You dont have javascript enabled! Please enable it!

বার্মা ইস্টার্ন তেল দিপোতে অপারেশন (বর্তমান পদ্মা অয়েল কো লি), নারায়নগঞ্জ

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল বার্মা ইস্টার্ন তেল ডিপো থেকে হানাদার পাকবাহিনীর জন্য জ্বালানি তেল সরবরাহ করা হত।এটি পাকবাহিনীর একটি বৃহৎ ঘাঁটি ছিল। পাকসেনাদের তেল সরবরাহ বন্ধ করার জন্য সিদ্দিরগঞ্জ থানা কামান্ডার মোঃ ইসমাইলের নেতৃত্ব নুরুল ইসলাম,সুন্দর আলী, রেহানউদ্দিন রেহান, রশীদ(বড়),মোমতাজ উদ্দিন ভুঁইয়া ,জয়নাল আবেদিন প্রমুখ ২নং ঢাকেশ্বরী মিলের পাশ দিয়ে সেন্ট্রাল অফিসের কাছাকাছি থেকে ৯৪ এনরিগা দিয়ে হিট করে বার্মা ইস্টার্নের তেল ট্যাংকিগুলি লক্ষ্য করে। ট্যাংকিতে লাগার পরও কোনো কাজ না হলে পটাশিয়াম মেঙ্গানেট ও গ্লিসারিন দিয়ে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেন।এতে কাজ হয় কিত্নু বার্মা ইস্টার্নের শ্রমিকরা আগুন নিভিয়ে ফেলে।দুদিন পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানা কমান্ডারের নেতৃত্বে মো সুন্দর আলো,মোমতাজ উদ্দিন ভুঁইয়া ,মোহর আলী,রশিদ(ছোট),বদরুদ্দিন,নুরুল ইসলাম প্রমুখ আগস্ট মাসের ১৬ তারিখ ১২টায় জালকুরি গ্রাম থেকে যাত্রা করেন।জালকুড়ি গ্রাম ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের মূল ঘাঁটি। বিল পার হয়ে ওয়াপদা ক্যানেল ধরে রমিজ ভুইয়ার বাড়ির পাশ দিয়ে এসে নারায়নগঞ্জ ডেমরা সড়কে ক্রস করে মনা পাগলা ও বাদশা মেম্বারের বাড়ির পাশ দিয়ে এসে রেললাইন এবং সেখান থেকে মো ইসমাইলের বাড়িতে ওঠেন।এখান থেকে নৌকায় চড়ে বারেক ভুইয়ার বাড়িতে এসে অবস্থান নেন।এই বাড়িতে অপারেশনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করে ধনু মিস্ত্রির বাড়িতে আসেন।মো সুন্দর আলী ট্যাংকির ভেতরে ঢুকে বোম ফিট করার দায়িত্ব নেন।তেল ডিপোর তারের বেড়ার ৫০গজ দূরে তেলের ট্যাংকি পাহারারত ছিলো একদল পাকসেনা।২০ গজ দূরত্বে ২ টি বাঙ্কার থেকে পাকসেনারা মেশিন গান হয়াতে আসা যাওয়া করতে করতে থাকে।এটি ছিল মুক্তি্যোদ্ধাদের দুঃসাহসীক অপারেশন। মৃত্যু নিশ্চিত হতে জেনেও মুক্তিযোদ্ধারা সুন্দর আলী লুঙ্গির পেছনে ২টি গ্রেনেড গুজে হাতে ৫৫ পাউন্ড এক্সপ্লোসিভ নিয়ে তারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে ভেতরে ঢুকে ক্রলিং করে ট্যাংকির কাছে চলে যান।বাহিরে থেকে মো ইসমাইল এল এম জি হাতে, আর দু জন দুটি স্টেনগান নিয়ে এম গাছের উপর ওঠে তাঁকে কভার দেন।যদি পেছন থেকে পাকবাহিনী এসে পড়ে তাদের প্রতিহত করার জন্য।মো সুন্দর আলী পাকসেনাদের চোখ ফাকি দিয়ে ট্যাংকির গোড়ায় ডেলিভারি পাইপের চতুর্দিকে পেঁচিয়ে দেন এক্সপ্লোসিভ।ফিরে এসে প্রেমাকড নিয়ে ট্যাংকিতে যান।ফিড় করে ট্যাংকি থেকে ৫০ হাত লম্বা তাঁর দিয়ে মো ইসমাইলের কাছে ফিরে আসেন।তিনি এল এম জিটা সুন্দর আলীর হাতে দিয়ে তাঁর পেছনে পজিশন নিতে বলে ফিউজে আগুন ধরিয়ে সবাইকে ফিরে যাবার নির্দেশ দেন। যেভাবে গিয়েচিলেন সেভাবে সবাই ফিরতে শুরু করেন।এমন সময় শান্তি কমিতির সদস্য জিন্নত আলী মাতবর মুক্তিযোদ্ধাদের দেখে তড়িৎ গতিতে পাকসেনাদের কাছে খবর পৌছে দেয়।স্টেনগান হাতে বদরুদ্দিন যাচ্ছিলেন আগে আগে।অন্য মুক্তিযোদ্ধারা তাঁর পিছনে।মো ইসমাইলের বাড়ি পেরিয়ে বাগমারা রেললাইনের ব্রিজে ওঠার সমর ২/১ ম্মিনিট পরে ১৫/২০টি রাইফে থেকে গুলি করে পাকবাহিনীরা।গুলির শব্দ শোনে ভয় পেয়ে সবাই বাপাশে পানিতে ঝাঁপ দেন। বদরুদ্দিন পাকসেনাদের গুলির জবাব দেন।একটু পরে বিকট শব্দে ডিপোর ভেতরে টায়ংকিতে বোমা ফাটলে পাকসেনারা ভয় পেয়ে গুলি করে।এই সুযোগ মো ইসমাইল ও সুন্দর আলী সাতরিয়ে নিরাপদে চলে যান।
[১১০] রীতা ভৌমিক

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!