You dont have javascript enabled! Please enable it!

বাঘাবাড়ি যুদ্ধ, সিরাজগঞ্জ

সিরাজগঞ্জ জেলায় পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যত প্রতিরোধের ঘটনা ঘটেছে তাঁর মধ্যে বাঘাবাড়িতেই প্রথম যুদ্ধ।ঢাকা থেকে নগরবাড়ি হয়ে সিরাজগঞ্জে প্রবেশের পথ প্রথমেই আসে বাঘাবাড়ি ফেরি।তাই মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জে প্রবেশ পথ বাঘাবাড়িকে রক্ষা করার পরিকল্পনা করে।এই সংকল্প নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা এপ্রিল মাসের দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করতে থাকেন এবং প্রতিরক্ষা অবস্থান নেন। যুদ্ধের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত যুদ্ধের মধ্যে এটি একটি।যদিও মুক্তিযোদ্ধারা হানাদার বাহিনীকে শেষ পর্যন্ত বাঘাবাড়িতে আতকাতে পারেনি তবুও হানাদার বাহিনীকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।মুক্তিযোদ্ধারা এই যুদ্ধের মধ্যমে তাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা বুঝতে পারেন। সকল স্থরের মানুষ এই যুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসে এবং মুক্তিযোদ্ধে অংশগ্রহন করে। ততকালীন মহকুমা প্রশাসক শহিদ এ কে এম শামসু উদ্দিনের নির্দেশমত ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ১৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা বাঘাবাড়ি ঘাটে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে। এদের সাথে ছিল মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মির্জা(পরবর্তীতে এমপি,মুক্তিযোদ্ধা গোলাম কিবরিয়া এবং মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব আলী।পরের দিন ইপিয়ার,আনসার,পুলিশ এবং বেগল রেজিমেন্ট মিলে প্রায় ১০০ জন যোদ্ধা বাঘাবাড়িতে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যোগ দেয়।বাঘাবকাড়িতে গোহালা নদীর উত্তর পাড়ে প্রায় দুই মেইল জুড়ে ২০০গজ পরপর পাকা পরিখা খনন করে সেখানে প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে।তার পরের দিন এসডিও সাহেন আরোও ৫০জন ইপিআর,বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং অবসর প্রাপ্ত সৈনিকদের নিয়ে আসেন। নগরবাড়ি ঘাড় রক্ষা করার জন্য প্রায়১০০ জন বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ইপিয়ার বাহিনীর লোক নিয়ে ছাত্রনেতা মোজাফফার হোসেন(পরবর্তীতে মেজর চাকরিচ্যুত) এবং এসডিও শাওমসুদ্দীন সাহেব সামনের দিকে অগরসর হয়।কাশিনাথপুরের জঙ্গলের ভেতর ঘাঁটি স্থাপন করেন এবং খবর পান যে ১০ মাইলের ভেতর পাকি ঘাতি আছে। এসডিওঁ সাহেবের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ১০০ জন তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে কাশীনাথপুরে জঙ্গলের ভেতর ঘাতি আক্রমন করার সিদ্ধান্ত নেয়।এওটি দল আক্রমণ চালাবে এক দল গাড়ি ধ্বংস করবে এবং এক দল ব্রিজ ধ্বংস করবে একই সময়ে।মুক্তিযোদ্ধারা এই আক্রমণ পরিচালনা করে রাত ২টার সময়। একই সময়ে তিনটি কাজ করে, ৫টি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত এবং ১৯জন পাকসেনা খতম। পরের দিন ভোরবেলা মুক্তিযোদ্ধারা কাশিনাথপুরে ফিরে আসে।তাদের একজন ইপিআর জোয়ান গুলিবিদ্ধ হয় এবং তাঁকে সিরাজগঞ্জ হাসপাতালে পাঠানো হয়।এপ্রিল মাসের ২৫ তারিখের দিকে এসডিও সাহেবের বাঘবাড়ি ঘাট থেকে সিরাজগঞ্জ ফিরে যান।তিনি পরের দিন আবার বাঘবাড়ি ঘাটে ফিরে আসেন।
২৬ এপ্রিল পাকবাহিনী দুপুর ১টার দিকে হটাত করে কাশিনাথপুর ক্যাম্প আক্রমণ করে।একজন হাবিলদারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো ঐ ক্যাম্পের।জোয়ানরা বিশ্রাম করছিল,ঠিক সে সময় শত্রুরা মর্টার আক্রমণ চালায় চারিদিক থেকে। ৩০-৪০ জন মুক্তিযোদ্ধহা এখানে শহীদ হন। বাকিরা অস্ত্র ফেলে পালিয়ে যায়।এখানেমুক্তিযোদ্ধাদের প্রচুর অস্ত্র হাতছাড়া হয়ে যায়, পরের দিন চারিদিকে খোঁজ করে ২জন আহত বেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিক এবং ৮-১০জন অন্যান্য জোয়ান নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বাঘাবাড়ি চলে আসে, এখানে এসে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের প্রতিরক্ষা অবস্থান আরো জোরদান করেন, এভাবে প্রায় আরোও ২৩-২৪ দিন প্রতিরক্ষা অবস্থানে কাটাতে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের।মে মাসের ২০ তারিখের দিকে বাঘাবাড়িতে গোহালা নদীর অপর প্রাড়ে পাওবাহিনী বাঙ্কার করা শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের দেশি কামান দিয়ে পাকসেনাদের উপর আক্রমণ চালায়।এভাবে ক্রমাগত চারদিন ধরে পাকসেনাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি বিনিময় হয়।এই অবস্থায় চারদিন পর পাক বিমানবাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের উপর গোলিবরষন করে/২৪ তারিখের দিকে মুক্তিযোদ্দধারা বাঘবাড়ি থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়।

সূত্র: মুক্তিযুদ্ধ কোষ সপ্তম খণ্ড- মুনতাসির মামুন সম্পাদিত

error: Alert: Due to Copyright Issues the Content is protected !!