You dont have javascript enabled! Please enable it!

যুদ্ধবন্দী/যুদ্ধবন্দীদের বিচার

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর প্রায় ৯৩,০০০ সৈন্য ঢাকার রমনা রেসকোর্সে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনীর যৌথ কমান্ড এর নিকট আত্মসমর্পণ করে। আত্মসমর্পণে অন্তর্ভুক্ত ছিল পাকিস্তানের সকল আধা-সামরিক বাহিনী ও অসামরিক, সশস্ত্র বাহিনীসহ স্থল, বিমান ও নৌ বাহিনীর সকল সদস্য। আত্মসমর্পণের দলিলে আনুষ্ঠানিক নিশ্চয়তা প্রদান করা হয় যে, আত্মসমর্পণকারী সকল ব্যক্তির সঙ্গে জেনেভ কনভেনশনের বিধান অনুযায়ী মর্যাদাপূর্ণ ও সম্মানজনক আচরণ করা হবে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। পরবর্তীকালে সকল যুদ্ধবন্দীকে ভারতীয় হেফাজতে নিয়ে যাওয়া হয়।
আত্মসমর্পণের পরপরই বাংলাদেশ সরকার মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগে যুদ্ধবন্দীদের বিচার দাবি করে। এ পর্যায়ে ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীকে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগে বিচারের জন্য শনাক্ত করা হয়। তবে ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত সিমলা চুক্তি অনুযায়ী যুদ্ধবন্দীদের নিরাপদে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর প্রস্তাব পেশ করে। যদিও বাংলাদেশ ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীর বিচারের জোর দাবি জানাতে থাকে। প্রস্তাবিত বিচারের বিরুদ্ধে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক আদালতে একটি আনুষ্ঠানিক আবেদনও পেশ করে। এসব ঘটনার পটিভূমিতে ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিনিধিরা ১৯৭৩ সালের জুলাই-আগষ্ট মাকসে ইসলামাবাদ ও দিল্লিতে আরেকটি চুক্তিতে সাক্ষরের জন্য পুনরায় বৈঠকে মিলিত হন। দুই দেশের মধ্যে সম্পাদিত শেষ চুক্তি অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট গুরুতর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত ১৯৫ জন ব্যতীত বাকি সকল যুদ্ধবন্দীকে পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা চূড়ান্ত হয়। কিন্ত ১৯৭৪ সালে লাহোরে ইসলামী ঐক্য সংস্থার শীর্ষ সম্মেলন এবং পাকিস্তানের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দানের পর তিনটি দেশের প্রতিনিধিগণ নয়াদিল্লিতে পুনরায় বৈঠকে মিলিত হন এবং দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার সার্থে বাংলাদেশকে ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দীর বিচারের দাবি প্রত্যাহারে রাজি করানো হয়।
রিয়াজ আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!