মুজিবনগর যুদ্ধ
১৯৭১ সালের ৩ জুন মুজিবনগরের যুদ্ধটি ছিল একটি উল্লেখযোগ্য আক্রমণ। মুজিবনগর যুদ্ধে পাকসেনাদের মুক্তবাহিনী প্রতিরক্ষা অবস্থানের উপর তীব্র আক্রমণে মুক্তিবাহিনী প্রথমে পশ্চাদপসরণ করেলও পরে তাঁরা সংগঠিত হয়ে অতর্কিত হামলার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা ঘাঁটিটি পুনরুদ্ধার করে।
১৯৭১ সালের ২৪ এপ্রিল সকালে প্রথম পাকসেনাদের প্রায় ১০০ জনের একটি দলের মুজিবনগরের আম্রকাননে প্রবেশ করে এবং সেখানকার ইপিআর ক্যাম্পে ঘাঁটি স্থাপন করতে চেষ্টা করে। তবে পাকসেনাদের উপস্থিতি জানতে পেরে বেতাই সাবসেক্টরের দীর্ঘক্ষণ গোলাগুলির পর পাকসেনারা পশ্চাৎপসরণ করতে বাধ্য হয়। এরপর বিভিন্ন সময় পাকসেনারা মুজিবনগরে তাদের ক্যাম্প স্থাপন করতে গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় এবং তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। পরবর্তীকালে ১৯৭১ সালের ৩ জুন পাকসেনারা আক্রমণ করার প্রস্তুতি নিয়ে এগুলে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নায়েব সুবেদার আব্দুল মতিন পাটোয়ারী সংবাদদাতা মারফত জানতে পান। তাৎক্ষণিকভাবে তিনি প্রতিরক্ষায় অবস্থিত সৈনিকদের দুইভাগে ভাগ করে একটিতে নিজে এবং অপরটি নায়েব সুবেদার তোফাজ্জেল হোসেনের নেতৃত্বে পৃথক অবস্থান নেন। এরপর যখন পাকসেনারা অগ্রসর হয়ে ঐতিহাসিক আম্রকাননের নিকটে পৌছায় তখন পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিবাহিনীর অস্ত্রগুলো তাদের ওপর গর্জে ওঠে। পাকসেনাদের অবস্থান ছিল খোলা মাঠে এবং মুক্তিযোদ্ধাগণ আম গাছগুলোর আড় নিয়ে সহজেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে গুলিবর্ষণ করতে থাকে। এ সত্ত্বেও পাকবাহিনী ক্ষিপ্রতার সাথে তীব্রগতিতে অগ্রসর হয়। এ তীব্র আক্রমণের মুখে মুক্তিবাহিনীর নিজ অবস্থানে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। নায়েব সুবেদার পাটোয়ারী তৎক্ষণাৎ পিছু হটার সিদ্ধান্ত নেন এবং পূর্বপাশের আমক্ষেতের মধ্যে অবস্থান গ্রহণ করেন। এদিকে পাকসেনারা শেষপর্যন্ত মুজিবনগর মুক্তিবাহিনীর ঘাঁটি দখল করে এবং পশ্চিম পাশের নিরীহ মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। নায়েব সুবেদার পাটোয়ারী এ দুর্যোগে মনবোল না হারিয়ে ঐ পরিস্থিতিকে কাজে লাগাবার চেষ্টা করেন। তিনি তাঁর স্বল্প সংখ্যক সহযোদ্ধা নিয়ে দৃঢ়তার সঙ্গে (যোদ্ধাদের বিস্তৃর্ণ) এলাকায় ছড়িয়ে দিয়ে) সামরিক কায়দায় পাকসেনাদের ওপর প্রতি-আক্রমণের নেতৃত্ব দেন। ফলে আখক্ষেতের ভেতর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ফের গর্জে ওঠে। হঠাৎ করে আবার গুলিবর্ষণ ও মুক্তিবাহিনীর দৃঢ়তা দেখে পাকসেনারা হতবিহবল হয়ে পড়ে। এসময় ওই আক্রমণকে তাঁরা মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর যৌথ আক্রমণ বলে অনুমান করে এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পিছু হটে চলে যায়। মুক্তিবাহিনী পুনরায় তাদের মুজিবনগর প্রধান ঘাঁটি পুনরুদ্ধার করে। এ যুদ্ধে শত্রুপক্ষে হিল এক ব্যাটালিয়ন পাকিস্তানী সৈন্য এবং মুক্তিবাহিণিতে ছিল ৪৫ জন ইপিআর ও মুক্তিযোদ্ধারা।
মুজিবনগর যুদ্ধে পাকবাহিণীর ২৮ জন সৈন্য নিহত ২০ জন সৈন্যেরও বেশি আহত হয়। অপরদিকে এ যুদ্ধে ২ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন
[৫৭] ইকবাল জাফর খন্দকার
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ অষ্টম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত