মুক্তিযুদ্ধে এগার সেক্টর
মুক্তিযুদ্ধ সুষ্ঠভাবে পরিচালনার জন্য বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে এবং প্রত্যেক সেক্টরকে একধিক সাব-সেক্টরে বিভক্ত করা হয়। নিন্মে সেক্টর, সা-সেক্টর এবং
কমান্ডারদের নাম দেয়া হলোঃ
এক নম্বর সেক্টর
চট্টগ্রাম-পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা ও নোয়াখলী জেলার মুহূরী নদীর পূর্ব পর্যন্ত এক নম্বর সেক্টর অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম। এক নম্বর ৫টি সাব সেক্টর বিভক্ত ছিল-
সাব সেক্টর: কমান্ডার
ঋষিমুখ: ক্যাপ্টেন শামসুল ইসলাম
শ্রীনগর: ক্যাপ্টেন অলি আহমেদ পরে ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান ও ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমান
মনুঘাট: ক্যাপ্টেন মাহফুজুর রহমান
তবলছড়ি: সুবেদার আলী হোসেন
ডিমগিরী: একজন সুবেদার
সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিল হবিনায়। সেক্টর কমান্ডার হিসাবে মেজর রফিকুল ইসলাম নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। সেক্টরের এ্যাডজুট্যান্ট ছিলেন ক্যাপ্টেন নাজমুল হক। সংসদ সদস্য এম.এ. হান্না, এম.এ. মান্নান, মনসুর, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট সুলতান, হাবিলদার সিরাজুল ইসলাম এফ এফ গেরিলা বাহিনী গঠন এবং অভ্যন্তরে প্রেরণের দায়িত্ব পালন করেন। সেক্টরের নিয়মিত মুক্তিবাহিনীর সংখ্যা ছিল দু’হাজার। তাঁদের মধ্যে ১৪০০ ইপিআর, ২০০ পুলিশ, ৩০০ সেনাবাহিনি এবং ১০০ বিমান ও নৌবাহিনীর সদস্য ছিল। গেরিলা বাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় আট হাজার। এক নম্বর সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর সংখ্যা ছিল প্রায় দশ হাজার। চাদগাজী, হিয়াকুব, করুইয়া, ছাগলনাইয়া, সালিয়া দিঘী ও বেলুনিয়া যুদ্ধে এক নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা কৃতিত্বের পরিচয় দেয়। বেলুনিয়া যুদ্ধে ৪ নভেম্বর ঋষিমুখ সাব সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন শামসুল ইসলাম শহীদ হন।
দু’নম্বর সেক্টর
নোয়াখালী, আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত কুমিল্লা জেলা, সিলেটের হবিগঞ্জ, ঢাকা ও ফরিদপুরের একাংশ নিয়ে দু’নম্বর সেক্টর গঠিত ছিল। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর খালেদ মোশাররফ। এ সেক্টরে নিয়মিত সৈন্য ছিল ৬০০০ এবং ৩৫ হাজার গেরিলা ছিল। নিয়মিত বাহিনীর তিনটি ব্যাটালিয়ন ছিল যা পরবর্তীতে কে ফোর্সে উন্নীত হয়। ৪র্থ, ৯ম, ১০ম ইস্ট বেঙ্গল নিয়ে কে ফোর্স গঠিত হয়।
দু’নম্বর সেক্টর ৬টি সাব সেক্টরে বিভিক্ত ছিল-
১. গঙ্গাসাগর, আখাউড়া ও কসবা সাব-সেক্টর, সেক্টর, সেক্টর কমান্ডার-ক্যাপ্টেন আইনউদ্দিন, অফিসারদের মধ্যে ছিলেন- ক্যাপ্টেন মাহবুব, লেফটেন্যান্ট ফারুক এবং লেফটেন্যান্ট হুমায়ুন কবীর। সাব-সেক্টর কসবা, আখাউড়া, সাইদাবাদ, মুরাদনগর, নবীনগর এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া যুদ্ধে বীরত্বের পরিচয় দেয়।
২. মন্দাবাগ সাব-সেক্টর, কমান্ডার মেজর আব্দুস সালেক চৌধুরী।
৩. সালদা নদী সাব-সেক্টর, কমান্ডার মেজর আব্দুস সালেক চৌধুরী।
৪. মালিগর সাব-সেক্টর, কমান্ডার লেফটেন্যান্ট দিদারুল আলম।
৫. নির্ভয়পুর সাব-সেক্টর, কমান্ডার ক্যাপ্টেন আকবর এবং লেফটেন্যান্ট মাহবুব।
৬. রাজনগর সাব-সেক্টর, গোমতীর সর্ব দক্ষিণে কমান্ডার ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম।
মেজর খালেদ মোশাররফ বিগ্রেডের দায়িত্বে ছিলেন এবং মেজর মতিনের ওপ[অর সেক্টরের দায়িত্বে দেয়া হয়। খালেদ মোশাররফ নামনুসারে এই বিগ্রেডের নামকরণ করা হয় কে ফোর্স। ১৯৭১ সালের ২২ অক্টোবর কসবা যুদ্ধে মেজর খালেদ মোশাররফ গুরুত্বরুপ আহত হলে ‘কে ফোর্সের’ দায়িত্ব দেয়া হয় মেজর সালেকের ওপর। পরে দায়িত্ব দেয়া হয় মেজর হায়দারকে। দু’নম্বর সেক্টরের তৎপরতা জুলাই মাস থেকে শুরু হয়। দু’নম্বর সেক্টর বিলোনিয়া, মন্দাবাগ, সালদা নদীর যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা পাকবাহিনীকে বার বার পর্যুদস্ত করে। এ সকল যুদ্ধে মেজর খালেদ মোশাররফ, ক্যাপ্টেন গাফফর, ক্যাপ্টেন জাফর, ক্যাপ্টেন হায়দার অপূর্ব রণকৌশল প্রদর্শন করেন।
তিন নম্বর সেক্টর
সিলেটের মৌলিভীবাজারে মহকুমার অংশ হবিগঞ্জ মহকুমা ব্রাহ্মণবাড়িয়া মহকুমার অংশ, নারতায়ঙ্গঞ্জ মহুকুমার অংশ এবং কিশোরগঞ্জ মহকুমার অংশ নিয়ে তিন নম্বর সেক্টর গঠিত ছিল। মেজর এম. শফিউল্লাহ তিন নম্বর সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন। তিন নম্বর সেক্টরের হেডকোয়ার্টার ছিল হেজামারাতে। সেক্টরে নভেম্বর পর্যন্ত গেরিলা সংখ্যা দাঁড়ায় ৩০ হাজারে। সেক্টরের অধিনে ১০টি সাব-সেক্তর ছিলঃ
১. আশ্রমবাড়ি সাব-সেক্টর
২. বাঘাইবাড়ি সাব-সেক্টর, কমান্ডার ক্যাপ্টেন আজিজ
৩. হাতকাটা সাব-সেক্টর, কমান্ডার ক্যাপ্টেন মতিউর রহমান
৪. পঞ্চবটি সাব-সেক্টর, কমান্ডার ক্যাপ্টেন নাসিম
৫. মনতলা সাব-সেক্টর
৬. বিজয়নগর সাব-সেক্টর, ক্যাপ্টেন এম. এস. এ. ভূঁইয়া
৭. কালাছড়া সাব-সেক্টর, কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মজুমদার
৮. কলক্লিয়া সাব-সেক্টর, কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মোরশেদ
৯. বামুটিয়া সাব-সেক্টর, কমান্ডার লেফটেন্যান্ট সাইদ।
মেজর শফিউল্লাহর নামনুসারে সেক্টরের সাথে এস ফোর্সের জন্ম হয়। মেজর শফিউল্লাহর বিগ্রেডের দায়িত্ব গ্রহণের পর মেজর নুরুজ্জামান (আগরতলা মামলার আসামী) সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্বে নিযুক্ত হন। এস ফোর্সের দুটি নিয়মিত বাহিনী ছিল দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল এবং ১১তম বেঙ্গল রেজিমেন্ট। দ্বিতীয়
ব্যাটেলিয়ন কমান্ডিং অফিসার ছিলেন মেজর মইনুল হোসেন চৌধুরী, ১১ তম ইস্ট বেঙ্গলের অধিনায়ক ছ৯ইলেন মেজর নাসিম। তিন নম্বর সেক্টর তেলিয়াপাড়া ও আখাউড়া যুদ্ধে পাকবাহিনী বার বার পর্যুদস্ত হয়েছে।
চার নম্বর সেক্টর
সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল পুর্ব ই উত্তর দিকে সিলেটের ডাউকি সড়ক পর্যন্ত প্রায় ১০০ মাইল এলাকা নিয়ে গঠিত। উত্তরে হবিগঞ্জ মহকুমা থেকে দক্ষিণ কানাইঘাট থানা পর্যন্ত এই সেক্টর বিস্তৃত ছিল। এই এলাকার পাহাড় ও চা বাগান ছিল গেরিলা যুদ্ধের জন্য নিরাপদ স্থান। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর চিত্তরঞ্জন দত্ত চার নম্বর সেক্টর নিম্নলিখিত সাব-সেক্টরে বিভিক্ত ছিল-
১. জামালপুর সাব-সেক্টর, কমান্ডার মাসুদুর রব শাদী
২. বড়পুঞ্জি সাব-সেক্টর, কমান্ডার ক্যাপ্টেন এ. রব
৩. আমলসিদ সাব-সেক্টর, কমান্ডার, ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট জহির
৪. কৈলাশ শহর সাব-সেক্টর, কমান্ডার লেফটেন্যান্ট ওয়াকিউজ্জামান
৫. কুকিতলা সাব-সেক্টর, কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট কাদের
৬. কমলাপুর সাব-সেক্টর, কমান্ডার ক্যাপ্টেন এনাম
চার নম্বর সেক্টরে নিয়মিত বাহিনী ছিল ৪ হাজার এবং ৯ হাজার ছিল গেরিলা। হেডকোয়ার্টার প্রথমে আসামের করিমগঞ্জ, পরে নাসিম্পুরে। চার নম্বর সেক্টরের মুক্তিবাহিনি বিয়ানী বাজার, বড়লেখাম জাকিগঞ্জ ও কানাইঘাট যুদ্ধে প্রাধান্য বজায় রাখে।
পাঁচ নম্বর সেক্টর
পাঁচ নম্বর এলাকা ছিল সিলেট জেলার পশ্চিমাঞ্চল। সিলেট ডাউইকি সড়ক থেকে সুনামগঞ্জ-ময়মনসিংহ সড়ক পর্যন্ত। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর মীর শওকত আলী। এ সেক্টর ৫টি সাব-সেক্টরে বিভিক্ত ছিল-
১. মুক্তাপুর সাব-সেক্টর, সুবেদার নাজির হোসেন
২. ডাউকি সাব-সেক্টর, কমান্ডার সুবেদার মেজর বি. আর চৌধুরী
৩. শেলা সাব-সেক্টরম কমান্ডার ক্যাপ্টেন হেলাল
৪. ভোলাগঞ্জ সাব-সেক্টর, কমান্ডার লেফটেন্যান্ট তাহের উদ্দিন
৫. বালাট সাব-সেক্টর, কমান্ডার সুবেদার গণি, পরে ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন
৬. বড়ছড়া সাব-সেক্টর, কমান্ডার মুসলিম উদ্দিন।
সেক্টর এ্যাডজুট্যান্ট ছিলেন চা বাগানের ম্যানেজার মোস্তফা। সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিল বাশ্তলাতে। মুক্তিবাহিনীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার। তাঁর মধ্যে ১ হাজার ছিল নিয়মিত বাহিনী। সুরমা নদী, ছাতক, রাধানগর, টেংরা টিলার যুদ্ধে পাকবাহিনী পর্যুদস্ত হয়।
ছয় নম্বর সেক্টর
বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা নিয়ে ৬ নম্বর সেক্টর গঠিত ছিল। উইং কমান্ডার এম. কে. বাশার সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। ৬ নম্বর সেক্টর ৫টি সাব-সেক্টর বিভিক্ত ছিল-
১. উজানপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন নজ্রুল এবং পরে স্কোয়াড্রন লিডার সদরুউদিন।
২. পাটগ্রাম সাব-সেক্টর, ক্যাপ্টেন মতিয়ুর রহমান।
৩. সাহেবগঞ্জ সাব-সেক্টর, কমান্ডার ক্যাপ্টেন নওয়াজেশ উদ্দিন।
৪. মোগলহাট সাব-সেক্টর, কমান্ডার দেলওয়ার হোসেন।
৫. চিলাহাটি সাব-সেক্টর, কমান্ডার ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ইকবাল।
৬. নম্বর সেক্টরে মোট সৈন্য সংখ্যা ছিল ১১ হাজার। তাঁর মধ্যে ১০০০ ছিল ইপিআর। সেক্টর হেডকোয়ার্টার ছিল বুড়িমারিতে। এই সেক্টরের ৬০০ বর্গমাইল সব সময় মুক্ত ছিল এবং স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসন ছিল। প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র ছিল পাটগ্রাম। নাগেশ্বরী, ভুরঙ্গমারী।
সাত নম্বর সেক্টর
রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া ও দিনাজপুরের দক্ষিণাংশ নিয়ে ৭ নম্বর সেক্টর গঠিত ছিল। চাপাইনবাবগঞ্জে অবস্থানরত ৬ নম্বর উইং, দিনাজপুরের ৮ নম্বর এবং নওগাঁর ৭ নম্ব্র উইং এবং রাজশাহী, দিনাজপুরের হেড কোয়ার্টারের ইপিআর এ সেক্টরে যুদ্ধ করেছে। ক্যাপ্টেন আনোয়ার ও সুবেদার আব্দুর রব প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুদিন সেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। পরে মুজিবনগর সরকার উইং কমান্ডার নাজমুল হককে সেক্টর কমান্ডার-এর দায়িত্ব দেয়। মুজিবনগর অনুষ্ঠিত সম্মেলন শেষে ফেরার পথে জীপ দুর্ঘটনায় তিনি নিহত হন। পরে অবসরপ্রাপ্ত মেজর কাজী নুরুজ্জামানকে সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়। যুদ্ধ কালে মেজর নুরুজ্জামান পদোন্নতি পেয়ে কর্নেল হন।
সাত নম্বর সেক্টর আটটি সাব-সেক্টরে বিভক্ত ছিল-
১. মালন-সাব সেক্টর, ইপিআর জেসিও
২. তপান, সাব-সেক্টর, ইপিরা জেসিও
৩. মেহেদীপুর, সুবেদার ইলিয়াস এবং পরে ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর
৪. ভোলাহাট, লে রফিকুল ইসলাম
৫. হামজা পুর, ক্যাপ্টেন ইদ্রিস
৬. আংগিনাবাদ, গণবাহিনী সদস্য
৭. ঠোকরাবাড়ি, সুবেদার মোয়াজ্জেম
৮. লালগোলা, ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী
আট নম্বর সেক্টর
কুষ্টিয়া, যশোর, ফরিদপুর ও খুলনার একাংশ নিয়ে ৮ নম্বর সেক্টর গঠিত। চুয়াডাঙ্গার ৪ নম্বর, খুলনার ৫ ও ১৫ নম্বর উইং-এর ইপিআর ৮ নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছে।
মেজর ওসমান চৌধুরী ১৮ আগস্ট পর্যন্ত এই সেক্টরে দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে মেজর মঞ্জুর সেক্টরের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেক্টরের সৈন্যবাহিনী ছিল ৩ হাজার এবং গণবাহিনী সদস্য ছিল ৮ হাজার। সেক্টর হেডকোয়ার্টার বেনাপোলে থাকলেও এক একাংশ কল্যাণী শহরে অবস্থিত ছিল
আট নম্বর সেক্টরের অধীনে ৭টি সাব-সেক্টর ছিল-
১. বয়রা সাব-সেক্টর, কমান্ডার-ক্যাপ্টেন খন্দকার নাজমুল হুদা।
২. হাকিমপুর, ক্যাপ্টেন শফিক উল্লাহ
৩. ভোমরা, ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন
৪. লালবাজার, ক্যাপ্টেন এ.এম. আজম
৫. বেনাপোল, ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম
৬. শিকারপুর, ক্যাপ্টেন তৌফিক এলাহী চৌধুরী, পরে লেফটেন্যান্ট জাহাঙ্গীর
৭. বানপুর, ক্যাপ্টেন মুস্তাফিজুর রহমান
৮. যশোর-সাতক্ষীরার একাংশ মাহবুব উদ্দিন আহমদ
নয় নম্বর সেক্টর
বরিশাল, পটুয়াখালী, দৌলতপুর, সাতক্ষীরা সড়ক হয়ে সমগ্র খুলনা ও ফরিদপুর জেলার একাংশ নিয়ে নবম সেক্টর গঠিত ছিল। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর এম.এ. জলিল।
১৯৭১ সালের ৯ মাস যুদ্ধকালে সুন্দরবন এলাকা মুক্ত ছিল। সুন্দরবনকে কেন্দ্র করে মুক্তিযুদ্ধ তীব্র করার লক্ষ্যে নূরুল ইসলাম মঞ্জু এমএনএ, মহিউদ্দিন আহমেদ এমপি এবং সেক্টর কমান্ডার মেজর এম .এ জলিল ভারত থেকে দুই লঞ্চ ভর্তি অস্ত্র ও মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ৭ মে সুন্দরবন হয়ে বরিশালের দিকে রওয়ানা দেন। পাকবাহিনী সাতক্ষীরার গাবুয়া নদীতে লঞ্চ দুটো আক্রমণ করে ডুবিয়ে দেয়। এমপি মহিউদ্দিন আহমেদ ১৭ জনসহ গ্রেফতার হন। নূরুল ইসলাম ও মেজর জলিল পালিয়ে ভারতে চলে যান। মহিউদ্দিন আহমেদ আরও ১৩ জনকে খুলনা থেকে ঢাকা সেনানিবাসে বন্দি করে রাখে এবং তাঁদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। তাঁদেরকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখে। এমপি মহিউদ্দিনকে সামরিক আদালতে বিচার করে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। কিন্তু রায় কার্যকর করার পূর্বে দেশ স্বাধীন হয়ে যায়। তিনি ১৭ ডিসেম্বর মুক্তিলাভ করেন।
ক্যাপ্টেন জিয়াউদ্দিন হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে পাকবাহিনী প্রতিহত করে সুন্দরবন অঞ্চল মুক্ত রাখতে সক্ষম হন। পাকবাহিনী জলপথে সুন্দরবন প্রবেশ করতে সাহস পায়নি। এ পথে মুক্তিযোদ্ধা এবং শরণার্থীরা নিরাপদে যাতায়াত করত।
নয় নম্বর সেক্টরের অধীনে ৫টি সাব-সেক্টর ছিল
১. টাকি সাব-সেক্টর, শাহজাহান মাস্টার
২. হিঙ্গলগঞ্জ সাব-সেক্টর, ক্যাপ্টেন নূরুল হুদা
৩. শমসের নগর, কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মাহফুজুল আলম বেগ
৪. সুন্দরবন এলাকা, কমান্ডার লেফটেন্যান্ট জিয়াউদ্দিন আহমেদ
৫. বরিশাল, ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ইমাম
৬. পটুয়াখালী, ক্যাপ্টেন মেহেদী আলী ইমাম
৯ম সেক্টর একমাত্র এলাকা যেখান অনিয়মিত বাহিনী নিয়ে সেক্টর গঠন করা হয়। বেঙ্গল রেজিমেন্ট বা ইপিআরের কোনো নিয়মিত বাহিনী এই সেক্টর ছিল না। সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা সংখ্যা ছিল ৮ হাজার, পরে ২০ হাজারে উন্নীত হয়।
দশ নম্বর সেক্টর
১০ নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল নৌ-কমান্ডো-অভ্যন্তরীণ নৌপথ ও সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল। দশম সেক্টর অধীনে বাঙালি পদস্থ কর্মকর্তা না থাকায় এ সেক্টরের অধিনায়ক ছিল না। নিজ নিজ সেক্টর কমান্ডারগণ অপারেশন পরিচালনা করেন। নৌবাহিনী অফিসারদের মধ্যে ছিলেন এজি খুরশীদ, রহমতুল্লাহ, বি.আলম।, আসাদুল্লাহ, সলিমুল্লাহ, রফিকুল ইসলাম। নবম সেক্টরে প্রথম বঙ্গবন্ধুর নামে নৌবাহিনী গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে মন্ত্রী এ .