You dont have javascript enabled! Please enable it!

মেহেরপুরের যুদ্ধ-২

ভারতের আউদবাড়ি কাম্প থেকে ২০ অক্টোবর ভোরে ১৫জন মুক্তিযোদ্ধা গারাবাড়িয়া-কাথুলি এলাকায় পাকসেনারা অবস্থান পর্যবেক্ষণ করতে আসেন। বাংকারে পাকসেনা দেখে ক্রেলিং করে মুক্তিযোদ্ধারা এসে হিতিম্পাড়া ওঁ কুতুবপাড়া মাঝখানের মাঠে পাকা কবরের পাশে পজিশন নেয়। ঝাউবাড়িয়ার মান্না, জলিল, রাজ্জাক, খোদা বক্স, সিরাজ, রাস্তার পশ্চিমে; কাশেম, হায়াৎ, গিয়াস, আজিজুল পূর্বে। কবরের গাঁয়ে এলএমজি সেট করে রশিদ বাংকারের ওপরের পাকসেনাদের উদ্দেশ্যে ব্রাশ ফায়ার করে। সঙ্গে সঙ্গে দু’জন পাকসেনা খতম হয়। কিন্ত বাংকারের পাশেই আমগাছের ওপরে ছিল দু’জন ওপি। তারা গুলিবর্ষণ শুরু করলে সংকট দেখা দেয়। কোনোমতে ক্রেলিং করে মুক্তিযোদ্ধারা রাস্তার ঢালুতে পিছিয়ে আসে। ের মধ্যে মেহেরপুর থেকে ২ট্রাক পাকসেনা গিয়ে বেপরোয়া গুলি চালায়। নৈমদ্দির বাড়ি থেকে ২ ইঞ্চি মর্টার শেল নিক্ষেপ করে। পায়ে গুলি লেগে হায়াত এবং হাতে শেলের বারুদ পড়ে আজিজুল আহত হয়। খোদা বক্স এবং সিরাজ কবরের মদ্ধেই লুকিয়ে থাকে। আহত দু’জনকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দল ক্রোলিং করতে থাকে করতে পিছিয়ে আসে। মূলতঃ অক্তবরের ২০ তারিখ ত্রহেকে মেহেরপুরের পশ্চিমে ভৈরবের তীরবর্তী গ্রামগুলোতে এসে মুক্তিবাহিনীর বীর যোদ্ধারা প্রায় প্রতিদিনই পাকসেনা অবস্থানের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রাখে। এ সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর গোলান্দাজ সহযোগিতাও পাওয়া যায়। ফলে আক্রমণের তীব্রতার মুখে অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ নাগাদ মেহেরপুরের পশ্চিম সীমান্ত থেকে পাক বাহিনীর লেজ গুটিয়ে নিতে হয়। এ সম্পর্কে ২২ অক্টোবর ১৯৭১ তারিখের যুগান্তরে লেখা হয়ঃ কৃষ্ণনগর, ২১শে অক্টোবর (পিটিয়াই) কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর শহরের বাইরে কাথুরি থেকে কামদেবপুর পর্যন্ত এলাকা জুরে আজ সন্ধ্যা পৌনে সাতটায় মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে খান সেনাদের প্রচণ্ড লড়াই শুরু হয়েছে। বার্তা সংস্থা ইউএনআই-এর বরাত দিয়ে ঐ একই পত্রিকায় ২৪ অক্টোবর লেখা হয়ঃ গত ২১ শে অক্টোবর মেহেরপুরের নিকট কামদেবপুর এবং কালাচাদপুরে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে একজন ক্যাপ্টেনসহ ছ’জন পাকিস্তানী সৈন্য নিহত হয়েছে। মুক্তিবাহিনী গেরিলারা কুষ্টিয়া জেলার জীবননগর এবং গাংনী এলাকায় তার সরিয়ে এবং খাম্বা তুলে ফেলে টেলি যোগাযোগে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে। সত্যিকারের কথায় অক্টোবরের শেষ সপ্তাহ থেকে [আকিস্তান সেনাবাহিনী মেহেরপুরের সীমান্ত এলাকায় কিংবা গ্রামঞ্চলে চলাফেরা বা তৎপরতা একবারেই কমিয়ে দেয়। কাম্প ছেড়ে বেরুলেই মুক্তিবাহিনীর পেতে রাখা মাইন বিস্ফোরণের অথবা চোরাগোপ্তা আক্রমণের আশঙ্কা। মুক্তিযোদ্ধারা ভারতীয় আশ্রয় ছেড়ে এ সময়ে বাংলাদেশের মুক্ত গ্রামঞ্চলে তাদের কাম্প প্রতিষ্ঠা করে। অবরুদ্ধ জনসাধারণ প্রত্যেক বাড়িতে বাড়িতে মুক্তিযোদ্ধার আহার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। মুক্তিযোদ্ধারা হাতের কাছে পাকসেনা না পেয়ে গ্রামে গ্রামের রাজাকারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। ফলে কোথাও কোথাও রাজাকাররা আত্মসমর্পণ করে। যেমন ২৬ অক্টোবর মোনাখালিতে একজন রাজাকার তার রাইফেল ও ৫০ রাউন্ড গুলিসহ আত্মসমর্পণ করে। কিন্তু ২৮ তারিখে গাংনী থানার মিনাপাড়ার রীতিমত সংঘর্ষই হয়ে যায় মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান ও নান্নুর সঙ্গে রাজাকারদের। রাজাকাররা এসেছিল গফুর মণ্ডলের বাড়িতে থানা খেতে। সেখানে দু’জন মুক্তিযোদ্ধাকে দেখে রাইফেল উঁচিয়ে গুলি করতে উদ্যত হয়। প্রচণ্ড শক্তিশালী মুক্তিযোদ্ধা রহমান বগলের নিচে দুই রাজাকারকে ধরে আত্মরক্ষার জন্য ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে রাজাকারের গুলিতেই দুজন রাজকার নিহত হয়। তারপর গণপিটুনিতে আরো দু’জনের মৃত্যু ঘটে। ৩১ অক্টোবরে জোড়াপুকুর থেকে রাইফেলসহ মাদার আলী রাজাকারকে আটক করে মুক্তিবাহিনী। অভিযানে অংশ নেয় মামুনুর রশীদ, নজরুল ইসলাম, মুনতাজ আলী, কামাল উদ্দীন, পাতন আলী, ফকির মোহাম্মদ, আলেহীম, কামরুজ্জামান, কদম আলী।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!