বেলপুকুরিয়া রেলক্রসিংয়ের প্রতিরোধ যুদ্ধ, রাজশাহী
স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় রাজশাহী সেক্টরের যুদ্ধ ছিল মূলত খন্ড খন্ড আক্রমণ এবং পাল্টা আক্রমণের মধ্যে সীমাবদ্ধ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মুক্তিবাহিনী শত্রুর ওপর এ ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করে। তন্মধ্যে বেলপুকুরিয়ার প্রতিরোধ যুদ্ধ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কারণ এই প্রতিরোধ যুদ্ধের মাধ্যমে শত্রুর যানবাহন,জনবল,রসদ ও গোলাবারুদের বড় ধরনের ক্ষতি করা হয়েছিল। নাটোর থেকে রাজশাহী পৌঁছাতে এই প্রধান সড়কের কোনো বিকল্প খুঁজে পাওয়া ছিল খুবই মুশকিল। সেই কারণে বেলপুকুরিয়ার যুদ্ধ কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইউসুফপুর ইপিআর ক্যাম্পের হাবিলদার আকবর হোসেন মাত্র ২৫ জনের একটি ক্ষুদ্র দল দিয়ে পাকবাহিনীকে বাধা দেয়ার জন্য বেলপুকুরিয়া রেলক্রসিংয়ে প্রতিরক্ষা গড়ে তুলেছিল। ১৩ এপ্রিল ১৯৭১-এ ক্ষুদ্র দলটি তিনটি উপদলে বিভক্ত হয়ে প্রতিরক্ষা অবস্থানে গিয়ে পাকবাহিনীর জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। পাক হানাদার বাহিনী সাতটি গাড়ি সামনে এবং কিছু দূরত্বে প্রায় পঞ্চাশটি গাড়ির কনভয় ছিল। যথাসময়ে অ্যাম্বুশ শুরু হওয়ায় প্রথম গাড়ির বহর থেকে অধিনায়কসহ অনেক হানাদার সৈন্য মারা যায়। পাকবাহিনীর বাকি সৈন্যরা পিছু হটতে থাকে এবং এলোপাথাড়ি গুলি নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কিছু মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। অ্যাম্বুশ দলের অধিনায়ক ইপিআর হাবিলদার মো. আকবর হোসেন শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত যুদ্ধ করতে থাকেন। ক্রমেই মুক্তিযোদ্ধাদের গোলাবারুদ কমে আসছিল। পেছন দিক দিয়ে হানাদাররা ঘিরে ফেলার কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা যুদ্ধের পর মোট ১২জন বীর মুক্তিযোদ্ধা আত্মাহুতি দেন। দুপুর দুইটা-আড়াইটার দিকে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পাকবাহিনী ধীরগতিতে কাটখালী বাজার অতিক্রম করে কিন্তু শিল্প এলাকা ধ্বংসের সম্মুখীন হতে পারে বলে কাটখালীতে কোনো প্রতিবন্ধকতা করা হয় নি। বিকেল চারটার দিকে পাকহানাদার বাহিনী এই দূরবলতার সুযোগ নিয়ে হিংস্র হায়নার যতো যাত্রাপথের আশেপাশের ঘরবাড়ি ,যানবাহন জ্বালিয়ে দেয়।
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত