You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.19 | বোরহানউদ্দিন বাজার অ্যাম্বুশ পরিকল্পনা, ভোলা - সংগ্রামের নোটবুক

বোরহানউদ্দিন বাজার অ্যাম্বুশ পরিকল্পনা, ভোলা

পাকবাহিনীর সম্ভাব্য আসার পথ বিলের মাঝখান দিয়ে- এটা ধরে নিয়ে অ্যাম্বুশের একটা প্রাথমিক পরিকল্পনা করা হয়। যদিও আরো সামনে গিয়ে অথবা বোরহানউদ্দিন খেয়াঘাটের কাছে এই পাড় থেকে প্রতিআক্রমণেও অনেকে মতামত দেয়। শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা নেয়া হয়, পাকবাহিনী তালুকদার বাড়ি আক্রমণে এলে আসবে উত্তর থেকে ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে। বিলের পূর্বে সুপারিগাছসহ অন্যান্য গাছের বাগান, পশ্চিমেও তাই। দক্ষিণে ওই বাড়ির দিঘী, যার পাড় বিল থেকে প্রায় দশ হাত উঁচু। অ্যাম্বুশের এক চমৎকার পরিবেশ। অন্যদিকে তখন বিলের মধ্যে ধানসহ এক হাঁটু পানি। বিলটি উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় সাড়ে তিনশ গজের মতো হবে। পাকবাহিনী বিলের অর্ধেকটার বেশি পার হয়ে আসার পর তিন দিক থেকে সঠিক সময়ে একসঙ্গে আক্রমণ করতে পারলে তারা পরাজিত হতে বাধ্য। সে সময়েই কে কোথায় পজিশন নেবে ঠিক করে ফেলা হয়। পূর্বদিকে হাবিলদার সামসু, গিয়াসউদ্দিন, আচমত, সানু আলম, চৌকিদার, ছাদেক, কাঞ্চন পশ্চিম দিকে হাবিলদার নাসির, ল্যান্স নায়েক ছিদ্দিকুর রহমান, আমির হোসেন, জেবল, নাসির, মুচু ছিদ্দিক এবং দক্ষিণ দিকে পুকুর পাড়ে মকছু ভাই, নকশাল ছিদ্দিক, ওয়াহিদ। সে সময় রাজাকারদের রাইফেলসহ মোট ১৬টি ৩০৩ রাইফেল সক্রিয় ছিল। লতিফ পাটওয়ারীর বাড়ি থেকে আনা দুটি রাইফেলের একটির ফায়ার পিন কাজ করছিল না। অন্যদিকে গুলি ছিল ৮০০ রাউন্ড। টু-টু বোর রাইফেলটি ছিল লিয়াকতদের ক্যাম্পে। বিলের মাঝখানের পায়ে হাঁটা রাস্তাটিতে দুজনের বেশি পাশাপাশি হেঁটে আসতে পারে না। একজন একজন করে আসা সম্ভব। পরিকল্পনা হলো পাকবাহিনী যখন বিলের অর্ধেকেরও বেশি পার হয়ে বাড়ির দিকে আসবে তখন প্রথম ফায়ার ওপেন করবে মকছু ভাই, নকশাল ছিদ্দিক ও ওয়াহিদ। এদিক থেকে গুলি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পূর্ব এবং পশ্চিম দিক থেকে গুলি শুরু হবে। তিন দিক থেকে আক্রমণ শুরু হলে একমাত্র উত্তর দিকে পালিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনো রাস্তা থাকবে না পাকবাহিনীর। ওই সময় লিয়াকত-মিজান গ্রুপকে খবর পাঠালেও তাদের সর্বশেষ শেল্টার থেকে আগের দিন নতুন শেল্টারে চলে যাওয়ায় খবর দেয়া যায়নি। অন্যদিকে ভোলাতে ছিদ্দুকুর রহমান এবং ডা. আব্দুর রহমানকে খবর দিয়ে পাঠালেও তাদের অবস্থান কোথায় জানা যায়নি। এদিকে কাচিয়াতে হাবিলদার আজিজুল হক ও হযরত আলীকে পূর্বেই খবর পাঠানো হয়েছে রেডি হয়ে থাকার জন্য। ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে সবাই তালুকদার বাড়িতে নাশতা শেষ করেছে। দরজায় সবাই বসে আছি, এমন সময় হাঁফাতে হাঁফাতে দুটি ছেলে এসে খবর দিল, পাকবাহিনী রাজাকারসহ প্রায় ৮০ জনের মতো একটি দল নৌকায় করে খেয়াঘাট পেরিয়ে এপারে চলে এসেছে। মাথা ঠাণ্ডা করে প্রত্যেককে ৪০টি করে গুলি দেয়া হলো। তিনটি হ্যান্ড গ্রেনেড আর বাকিগুলো রাখা হলো রিজার্ভ হিসেবে, যাতে প্রয়োজনে যে কোনো দিকে দেয়া যায়। দেরি না করে সবাই পূর্ব পরিকল্পিত স্থানে অবস্থান গ্রহণ করল। প্রত্যেক দলের সঙ্গে সাত-আটজন করে অতিরিক্ত মুক্তিযোদ্ধা ছিল। যেহেতু অস্ত্র নেই, যদি কোনো ক্যাসুয়ালটি হয় তবে ওই অস্ত্রহীন গ্রুপের যোদ্ধারা এগিয়ে যাবে। অথবা কেউ আহত হলে পিছিয়ে নিয়ে আসবে।
[৬৪] মাহফুজুর রহমান

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত