You dont have javascript enabled! Please enable it!

বোয়ালখালী থানা অপারেশন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম-পটিয়া সড়কের প্রায় দুইশত গজ পূর্বদিকে এবং কালুরঘাট সেতু থেকে প্রায় দুই মেইল দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বোয়ালখালি থানা অবস্থিত। বোয়ালখালি থানায় রাজাকার ও মিলিটারিরা প্রথম থেকেই অবস্থান করছিল। তারা ঐ এলাকায় সাধারণ জনগণের ওপর নানারকম অত্যাচার চালাতে থাকে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাপ্টেন করিম, নাসির ও স্থানীয়ভাবে গড়ে ওঠা আরো কয়েকটি দল ঐ থানা আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নেন। ক্যাপ্টেন করিমের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২/৩ জন মুক্তিযোদ্ধার একটি ছোট দল থানা আক্রমণের দুইদিন পূর্বে প্রয়োজনীয় পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন করেন। পর্যবেক্ষণের তথ্যের ভিত্তিতে ক্যাপ্টেন করিম ও কমান্ডার নাসির মিলে থানা আক্রমণের পরিকল্পনা ও তারিখ নির্ধারণ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৩০/৩২ জনের মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপটি ২৫ সেপ্তেম্বর, ১৯৭১ সাল রাত ১১ টায় আশ্রয়স্থল রতনপুর থেকে ক্যাঃ করিমের নেতৃত্বে অপারেশন স্থলের যাত্রা শুরু করেন। পথে দুজন আলবদর ইনফরমারকে হত্যা করে তাদের অস্ত্র হস্তগত এবং গোপনীয়তা নিশ্চিত করেন। থানায় যাওয়ার পথে ঘুষখিল গ্রামে একটি ব্রিজের পাশে এসে মুক্তিযোদ্ধা দলটি ৩টি গ্রুপে ভাগ হয়ে যায়। প্রথম গ্রুপটি কমান্ডার নাসিরের নেতৃত্বে ‘আক্রমণকারী গ্রুপ’ হিসেবে পথ পার হয়ে অন্ধকার ও ধানখেতের আড়াল নিয়ে থানার পেছন দিকে অবস্থান নেয়। দ্বিতীয় গ্রুপটি আক্রমণকারী (ফ্রন্ট) গ্রুপ হিসেবে হাবিলাস দ্বীপ হয়ে থানা থেকে আনুমানিক ২০০ গজ দূরে থানার দক্ষিণদিকে খালের দক্ষিণপাড়ে সেনেরহাটে অবস্থান নেয়। তৃতীয় গ্রুপটি শাকপুরা মিলের ভেতর দিয়ে ধানক্ষেতের আড়াল নিয়ে থানার পশ্চিমপাশে তেলিফকিরের মাজারে অবস্থান নেয়। তাঁদের কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণে শক্রদল ঐ রাস্তা ধরে পালাতে চেষ্টা করলে প্রতিহত ও যথাসম্ভব ধ্বংস করা। রাত ১টার মধ্যে গ্রুপগুলো অবস্থান গ্রহণ সম্পন্ন করে। থানার উত্তর পাশে ধানক্ষেতে অবস্থানরত নাসির গ্রুপ আইলের আড়াল থেকে প্রথমে থানার ওপর গুলি চালাতে থাকে। সাথে সাথে খালের দক্ষিণে অবস্থানরত গ্রুপও গুলি চলানো শুরু করে। মুক্তিবাহিনী আক্রমণে থানায় অবস্থানরত শক্ররা দক্ষিণদিকের মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপের ওপর প্রতিআক্রমণ শুরু করে। তারা সুবিধাজনক অবস্থান থেকে উত্তরদিকের নাসির গ্রুপের ওপরও প্রতিআক্রমণ শুরু করে। তারা সুবিধাজনক অবস্থান থেকে উত্তরদিকের নাসির গ্রুপের ওপরও প্রতিআক্রমণ চালায়। থানাটি প্রাচীরবেষ্টিত থাকায় শক্রদলের অবস্থান ছিল বেশ সুবিধাজনক। দ্বিতীয়ত, পর্যবেক্ষণ তথ্যে শুধু রাজাকার ও মিলিশিয়াদের উপস্থিতি সম্পর্কে বলা হয়েছিল। কিন্তু আক্রমণ করার পর দেখা যায়, সেখানে পরিখা বেষ্টিত হয়ে পাকসেনারা সুদৃঢ়ভাবে অবস্থান করছে। মুক্তিযোদ্ধারা হতোদ্যম না হয়ে অবস্থানে অনড় থেকে গুলি চালাতে থাকে। এভাবে দু’পক্ষের মধ্যে সকাল পর্যন্ত গুলি বিনিময় হয়। ইতোমধ্যে কালুরঘাট সেতুর নিরাপত্তায় নিয়োজিত পাকবাহিনীর একটি দল বোয়ালখালি থানায় আক্রান্ত নিজস্ব বাহিনীর সাহায্যে অগ্রসর হয়। ফলে মুক্তিবাহিনী আর শক্রদের ওপর তেমন ফলপ্রসু আক্রমন চালাতে না পেরে এবং অগ্রসরমান পাকবাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনায় অবশেষে নিজেদের অবস্থান ত্যাগ করে। উল্লেখ্য, শারীরিক অসুস্থতার কারণে ক্যা.করিম এ অপারেশনে অংশ নেননি। এই অপারেশনে ৮টি স্টেনগান, ৩টি এলএমজি, ১৬/১৮ টি রাইফেল ও ১টি রিভলভার ব্যবহার করা হয়েছে। আপাতবিচারে এটি একটি অসফল অপারেশন হলেও কার্যকর ছিল। প্রকৃতপক্ষে পাকবাহিনী ও শক্তিশালী শক্রর মধ্যে গুলিবিনিময়ের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের উপস্থিতিতে আশান্বিত হয়। তাদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। তারা বুঝতে পারে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধারা আছে।
[৫৯৭] রিয়াজ আহমেদ

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!