You dont have javascript enabled! Please enable it!

ব্রাহ্মণবাড়িয়া মুক্ত অভিযান

আখাউড়া থেকে পাকিস্তানী সৈন্যরা পিছু হঠে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে পৌঁছুলে ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে অবস্থানরত পাকবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি পায়। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পাকিস্তানীরা সুদৃঢ় অবস্থান গড়ে তেলেছিলো। যৌথবাহিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া আক্রমণের জন্য দক্ষিণ দিক থেকে আখাউড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলপথ ধরে ৫৭ মাউন্টেন ডিভিশনের ব্রি. মিশ্র এর নেতৃত্বে ৩১১ ও ব্রি.তুলি এর নেতৃত্বে ৭৩ মাউন্টেন ব্রিগেড দুটি এবং উত্তর দিক থেকে সিলেট ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাইওয়ে ধরে কে.এম. সফিউল্লাহ এর নেতৃত্বে ‘এস ফোরস’কে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আক্রমণে নির্দেশ দেওয়া হয়। ‘এস ফোরস’ ধর্মনগর –হরশপুর-পাইকপাড়া অক্ষ ধরে সাতগাঁও দখল করে চান্দুর-শাহবাজপুর-সরাইল হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে অগ্রসর হয়। এস ফোরসের অধিনায়ক ১১ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে ৬ই ডিসেম্বর রাতেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে মেইন রোড ধরে অগ্রসর হওয়ার আদেশ দেন। তার পেছনেই থাকে ২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট চান্দুরার উত্তরে সিলেট হাইওয়ের ওপর একটি রোড ব্লক তৈরি করে এবং চান্দুরা থেকে সরাইলের মধ্যবর্তী এলাকা শক্রমুক্ত করে নেয়। অন্যদিকে ৭৩ মাউন্টেন ব্রিগেড ট্যাংক সাপোর্ট নিয়ে ৬ ডিসেম্বর সড়ক ও রেলপথ ধরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার দিকে প্রবেশ করে দেখতে পায় যে, পাকিস্তানীরা বিনা যুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে পিছু হটেছে। ভারতীয় ৩১১ মাউন্টেন ব্রিগেড আশুগ্নজের দিকে অগ্রসর হয়। একই সঙ্গে ১১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টও ৮ ডিসেম্বর সন্ধার মধ্যে আশুগঞ্জের পূর্বদিকে আজবপুর-দুর্গাপুরে পৌঁছে যায়। এরই পেছনে থাকে ২ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ৩নং সেক্টর ট্রুপস। এক পর্যায়ে যৌথবাহিনী ৫৭ মাউন্টেন ডিভিশনের ৩১১ মাইন্টেন ব্রিগেডের ১৮ রাজপুত এই বাহিনী ৯ ডিসেম্বর উত্তর পূর্বদিক থেকে আশুগঞ্জের ওপর আঘাত হানে। মেঘনার দুই পার আশুগঞ্জ ও ভৈরববাজারে পাকিস্তানীদের অত্যান্ত জোরালো অবস্থান ছিলো এবং ১৪ ডিভিশনের সদর দপ্তর ছিলো এখানে। ১৮ রাজপুত (৩১১ ব্রিগেডের) আশুগঞ্জ আক্রমণে অত্যান্ত সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলো। কিন্ত তারা পাকিস্তানীদের ফাঁদে পড়ে যায়। ব্রিগেডিয়ার সাদুল্লাহ খানের নিজস্ব পরিচালনায় পাকিস্তানীদের প্রতি আক্রমণে ১৮ রাজপুত অত্যান্ত ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিন্ত শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানী সৈন্যরা আশুগঞ্জ ছেড়ে নদী পার হয়ে ভৈরবে চলে যায়। আর্টিলারির সাপোর্ট এবং বিমান আক্রমণের মাধ্যমে ১০ ডিসেম্বর সকালে ১১ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ৩১১ মাউন্টেন ব্রিগেড কতৃক আশুগঞ্জের পতন ঘটে। আশুগঞ্জের পতনের ফলে ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট, সিলেট ও এর বাহিরে কিছু এলাকা চট্টগ্রামের কিছু অংশব্যাতিত সমস্ত পূর্ব সেক্টর যৌথবাহিনীর হস্তগত হয়। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যৌথবাহিনীর ৪ কোরের কমান্ডার লে. জেনারেল সগৎ সিং ভৈরবে পাকিস্তানী ডিফেন্সকে এড়িয়ে ঢাকার দিকে অগ্রসর হন। যাতে ঢাকার পতন ঘটানো সম্ভব হয়। ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সমস্ত রায়পুর দখলে আসে। ১০ ডিসেম্বর ভোর পর্যন্ত ৩১১ মাইন্টেন ব্রিগেডের ১০ বিহার ৬২ লাইট্রেজিমেন্টের একটি ট্রুপ (১২-১৫ জন সৈন্য) ৬৫ মাউন্টেন রেজিমেন্ট রায়পুরায় অবতরণ করানো হয়। ৭৩ মাউন্টেন ব্রিগেড ও এস ফোরস বড় একটি অংশ স্থানীয় নৌ পরিবহনযোগে ভৈরবের দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকা দিয়ে মেঘনা নদী পার হয়ে নরসিংদীর দিকে অগ্রসর হয়। কিন্ত ৭৩ মাউন্টেনের ব্রিগেডের ১৯ পাঞ্জাব মেঘনা পার হওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব দিক থীক ভৈরবকে অবরুদ্ধ করে রাখে। ১০ ডিসেম্বর গার্ডস রেজিমেন্ট ও মুক্তিবাহিনী নরসিংদী দখলে নেয়। ফলে ভৈরবে পাকিস্তানীরা সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ১১-১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে যৌথবাহিনীর ৭৩ ব্রিগেড, মুক্তিবাহিনীর ‘এস ফোরস ও ৩ নং সেক্টরের সকল সৈন্য মেঘনা পার হয়ে আসে।
[৫৫] মোঃ আবু মুসা

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!