এইচ. এম কামরুজ্জামান দশম সেক্টরে প্রথম নৌবাহিনীর শুভ উদ্ধোধন করেন। মংলা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, প্রভৃতি স্থানে নৌ কমান্ডোরা হামলা চালিয়ে অনেক জাহাজ ডুবিয়ে দেয়। ফ্রান্স থেকে পাকিস্তান নৌবাহিণীর ৮ জন নাবিক পালিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। তাঁদের নিয়ে মুজিবনগর সরকার প্রথম নৌবাহিনী কমান্ডার গঠন করে। নৌবাহিনীতে বাঙালি কোনো অফিসার না থাকায় ভারতীয় নৌবাহিনীর কমান্ডার এম.এন.সামন্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর গঠন ও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। মুর্শিদাবাদের পলাশীতে মুক্তিবাহিনী নৌ-কমান্ডোদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়। পলাশীতে ৩০০ নৌ কমান্ডার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। রহমতুল্লাহ, জালালউদ্দিন, লেফটেন্যান্ট সেলিম, বজলুর রহমান প্রমুখ পলাশীতে প্রশিক্ষণ প্রদানে কঠোর পরিশ্রম করেন।
এগার নম্বর সেক্টর
কিশোরগঞ্জ্র মহকুমা ব্যতীত ময়মনসিংহ জেলা এবং টাঙ্গাইল জেলা এগারো নম্বর সেক্টরের অধীনে ছিল। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন মেজর আবু তাহের। তিনি ১১ নভেম্বর গুরুতর আহত হলে স্কোয়াড্রন লিডার হামিদুল্লাহকে সেক্টরের দায়িত্ব দেয়া হয়।
এগার নম্বর সেক্টর ৮টি সাব-সেক্টর বিভক্ত ছিল-
১. মানকচর সাব-সেক্টর, কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার হামিদুল্লাহ
২. মহেন্দ্রগঞ্জ, লেফটন্যান্ট মান্নান
৩. পুরা খাসিয়া, লেফটেন্যান্ট মান্নান
৪. তালু, লেফটেন্যান্ট তাহের এবং পরে লেফটেন্যন্ট কামাল
৫. রংরা, ক্যাপ্টেন মতিয়ুর রহমান
৬. শিববাড়ি, ইপিআর জেসিও
৭. বাগমারা, ইপিআর জেসিও
৮. মহেশখালী, ইপিআর জেসিও
প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী পরে মেজর জিয়াউদ্দিন। অন্যান্য অফিসার ছিলেন- ক্যাপ্টেন বজলুল গণি পাটওয়ারী, ক্যাপ্টেন মাহবুব, ক্যাপ্টেন হাফিজউদ্দিন, ক্যাপ্টেন আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, লেফটেন্যান্ট আনিসুর রহমান, লেফটেন্যান্ট এম. ওয়াকার হাসান।
তৃতীয় বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার ছিলেন মেজর শাফায়াত জামিল, সহঅধিনায়ক ক্যাপ্টেন মহসীন, ক্যাপ্টেন আনোয়ার হোসেন, ক্যাপ্টেন আকবর হোসেন, লেফটেন্যান্ট নূরুন্নবী চৌধুরী
অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে ছিলেন কমান্ডিং অফিসার মেজর এ.টি.এম. আমিনুল হক, সহ-অধিনায়ক ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান চৌধুরী, ক্যাপ্টেন সাদেক হোসেন, লেফটেন্যান্ট মোদসসের।
এগারো নম্বর সেক্টর আনুষ্ঠিকভাবে আগস্ট মাসে শুরু হয়। ১১ নম্বর সেক্টর কামালপুর, বাহাদুরবাদঘাট, হালুয়াঘাট প্রভৃতি যুদ্ধে অভূতপূর্ব বিজয় লাভ করে।
[৬৭] সিরাজ উদ্দীন আহমেদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত