You dont have javascript enabled! Please enable it!

বেলোনিয়া-মিন্সিরহাট যুদ্ধ, ফেনী

ফেনী জেলার ফুলগাজী থানায় দরবারপুরে ইউনিয়নে মুন্সীরহাট অবস্থিত। মেজর খালেদ মোশাররফ জুন মাসের প্রথম দিকে ক্যাপ্টেন গাফফারকে খবর পাঠা যে,ভারতীয় বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং আরোরা হেলিকপ্টার যোগে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান দেখতে আসতে পারেন। সেজন্য খালেদ মোশাররফ কোনো হেলিওপ্টারে গুলিবর্ষণ না করার নির্দেশ দেন। সময়টা ছিল বর্ষাকাল। সারাদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছিল,বেলা দুটার দিকে হেলিকপ্টার মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের পিছনে উড়ছে যা পশ্চিম দিক অর্থাৎ ভারতীয় দিক থেকে আসতে দেখা গেছে। ক্যাপ্টেন গাফফার ভাবলেন সারাদিন বৃষ্টি হওয়ার কারণে জেনারেল আবোরা হয়ত আসতে পারেননি তাই বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর তিনি এসেছেনিতোমধ্যে ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে ২ টি হেলিকপ্টার দুদিকে উড়ে গেল।
হেলিকপ্টার দুটি দুদিকে যাওয়ায় ক্যাপ্টেন গাফফারের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়। ১৫ মিনিট পর হেলিকপ্টার দুটিকে আবার ভারতীয় সীমান্তের দিকে উড়ে যেতে দেখা গেল। এর পর পরই আকস্মিকভাবে পাকসেনাদের মেশিনগানের গোলাবর্ষণ শুরু হয়। ক্যাপ্টেন গাফফার বুঝতে পারলেন যে, হেলিকপ্টার দুটি জেনারেল অরোরার ছিল না, বরং হেলিকপ্টার দু’টি দিয়ে পাকিস্তানীরা তাদের অবস্থানের পেছনে অবতরণ করেছে। দ্রুততার সাথে ক্যাপ্টেন গাফফার প্রধান রাস্তা রেললাইন বরাবর অবস্থান নেওয়ার জন্য সুবেদার ফরিদ আহমেদকে নির্দেশ দেন। সুবেদার খোরশেদ আলমকে উত্তর ও পশ্চিম দিকে নজর রাখতে বলা হয় এবং তিনি নিজে পূর্ব-দক্ষিণ দিকে অবস্থান নেন। এসময় ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম খবর পাঠান যে, তিনি এফডিএল দিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। তখন পাক গোলান্দাজবাহিনী কামান, মর্টার ও রিকয়েলস রাইফেলের সাহায্যে বৃষ্টির মতো গোলাবর্ষণ করছিল। ইতোমধ্যে পাকিস্তানী বাহিনী দ্বিতীয় বার হেলিকপ্টার দ্বারা তাদের কমান্ডোদের মুক্তিবাহিনীর পেছনে অবতরণ করায়। রাত নয়টার দিকে লেফটেন্যান্ট ইমামুজ্জামান জানান তিনি পাকিস্তানী বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন। ক্যাপ্টেন গাফফার তখন একিনপুর থেকে তার অবস্থান সরিয়ে নেন। লেফটেন্যান্ট ইমামুজ্জামান ক্যাপ্টেন গাফফারের কাছে কিছু গোলাবারুদ পাঠানোর অনুরোধ করেন এবং তিনি আরো জানান যে, ছাগলনাইয়া থেকে মুহুরী নদী পর্যন্ত যে প্রতিরক্ষা অবস্থান ছিল তা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং তারা ফুলগাজীর দিকে চলে যাচ্ছেন। প্রায় একই সময় ক্যাপ্টেন গাফফারের বাহিনী পাকিস্তানী কমান্ডো বাহিনীর দ্বারা আক্রান্ত হন। পাঠান নগর হয়ে অগ্রসর হয়ে পাকিস্তানী সেনারা বাম দিকে ও সামনের দিক থেকে আক্রমণ চালায়। ঠিক সেই সময় ক্যাপ্টেন জাফর ইমাম ক্যাপ্টেন গাফফারকে জানান যে, খালেদ মোশাররফ যেন মুক্তিবাহিনীকে নিয় এফুলগাজীর পেছনে চিথলিয়া অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দেন। ঠিক সময়ই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কারণ পেছনে সরে এসে সময় মতো চিথলিয়ায় অবস্থান না নিলে যুদ্ধরত মুক্তিবাহিনী পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!