You dont have javascript enabled! Please enable it!

বারোয়াড়িয়ার যুদ্ধ, খুলনা

খুলনা জেলার বাটিয়াঘাট উপজেলার বারোয়াড়িয়া একটা উল্লেখযোগ্য স্থান।বটিয়াঘাটা অঞ্চলে বারোয়াড়িয়া বাজারের যেমন সুখ্যাতি প্রচুর, তেমনি বারোয়াড়িয়া লচন স্টেশনও কম খায়াত নয় আরোয়াড়িয়ার দুরুত্ব পাইক আছা থেকে নদ্রীপথে ১২/১৩ মেইল এবং বটিয়াঘাটা থেকে নদীপথে ১৮/২০ মাইলের মতো প্রায়।বারোয়াড়িয়া এলাকাটিয়া মূলত হিন্দু অধ্যুষিত।এই অঞ্চলে শান্তি পুরনভাবেবসবাসরত নিরীহ হিন্ধুদের কোণঠাসা করে রাজাকাররা তাদের ফায়দা লুওটার জন্য এলাকাকে বেছে নিলো।শুরু হল বারাজাকার ক্রতৃক বারোয়াড়িয়ার বাসিন্দাদের উপর দমন পীড়ন অত্যাচার।ঘর বাড়ি লুট হতে লাগল দিন দুপুরে, ধর্ষিতাদের সংখ্যা বেড়ে চলল গুনিতক হারে,কামে হল ত্রাসের রাজত্ব।বারোয়াড়িয়া পরিণত হল মগের মুল্লুকে। রাজাকারদের হাতে জিম্মি এলাকাবাসী।দেয়ালে ওদের পিঠ ঠেকে গেছে।এক যোগে সবাই পন করল হয় মারব ,নয় মরব সকলকে সংগঠিত করতে যোগ্য নেতৃত্ব দরকার।কিন্তু কে দেবে নেতৃত্ব? পিশাচ রাজাকারদের নির্মম অত্যাচারের কথা বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান টুকুর কানে পৌছাল।মনে মনে তিনি হায়নার কবল থেকে বারোয়াড়িয়া মুকত করার দৃপ্ত অঙ্গীকার করলেন।
টুকু ভাইয়ের নেতৃত্বে ২০ নভেম্বর পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগের দিন রাতে ৩০ জন মুক্তিযোদ্ধা রওয়না হল বারীয়াড়িয়ার উদ্দেশ্যে এবং তেতুলতলা নগেন বিশ্বাসের বাড়ি থেকে ভর সন্ধ্যা বাটিয়াঘাটার বিনয় বাবুর নেতৃত্বে ১৩/১৫জনের একটি দল একই স্থানে যাত্রা শুরু করে।বারোয়াড়িয়া পৌছে মুক্তিযোদ্ধারা লক্ষ্য করল,সেখানকার মনি গোলাদারের বাড়িটাকেই রাজাকাররা ক্যাম হিসেবে ব্যবহার করছে, রাজাকারদের নৃশংস অত্যাচারে শহীদ হন মুক্তিকামী প্রতিবাদী কন্ঠ গুরুপদ মন্ডল এবং তাঁর সন্তানরা।তার স্ত্রী গুরুদাসী স্বামী,সন্তান শোকে এখন পাগল হয়ে পথে পথে ঘুরছে।যা হোক মুক্তিযোদ্ধারা রাজাকার ক্যাম্প ঘিরে ফেলে এবং টুকু ভাই রাজাকারদের আত্নসমর্পণ এর কথা বলেন।বদমেজাজী রাজাকাররা এ কথা শুনে আত্নসমর্পণের বদলি গুলিবর্ষণ করে।টুকু ভাই বুঝলেন সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না,তিনি পালটা গুলি ছোঁড়ার হুকুম দিলেন। যেই কথা সেই কাজ।বৃষ্টির মত গুলি বিনিময় উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হলো।টুকু ভাই এই ফাএ ৪ জনের একটা ডেমোলেসিং গ্রুপকে দোতলায় রাজাকার ক্যাম্পে ডেমোলিস করার জন্য পাঠান।গ্রুপটা দোতলা ভবনের নিচে ৪ পাউন্ডের স্লাব ফিট করে ডেটোনেটরে অগ্নিসংযোগ করে,প্রচন্ড শব্দে তা বিস্ফোরিত হয়।অন্ধকারের বুক চিরে ঝিলিল মারে বারুদের তীব্রতা। সে আলোয় রাজাকাওরা গুলি ছুড়ে।রাজাকাররা নিশ্চিত মৃত্যুকে সামনে রেখে প্রানপন যুদ্ধ করতে থাকে।পাইকগাছা হাই স্কুলে পলাতক রাজাকাররা জোতিষের হাতিয়ার যেন বার বার অগ্নিবর্ষণ করছিল।তারা জীবনের উপর ঝুঁকি নিয়ে রাজাকারদের ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হয়।সাথে সাথে শত্রুর গুলিতে আহত হয় আজিজ ও জোতিষ্য।প্রচুর রক্তক্ষরন হয় তাদের।শহীদ হলে মৌখালীর আজি এবং বাটিয়াঘাটার জোতিষ।ওদের লাশ রিকোভার করে মুক্তিযোদ্ধারা অন্যত্র নিয়ে যায়।এইযুদ্ধে কয়েকজন রাজাকার মারা যায়।জানা গেছে সোলাদানার ইয়াকুব ও মঞ্জুরও মারা গিয়েছিল,আহতও কম হয় নি। বারোয়াড়িয়ার যুদ্ধে টুকু ভাইয়ের সাথে আরও ছিলেন বিনয়,ক্ষিতিশ আজিজ,তপন,খোকন,লতিফ,দিদার কাওছার,আলাউদ্দিন,মোবারক,ওমর আলী,আব্দুর রাজ্জাক মোলঙ্গী প্রমুখ।
[৬৩৪] স ম বাবর আলী

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!