বাদিয়াখালী ব্রিজ ধ্বংস, গাইবান্ধা
গাইবান্ধা-ফুলছড়ি ঘাট সড়কটি যোগাযোগের জন্য ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।উত্তরবঙ্গে যুদ্ধারত পাকবাহিনীর অস্ত্র গোলাবারুদশ যুদ্ধের যাবতীয় সরঞ্জাম নৌপথে ফুলছড়ি ঘাটে এসে পৌছাত এবং পরবর্তীতে এই রাস্থা দিয়ে গাইবান্ধা হয়ে অন্যান্য বেসে সাপ্লাই হতো।গাইবান্ধা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে এ রাস্তার ওপর অবস্থিত ব্রিজটি কৌশলগত দিক থেকে ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ,কারন এই ব্রিজটি ধ্বংস করে দিলেই সড়ক পথে গাইবান্ধা থেকে ফুলছড়ি এবং বোনারপাড়ার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে যেত।তাই পাকবাহিনী এই ব্রিজটিকে সার্বক্ষণিকভাবে পাহারায় রাখত। গাইবান্ধা এলাকার পাকবাহিনীর যোগাযোগ ব্যবস্থাকে অচরল করে দেয়ার উদ্দেশ্যে মুক্তি বাহিনীর সদস্যরা এই ব্রিজটিকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করে।মাহবুব এলাহী রঞ্জুর কোম্পানি প্রথমবার এই ব্রিজ উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে রুস্তম আলী খন্দকারের কোম্পানী দ্বীতীয়বার ব্রিজটিতে আক্রমণ করে এবং মোটামুটি সফল হহয়।বাদিয়াখালী ব্রিজটি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে কমান্ডার রুস্তম আলী মজিবুল হক ছানা ও মহসী আলীকে ব্রিজটি দিনের বেলায় রেকি করার দায়িত্ব দেন। একাধিকবার রেকি করার পর তাঁরা নিশ্চিত হন যে ব্রিজটির দুই ধারে দুটি করে মোট চারটি বাঙ্কার আছে, যেখানে দাঁড়িয়ে রাজাকাররা ভারী অস্ত্রসহ পাহারায় থাকে।বাংকারগুলোর ওপরে খড়ের চাল আছে।রেকি গ্রুপের রিপোরটের কপর ভিত্তি করে ১৭ অক্টবর ১৭৭১ রাত্রি আনুমানিক ১:৩০ মিনিটের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা কাতলামারি থেকে পায়ে হেঁটে ব্রিজের কাছাকাছি আসে এবং অবস্থান গ্রহণ করে। অধিনায়ক স্পেশাল টাস্ক গ্রুপের অধিনায়ক মহসীনকে তাঁর কাজ বুঝিয়ে দিয়ে আনুমানিক ২টার দিকে ব্রিজের নিকটবর্তী বাংকারগুলোর দিকে গুলিবর্ষণ শুরু করে।একই সাথে গর্জে ওটে অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার এলএমজি,এসএলআর এবং স্টেনগান।শত্রুপক্ষও পালটা গুলিবর্ষণ শুরু করে।এভাবে প্রায় আধাঘন্টা গুলি বিনিময়ের পরে অকুতোভয়য় মুক্তিযোদ্ধা বগুড়ার সারিয়াকান্দির ফারুক এবং সুন্দরগঞ্জের রাজা ক্রলিং করে ব্রিজের কাছাকাছি যায় এবং শত্রুর বাংকারের ওপর গ্রেনেড নিক্কেপ করে।ফলে বাংকারের উপর ভাগে আগুন ধরে যায় এবং পাকসেনারা প্রাণভয়ে নদ্রী পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।ফলে ব্রিজটি মুক্তিবাহিনীর দখলে চলে আসে।সামছুল আলম,সাজু,শহিদুল,ছানা,জুবেল,প্রমুখ ব্রিজের ওপর এক্সপ্লোসিভ সেট করে ব্রিজটিকে আংশিকভাবে ধ্বংস করে। ঐ আক্রমের অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন ওয়াসিকার মোঃ ইকবাল মাজু,ছটো নুরু,মাহমুদুল হক শাহজাদা,কামু,বন্দে আলী,হামিদ,সহিদুল,ঠান্ডু,ফজলে,নাজিত মহসিন,বজলু প্রমুখ।অপারেশন শেষে রোস্তম কোম্পানীর দল গলনার চর এবং মাহবুব এলাহী রঞ্জু কোম্পানীর দল কালাসোনার চরে নিজে নিজে হাইড আউটে ফিরে যায়।
[৫৯৬] রিয়াজ আহমদ
সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত