ও সড়ক, পশ্চিমে বিমানবাহিনীর রানওয়ে এবং পূর্বে যশোর-খুলনা রেললাইন। সেনানিবাসে চারদিকের সমতল ও নিচু ভূমি-গ্রাম এলাকায় ঘেরা। যশোর সেনানিবাসে ১৯৭১ সালের মার্চের শেষ সপ্তাহে ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে পাকবাহিনীর প্রথম প্রতিরোধ যুদ্ধ সংঘটিত হয়-যা কিন বাঙালি সৈনিকদের বীরত্ব ও দেশমাতৃকার তরে জীবনদানের অন্যতম উজ্জ্বল নিদর্শন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তারিখে ১০৭ ব্রিগেডের একমাত্র বাঙালি ইউনিট’ ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’কে সেনানিবাসে ফেরত আসতে নির্দেশ করা হয়। সে সময় ইউনিটটি চৌগাছায় শীতকালীন যৌথ প্রশিক্ষণে নিয়োজিত ছিল। ৪০০ সৈন্যের এই ইউনিটটির অধিনায়ক ছিলেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল জলিল এবং আরও তিনজন বাঙালি অফিসার-লেফটেন্যান্ট হাফিজ, সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট আনোয়ার ও সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট সফিও ছিলেন এই ইউনিটটিতে। নির্দেশ অনুযয়ী ২৯ মার্চ দিনের শেষে ১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেনানিবাসে ফেরত আসে। ৩০ মার্চ সকাল সাতটায় ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার দুররানী ১ ইস্ট বেঙ্গলে এসে অধিনায়ককে ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্টের নিকট কোয়ার্টার গার্ড (অস্ত্রগার) হস্তান্তর করার আদেশ দেন। এদিকে বাঙালি সাহসী সৈনিকরা পরিস্থিতি অনুমান করতে পেরে কোত ও ম্যাগাজিন ভেঙ্গে অস্ত্র-গোলাবারুদ হস্তগত করে নেয়। ব্রিগেডিয়ার দুরুরানী এ অবস্থায় পরিপেক্ষিতে ২৪ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারিকে ১ ইস্ট বেঙ্গলের অবস্থানের ওপর অনবরত শেলিং করার নির্দেশ দেন এবং একই সঙ্গে ভারী মেশিনগান ও মর্টার ফায়ার চালাতে থাকে। সেনানিবাস মুহূর্তেই যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত। ১ ইস্ট বেঙ্গল অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পাল্টা ফায়ার দিতে থাকে। সংখ্যায় ও শক্তিতে বেশি হওয়া সত্ত্বেও দখলদার বাহিনী ১ ইস্ট বেঙ্গলকে দমাতে ব্যর্থ। তাঁরা পরপর কয়েকবার তিনদিক থেকে আক্রমণ করেও ব্যর্থ হয়। যুদ্ধ চলাকালে কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেজাউল জলিল বিদ্রোহ অংশগ্রহণ করতে রাজি না হয়ে অফিসে বসে থাকেন, ফলে লেফোটেন্যান্ট হাজিফ এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন। দুপুরে অ্যামুনেশন প্রায় শেষের পথে পৌছাল লেফটেন্যান্ট হাফিজ তার সৈন্যদের নিয়ে সেনানিবাসে এলাকা ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নেন।
যশোর সেনানিবাসে এ প্রতিরোধ যুদ্ধে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট আনোয়ার হোসেন ও আরও ৪০ জন বাঙালি সেনা শহীদ হন। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট আনোয়ার হোসেন যুদ্ধে শাহাদৎ বরণকারী প্রথম অফিসার। অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাঁকে বীর-উত্তম উপাধীতে ভূষিত করে। অপরদিকে এ যুদ্ধে দখলতার বাহিনীর ৪০ জন সৈন্য নিহত হয়।

[৫৭] ইকবাল জাফর খন্দকার

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!