You dont have javascript enabled! Please enable it!

যাত্রাপুর বাজার অ্যাম্বুশ, কুড়িগ্রাম

সৈয়দ মনসুর আলীর অধীনে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি কোম্পানি ছিল। সে কোম্পানি পরিচালনা করেছেন নিজের মতো করে। কিন্তু একটা পর্যায়ে অন্য একটি কোম্পানিরও দায়িত্ব বর্তে তার ওপর। আর আব-সেক্টর কমান্ডারের নির্দেশমতো নিজের অধীনস্থ কোম্পানি দুটি মোতায়েন করেন বুড়াবুড়ি ও যাত্রাপুর নামক দুটি স্থানে। নাগেশ্বরী থানার মাদারগঞ্জে প্রথম ক্যাম্প করছিলেন সৈয়দ মনসুর আলী। তারপর সেখান থেকে অপারেশন পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
যাত্রাপুর বাজারে প্রায়ই আসত পাকিস্তানী হানাদার সৈন্যরা। বাজারে এবং আশপাশের গ্রামগুলোতে ঢুকে অত্যাচার চালাত বাসিন্দাদের ওপর। হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে সেখানেও। লুটপাট করেছে জনগণ সম্পদ। তারপর মা- বোনদের ধরে নিয়ে গেছে ক্যাম্পে। নিরীহ-নিরস্ত্র জনতার ওপর কত রকমের অত্যাচার যে করেছে তার বর্ণনা দেয়া কঠিন। এ ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন স্থানীয় জনগণকে অতিষ্ঠ করে তোলে। তারাও মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে গিয়ে জানায় ফরিয়াদ। প্রতিকার চায় অন্যায়-অবিচারের। ফলে মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানীদের রেইড করার পরিকল্পনা করতে থাকে।
৯ নভেম্বর ১৯৭১। যাত্রাপুর বাজারে অ্যাম্বুশ করে থাকে সৈয়দ মনসুর আলীর মুক্তি গ্রুপ। সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে অপেক্ষমাণ তারা হানাদার সৈন্যদের। হয়তো আগে থেকে কিছু তথ্য সংগৃহীত হয়েছিল যে পাক সেনাবাহিনীর একটি গ্রুপ আসছে যাত্রাপুর বাজারে। এলো তারা একটা পর্যায়ে। তবে খুব বেশি সেনাসদস্য নয়। মাত্র তিনজন পাকিস্তানী সৈন্য। সাথে ছয়জন রাজকার। আগে- পিছে স্কট করে জামায়াত সৃষ্ট রাজাকাররা নিয়ে আসে তাদের। যে কোনো রাষ্ট্র বা সেনাপ্রধান। নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে মাত্রই বাংলার বীরসন্তানরা ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের ওপর। পাল্টা আক্রমণ করার কোনো সুযোগই পায় নি। পাকিস্তানীরা-এর আগেই খতম হয় তারা সবাই। তিন পাকসেনা এবং ছয় রাজাকারের সবাই মারা যায় সেখানে। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। তাছাড়া মুক্তিসেনারা চারদিকে এগিয়ে আসছে সামনে। এতে ভীতসস্ত্রস্ত হয়ে ওঠে সাধারণ মানুষ। বের হয়ে আসে তারা ঘর থেকে। সে যে’যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। নির্দেশের বাস্তবায়ন করতে চায় গ্রামবাসী। লাঠিসোটা নিয়ে ছুটে যায় রাজকার ক্যাম্পের দিকে। কেঁপে ওঠে জাতিদ্রোহীদের অন্তরাত্মা। অবশেষে সৈয়দ মনসুর আলীর কাছে এসে আত্মসমর্পণ করে ১৫০ জন রাজকার।
মুক্তিবাহিনী এ সাফল্যের সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। কাঁপন সৃষ্টি করা হয় রাজাকার-আল বদরের মনে। ততদিনে এলাকার জামায়াত-মুসলিম লীগ নেতারা পালিয়েছে এলাকা ছেড়ে। শান্তি কমিটির সদস্যরাও লাপাত্তা। রাজকার বাহিনীর মূল সংগঠক জামায়াত নেতারা আত্মগোপন করায় দিশেহারা বাহিনী। যোগদাহ কুরিগ্রাম থানারই একটি ইউনিয়ন। সেখানে জমায়েত হয়েছিল তিন’শ রাজাকার। তারা হাতিয়ারসহ যাত্রা করে যাত্রাপুরের দিকে। সেখানে সৈয়দ মনসুর আলীর কাছে হাতিয়ার তুলে ধরে আত্মসমর্পণ করে।
[৪৭] তাজুল মোহাম্মদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!