You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাথুলির যুদ্ধ, টাঙ্গাইল

বাসাইল থানা মুক্ত সংবাদে কাদের সিদ্দিকী একদল মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বাসাইল রওয়ানা হ্ন।বাথুলির বটগাছ কাছাকাছি এলে বটগাছের এলাকার কিছু সশস্ত্র লোককে একত্রে দেখা যায়। এখানে ছিলো পাক সেনারা। ওদিকে থেনে আসা মুক্তিযুদ্ধারা বিভিন্ন রকম পোশাক পরিহিত ছিলেন।পাকসেনারা ওঁদেরকে রাজাকার ভেবে উর্দু জবানীতে ঢাকাডাকি শুরু করেন।কিন্তি কিছুক্কণের মধ্যেই বিভ্রান্তি কেটে যায়। শুরু হয় গুলি ছোড়াছুড়ি।মুক্তিবাহিনী কোনকোন সময় শত্রু সেনাদের একদন নিকট এসে আবার দূরে অবস্থান নিয়ে যুদ্ধ করতে থাকে।কাদের সিদ্দিকির মর্টারের গুলিতে শত্রুরা দৌড়িয়ে পালাতে থাকে তারপরও তাদের ৮টি লাশ,কিছু অস্ত্র ও গোলাবারুদ খোয়াতে হয়।
৯ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনীর একটি দল মধুপুর থানা দখলে আনে। একই তারিখ দিবাগত রাত্রি চারটায় ঘাটাইল থানার কালিদাশ পাড়া সেতু এবং রাত্রি সাড়ে চারটায় নাইয়া পাড়া সেটু ডিনামাইট দ্বারা বিধ্বস্ত করে।অপারেশনে মুক্তিযোদ্ধাদের ২টি দল অংশগ্রহন করে।এ দিকে থানার কাছাকাছি পুলে ডিনামাইট ফাটার শব্দে থানায় অবস্থানরত শরু সেনারা বেকায়দায় পড়ে যায়।তারা পুলের দিকে এগিয়ে যায়।সুযোগ বুঝে ভোর পাঁচটায় কাদের সিদ্দিকী তাঁর দলবল নিয়ে ঘাটাইল থানা আক্রমণ করে।বান্ডার সাইড,এসএমজি এলএমজিসহ বিভিন্ন প্রকারের অস্ত্র ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধারা।কিন্তু কংক্রিটের ত্রৈরী বাঙ্কার গুলি অতি সহজেই ধ্বংস হয় না। মুক্তিযোদ্ধারা অবস্থান বদল করে আরও দূরবর্তী স্থান থেকে মর্টার ব্যবহার করে ঘাটাইল থানার পতন ঘটায়.১৪/১৫জন শত্রুসেনা নিহত ও একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।
জামালপুর যুদ্ধে পরাজিত পাক সেনারা ঢাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ১০ ডিসেম্বর মধুপুর পর্যন্ত পিছিয়ে আসে।পাকিস্থানী সেনাদের নেতৃত্বে ছিলো ব্রিগেডিয়ার কাদের খাঁ ও ব্রিগেডিয়ার আখতার নেয়াজ।বেলা ১২টার সময় বানিয়াপাড়া নাগাদ ছয় হাজার পাকসেনার দল এসে পৌছালে অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমন করে।বেশিক্ষণ বাধা দিয়ে রাখা যায় না।বেলা ৩টায় ভারতীয় তিনটি মিগ-২১ বিমান গোপালপুর থানা ও ঘাটাইল থানার উপর বরতিহীন ট্রাপিং করে।এগুলো ছিলো একতরফা বিমান আক্রমন।পাকিস্থানীদের বাধা ছিলো না।কেননা পাকিস্থানীদের যুদ্ধ বিমান মিগ-১৯ ডেসেম্বরের প্রথম সাপ্তাহেই অকেজো হয়ে যায়।এই রুপ উপরযপুরি বিমান হামলায় গোপালপুর ও ঘাটাইল থানায় অবস্থানরত পাকসেনা ও রাজাকাররা বাচার জন্য পালিয়ে যায়।
এদিকে পলায়নরত পাকসেনাদের গাড়ির বহর টাঙ্গাইল মধুপুর মহাসড়কে শোলাকুড়া পুল পার হয়ে টাঙ্গাইলের দিকে ছুটছিল। ভারতীয় যুদ্ধ বিমান ঐ আকাশে চক্ক্র দিতে থাকে বার বার। মুক্তিযোদ্ধাদের কাছাকাছি এসে বিমানগুলো থেকে বাংলাদেশের জাতিয় পতাকা প্রদর্শন করা হয়। পুংলি ব্রীজ এলাকায় ভারতীয় বাহিনীর ছত্রী সেনা নামিয়ে দেয়া হলো।সন্ধ্যার পর ছত্রীসেনা শহিদ হন।
ময়মনসিংহ থেকে হত্নদন্ত হয়ে পালিয়ে যাওয়ার পথে টাঙ্গাইল শররে যেতে হয়।পাকিস্থানীরা পুংলি পর্যন্ত পৌছে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়। পুংলি থেকে ইছাপুর নাগাদ পাকা রাস্থায় পাকসেনারা অবস্থান নেয় ইতোমধ্যে পুংলি ব্রীজ এলাকায় প্রায় এক ব্যাটালিয়ন সৈন্য বিমান থেকে অবতরন করে। যুদ্ধ শুরু হয়ে সারারাত চলে।সাড়ে তিন শত শত্রু সনি নিহত ও আহত হয়,মিত্র বাহিনীর ছয় জন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়.১১ ডিসেম্বর ছয় শত হানাদার সেনা ধৃত হয়।শোলাকুড়া সেতু এলাকায় উভয় পক্ষে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। মিত্রবাহিনীর অনেকগুলো গাড়ি ও কয়েকশত পাকসেনা নিহত হয়।
বিভিন্ন অবস্থানে তাড়া খেয়ে পাকসেনারা টাঙ্গাইল জেলা সদরের এক বর্গমাইল এলাকায় অবস্থান নেয়।মুক্তিযোদ্ধারা ওদেরকে গোছা গাছ হবার সময় না দিয়ে চারিদিক থেকে বৃষ্টির মত গুলি করতে থাকে।পাকসেনারা এখানেও টিকতে না পেরে তাদের মূল ঘাঁটি ঢাকার দিকে ত্বরিতগতিতে ছুটতে থাকে।কিন্তু বাধাপ্রাপ্ত হয় বিভিন্ন পয়েন্টে।ভাতুকুড়ার পুলের নিক বায়েজিদ কোম্পানী,মটরা পুলে শমসুর কোম্পানী,জামুরকী সেতুর নিকট মিরজাপুরের আজদা কামলের কোম্পানী দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাক সেনারা হতাহত হয়।মাইনের আঘাতে গাড়ি বিধ্বস্ত হয়। এই সমস্থ স্থানে মুক্তিবাহিনী,সেচ্চাসেবকল দল স্বাধীনতাকামী জনতার হাতে বন্দী হয় পাকসেনা ও রাজাকারর।১১ ডিসেম্বর সকাল ১১ টায় বহু প্রতিক্ষিতি টাঙ্গাইল শহর শত্রুমুক্ত হয়। গগনবিদারিত জয়বাংলা,জয়বঙ্গবন্ধু স্লোগানে আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে মুক্তি পাগল মুক্তি্যোদ্ধা জনতা।
[৬২২] কে এম আবদুস সালাম

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!