You dont have javascript enabled! Please enable it!

বোয়ালিয়া অপারেশন-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ

মাতৃভূমিকে হানাদারমুক্ত করার অভিপ্রায়ে উন্মাদ দুঃসাহসী রণ নায়ক মোহদীপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর হানাদার বাহিনীর বোয়ালিয়া চাঁপাই নবাবগঞ্জ ডিফেন্স আবার আক্রমণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। পূর্ব পরিকল্পত সিদ্ধানন্ত অনুযায়ী ৬ অক্টোবর সন্ধায় হামলা পরিচালনা করার কথা। হানাদার বাহিনীকে সমুচিত শিক্ষা দেয়াই ছিল এই হামলা পরিকল্পনার উদ্দেশ্য। কিন্তু ওই দিন সকালে শ্যামপুর-কালুপুর যুদ্ধে কামালউদ্দিন হেনার শাহাদৎ বরণ এবং যুদ্ধ সংঘটিত হবার দরুন নির্ধারিত সন্ধায় হামলা স্থগিত করা হয়। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ওয়্যারলেসে শ্যামপুর-কালুপুর যুদ্ধের সংবাদ পেয়ে কলাবাড়ী থেকে তার টাইগার বাহিনী নিয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ কাশিয়াবাড়ী ডিফেন্সে আগমন করেন। তিনি ৬ অক্টোবর সন্ধায় হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলার পূর্ব নির্ধারিত রণসূচীর পরিবর্তন করে পরদিন ভোরে বোয়ালিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেনে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ অক্টোবর ভোরে বোয়ালিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ৭ অক্টোবর ভোর ৪টার দিকে সুসজ্জিত ৪০ জন যোদ্ধা নিয়ে দলদলী কোম্পানি কমান্ডার লেঃ রফিকুল ইসলামসহ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর অগ্রসর হন এবং নন্দলাল্পুর গ্রামকে দানে রেখে বোয়ালিয়া স্কুল পাকবাহিনীর ডিফেন্সে সাড়ে ৪টার দিকে হামলা করেন। এরপর শুরু হয় প্রচণ্ড লড়াই। এই যুদ্ধে অগ্রগামী মুক্তিবাহিনীকে পাকফৌজ ঘিরে ফেলে এবং মুক্তিযোদ্ধারা নিরুপায় ও দুর্বল হয়ে পড়ে। দুর্দর্শ সময় নায়ক ক্যাপ্টেন জাহাঙ্গীর ওয়ারলেস মারফৎ সেক্টর কমান্ডার লেঃ কর্নেল কাজী নুরুজ্জামানের সাথে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন। সেক্টর কমান্ডার কাজী নুরুজ্জামান সে সময় আলনগর সীমান্তে বিপরীতে ভারতের গান্ধীনগর বিএসএফ ক্যাম্পে অবস্থান করছিলেন। সেখান থেকে সেক্টর কমান্ডার ভারতীয় বাহিনীকে দিয়ে আর্টিলারি সাপোর্ট দেয়ার আশ্বাস দেন। কাজী নুরুজ্জামান সাহেবের কথামতো তাৎক্ষণিকভাবে ভারতীয় বাহিনী পাকবাহিনীর ডিফেন্সের ওপর বিক্ষিপ্তভাবে আর্টিলারি ফায়ার শুরু করে। এর ফলে পাকফৌজ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়। ভারতীয় বাহিনীর আর্টিলারি ফায়ার দেয়ার ফলে কালুপুর আম বাগান, বোয়ালিয়া, কাঞ্চনতলা, মকরপুর নদীর ঘাঁটি বিভিন্ন স্থানে গোলা নিক্ষিপ্ত হয়। আর্টিলারি হামলার দরুন হানাদার বাহিনীর বেশ কিছু সদস্য হতাহত হয় এবং শক্ররা ঘায়েল হয়ে পড়ে। সুযোগ নিয়ে মুক্তিবাহিনী সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় হানাদার বাহিনীর উদর থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হয়। সকাল ৭টার দিকে সৌভাগ্যবান মুক্তিযোদ্ধারা কাশিয়াবাড়ী ডিফেন্সে ফিরে আসেন। মুক্তিবাহিনীর এই লড়াকু অগ্রবর্তী দল ওই মুহূর্তে ভারতীয় বাহিনীর আর্টিলারি সাপোর্ট না পেলে তারা সমুলে বিনাশ হয়ে যেতেন। বলা যায়, মুক্তিবাহিনীর ওই লড়াকু দলের সদস্যরা সেদিন নবজন্ম লাভ করেন। উল্লেখ্য, গান্ধীনগর ক্যাম্পের বিএসএফ’র নিক্ষিপ্ত শেলের আঘাতে আলমপুর গ্রামের (১) মহরম শেখ, পিতা-বেরায়েত শেখ, (২) সানোয়ারা খাতুন, পিং-স্বামী-মহররম শেখ, (৩) দেরাসাত আলী, পিতা-সৈয়দ আলী নিহত হন। বিএসএফ’র ভুলের কারণে নিক্ষিপ্ত শেল তাদের বাড়ীর ওপর পড়লে তারা নিহত হন এবং বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাব-সেক্টর কমান্ডার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর কাশিয়াবাড়ী ডিফেন্সে সামান্য বিশ্রাম নেয়ার পর দলদলী কম্পানি হেডকোয়ার্টারে যেন এবং সেখানে থেকে আড়গাড়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। বোয়ালিয়ার এই ভয়াবহ যুদ্ধের একদিন পর আড়গাড়ায় প্রচণ্ড ভয়াবহ যুদ্ধ সংঘটিত হয়।
[৫৭৪] মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!