You dont have javascript enabled! Please enable it!

বালীয়া মসজিদের যুদ্ধ, ঢাকা

১৯ ডিসেম্বর,১৯৭১ সালে ঢাকা শহরে ধামরাই থানাধীন কালামপুর সীমান্ত এলাকায় আগত শত্রুর ১৬ সদস্যের একটি দল পথ হারিয়ে অবশেষে বালিয়া এলাকার মসজিদে আশ্রয় নেয়।তারা মসজিদে থাকা নিরাপদ মনে করেছিল। মসজিদের বাম দিকটাতে বিরাট বিল থাকায় তাঁরা এটাকে নিরাপদ মনে করেছিলো। পরে তাঁরা অত্র এলাকার চান্দু ব্যাপারীকে নিয়ে আসে।তারা চান্দু ব্যাপারীকে দিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় কাজ গুলো করায় কারন চান্দু ব্যাপারি কানে কম শুনত। তাঁরা চান্দু ব্যাপারীকে মুড়ি আনার জন্য পার্শ্ববর্তী মাখন চৌধুরীর দোকানে পাঠায়। কানে কম শুনলেও চান্দু বেপারীর দেশের প্রতি একটা অগাধ ভালোবাসা ছিলো তা সে কাজের মাধ্যমে প্রমান রেখে গেছে। চান্দু ব্যাপারী মুড়ি আনতে এবং এই ফাকে মসজিদে পাক বাহিনীর অবস্থানের কথা বলে দেন। চান্দু বেপারীর কথার সতুতা যাচাই করে তারপর মুক্তিযোধাবাহিনীকে খবর দেয়া দরকার বলে মনে করছিলেন মাখন চোউধুরী। কারন এর পূর্বে ১৩ ডিসেম্বর ভুল তথ্য এসেছিল যে ভারতীয় বাহিনীকে আপনারা রিসিভ করুন।কিন্তু আদৌ তাঁরা ভারতীয় সৈন্য ছিল না, ছিলো পাকিস্থানী।তাই মাখন চৌধুরী চিন্তা করলেন মুড়ি খেয়ে যখন পাক বাহিনী ঘুমিয়ে পড়বে এবং যখন আজানের সময় হবে ঠিক সেই সময় মসজিদে যাওয়া গেলে তিনি জিজ্ঞাসিত হলে বলতে পারবেন আমি মুয়াজ্জিন।তাই আযানের একটু আগে জীবনের ঝুনি নিয়ে ভয়ে ভয়ে মাখন চৌধূরী মসজিদে গেলেন।মসজিদে গিয়ে দেখেন শত্রুর কোনো পাহারা নেই দরজা লাগিয়ে তাঁরা ভেতরে ঘুমুচ্ছে।তিনি আর দেরী না করে অত্র এলাকার জহুরুল হুদা খানের পুত্র মাসুদ খানকে উক্ত ঘটনা অবহিত করে। সুচতুর মাসুদ খান অতি সংগোপনে দুর্গম স্থানের মধ্য দিয়ে মির্জাপুর থানার হারিয়া ক্যাম্পে যান। হারিয়া ক্যাম্প থেকে হিরো কোম্পানির ফেরদৌস ৬২ জন মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে বালিয়া মসজিদের নিকটবর্তী হন। ইতোমধ্যে পাক বাহিনীর ঘুম থেকে উঠে তাদের ৭ জন মসজিদের উত্তর-পূর্ব এলাকায় রোদ্র পোহাচ্ছিল। এই অবস্থা দেখে ক্যাপ্টেন ফেরডৌস ল্যান্স কর্পোরাল একাব্বরকে বালিয়া মজিদার বাড়ির ছাতে অবস্থান নেয়ার জন্য জায়গা দেখিয়ে দেখন এল এম জির। এবং ছাদে আরো লাইন করে মুক্তিযোদ্ধাদের বসিয়ে দেন। ল্যা. কর্পোরাল একাব্বরের এলএমজি ফায়ারের সাথে সাথে রোদ্র পোহানো ৭ জন পাক বাহিনীর আরও ৩ জন মারা যায়। পরে কামান্ডার বেজনজীরের দল এসে যোগ দেন। তাঁরা হ্যান্ড গ্রেনেড ওঁ অন্যান্য অস্র দ্বারা পাকবাহিনীকে ত্রীমুখী আক্রমঅনের মাধ্যমে পুরযুদস্ত করতে সক্ষম হন। হ্যান্ড গ্রেনেড ওঁ অন্যান্য ফায়ারে পরবর্তীতে আরোও ৪ জন মারা যায়। পরবর্তীতে আরও ৭ জনকে হত্যা করা হয় সরবমোট ১৪ জন পাকবাহিনী নিহত হয়। তাদের কাছ থেকে ১টি স্টেনগান,১৫টি চাইনিজ রাইফেল এবং এক বস্তা গোলা উদ্দার করা হয়।১৪ জনের লাশ বালিয়া হাই স্কুলের উত্তর পূর্ব বংশী নদীর চরে পুঁতে রাখা হয়।তখন হাজার হাজার জনতা উক্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করে এবং আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে।মাখন চৌধুরী,চান্দু ব্যাপ্রী এবং সৈয়দ আলী জিবনের ঝুঁকি নিয়ে দেশ মাতৃকার গৌরব রক্কারথে যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তা জাতি কোনী দিন ভুলতে পারবে না।মাখন চৌধুরী চান্দু ব্যাপারি ওঁ সৈয়দ আলীর গোয়েন্দা তৎপরতা মুক্তিযুদ্ধ জয়ের সম্ভাবনাকে ত্বরান্বিত করেছিল এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!