You dont have javascript enabled! Please enable it!

বালিয়াডাঙ্গার যুদ্ধ, সাতক্ষীরা

বালিয়াডাঙ্গা সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া থানার প্রায় ৭ কিলোমিটার দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত একটি গ্রাম। ভারত বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমারেখা থেকে গ্রামটি ২ কিলো পুরবে অবস্থিত।গ্রামটি গারাখালি বিওপির সন্নিকটে অবস্থিত। সকল দিক বিবেচনায় বালিয়াডাঙ্গা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত।
বালিয়া ডাঙ্গা শত্রুর এক প্লাটুঙ্কএ হটিয়ে দেয়ার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৬-১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ তারিখে ৮নং সেক্টরে নিয়োজিত ই কোম্পানি ভারতের হাকিমপুর থেকে কাডাঙ্গা ওঁ কমনডাঙ্গা হয়ে বালিয়াডাঙ্গার উদ্দেশে যাত্রা করে।বালিয়াডাঙ্গায় তাঁরা পাকিস্থানিদের প্রবল প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়। রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকসেনারা প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সাধন স্বীখার করে বালিয়াডাঙ্গা থেকে পশ্চাদসরন করে। অতঃপর শত্রুর কোম্পানি হটাতগঞ্জে চলে যায়।মুক্তিবাহিনী তখন বালিয়াডাঙ্গায় হটাতগঞ্জেরমুখী হয়ে মরিচায় বাঙ্কার ঝুড়ে প্রতিরুখামূলক অবস্থান নেয়।
পাকবাহিনী বালিয়াডাঙ্গায় অবস্থানরত মুক্তিবাহিনীর শক্তি সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষন করে।তারা ভেবেছিল যে, অতি হালকা অস্ত্রস সজ্জিত কিছু মুক্তিযোদ্ধা হয়ত সেখানে অবস্থান নিয়েছে।তাই তাঁরা আটিলারি সহায়তা ছাড়াই উত্তর ওঁ পূর্ব দিক থেকে শুধু পদাতিক সৈন্য পাঠিয়ে বালিয়াডাঙ্গা আক্রমণের পরিকল্পনা করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন্ত অবস্থায় বন্ধি করা। তবুও কোনো পরিস্থিতির জন্য আটিলারি অন করে রাখে। পাকিস্থানিরা ১৭-১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তিযোদ্ধাদের বালিয়াডাঙ্গা অবস্থানের ওপর আক্রমণ চালায়।হটাতগঞ্জে অবস্থানরত পাকিস্থানি কোম্পানীটি এ আক্রমণে অংশ নেয়। তাদের দুটি প্লাটুন উত্তর ওঁ পূরব্দিক থেকে একযোগে বালিয়াডাঙ্গার উপর আক্রমণ করে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের মরিচায় দাঁড়িয়ে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলে।ফলে পাক সেনাদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং তাদের আক্রমণ থেমে যায়। এমতাবস্থায় পাক সেনারা ১৭ সেপ্টেম্বর আটিলারি সহায়তা তলব করে। পরবর্তীতে পাকসেনাদের ব্যাপক গোলাবর্ষণ এর ফলে ওভারহেড প্রোটেকশন বিহীন মরিচায় দাঁড়িয়ে থাকা যুদ্ধরত মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। তবুও মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন শফিউক উল্লাহ এবং ক্যাপ্টেন আজম চৌধুরীর নেতৃত্বে তাদের অবস্থান ধরে রাখে এবং প্রতিরীধ অব্যাহত রাখে। ১৯ সেপ্টেবর পাকসেনাদের আটিলারি গোলার আঘাতে ক্যাপ্টেন শফিক গুরুতর আহত হন। এ সংবাদ সেক্টর কামান্ডার মেজর মঞ্জুর ক্যাপ্টেন মাহবুবকে আর বদলি হিসেবে প্রেরণ করেন। এদিকে প্রচন্ড গুলাবর্ষণে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষয়ক্ষতি বাড়তে থাকে এবং ২০ সেপ্টেম্বর গোলার আঘাতে ক্যাপ্টেন মাহবুব আহন হন। এমতা অবস্থায় ক্ষয়ক্ষতি আর না বাড়িয়ে মুক্তি্যোদ্ধাদের বালিয়াডাঙ্গা অবস্থান ছেড়ে যেতে বলা হয়।
পাকসেনাদের গোলাবর্ষণে মুক্তিবাহিনীর পশ্চাতসরন কঠিন হয়ে পড়ে। কাজেই মুক্তিবাহিনীর পরশ্চাদসরন সহজ করার জন্য তাদের একটি অনিয়মিত দলকে কাভারিং ফায়ার করার জন্য পাথানো হউ। তাঁরা ভারতের হাকিমপুর থেকে ভাদিয়ালি ওঁ গারা খালি হয়ে বালিয়াডাঙ্গায় প্রবেশ করে। তাঁরা বরাবর অবস্থান পরিবর্তন করে পাকসেনাদের ফায়ার করতে থাকে। কিন্তু বিস্তৃত এলাকা থেকে গুলি আসতে থাকায় পাকসেনারা ভেবেছিল যে মুক্তিবাহিনীর একটি বড় দল রিইনফোরস্মেন্ট হিসেবে এসেছে। তাই তাঁরা হচকচিয়ে যায়।এই সুযোগে ক্যাপ্টেন এ আর আজম চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ভারতের হাকিমপুরে চলে যেতে সক্ষম হন। বালিয়া ডাঙ্গার যুদ্ধে মোট ৮ জন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হ।তাদের মধ্যে চারজনের নাম জানা সম্ভব হয় বালিয়াডাঙ্গা বাকারে এই শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবরের ওপর
একটি স্মৃতিস্তম্ব রয়েছে।এছাড়াও বলিয়াডাঙ্গা যুদ্ধে ক্যাপ্টেন সফিক উল্লাহ ও ক্যাপ্টেন মাহবুব সহ বেশ কিছু সংখ্যক মুক্তিযোদ্ধারা গুরুতর আহত হন।
শত্রুর ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে তেমন কিছু জানা সম্ভব হয়নি।তবে সঠিক সংখ্যা জানা সম্ভব না হলেও,বলিয়াডাঙ্গা যুদ্ধে যে বহু পাকিস্থানী সৈন্য হতাহত হয়েছে তা স্থানীয় গ্রামে লোকদের কথাবার্তা থেকে জানা যায়।পাকিস্থানীরা আটিলারী গোলাবর্ষণ ছাড়া আক্রমন পরিচালনা করায় প্রথমেই তাদের বহু পদাতিক সৈন্য নিহত হয়।এ ছাড়া দুইদিন ব্যাপী যুদ্ধে পাক সেনারা আক্রমণে থাকায় মরিচায় অবস্থানরত পাকবাহিনীর গুলিতে তাদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।গ্রামের লোক জনের কাছ থেকে জানা যায় যে,এ যুদ্ধে পাক সেনাদের একজন ক্যাপ্টেনসহ অন্তত ১০০জন নিহত হয়েছে।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!